চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ায়’ পাকিস্তান অধিনায়ক-কোচকে তলব

ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করেছিলেন পাকিস্তানের টেস্ট অধিনায়ক আজহার আলী ও কোচ মিসবাহ-উল-হক। বোর্ডের চেইন অব কমান্ড ভেঙে কিভাবে অধিনায়ক ও কোচ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন তা নিয়ে ভীষণ বিব্রত পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) প্রধান এহসান মানি। আগামী সপ্তাহে তাই কোচ ও অধিনায়ককে জরুরি তলব করেছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীত্বের পাশাপাশি পাকিস্তানকে ১৯৯২ বিশ্বকাপ জেতানো ইমরান খান একইসঙ্গে পিসিবির প্রধান পৃষ্ঠপোষকও। গত মৌসুমে নতুন এক কাঠামোতে ঘরোয়া ক্রিকেট আয়োজনের নির্দেশ দেন তিনি, যেখানে ছয়টি প্রাদেশিক দলের বাইরে খেলার সুযোগ ছিল না বিভাগীয় দলগুলোর। তাতে এ নিয়ে একটা চাপা ক্ষোভ তৈরি হয় ক্রিকেটারদের মাঝে।

ক্ষোভ প্রশমনে বৃহস্পতিবার বিশেষ এক সভার ডাক দিয়েছিলেন ইমরান, যেখানে পিসিবি সভাপতি এহসান মানি ও প্রধান নির্বাহী ওয়াসিম খানের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আজহার আলী ও মিসবাহ-উল-হক। সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে একই সভায় ছিলেন মোহাম্মদ হাফিজও। সভায় ক্রিকেটারদের নতুন কাঠামোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বেশ নাকি চাপ দিয়ে গেছেন ইমরান।

তবে এই সভা নিয়ে বেশ অস্বস্তিতেই পড়েছেন পিসিবি সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী। বোর্ডের চেইন অব কমান্ড ভেঙে নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে কিভাবে ক্রিকেটাররা প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছে গেলেন আর প্রধানমন্ত্রীর চাওয়া সত্ত্বেও এ নিয়ে জোর করেছেন সেটা কিছুতেই মানতে পারছেন না পিসিবির সর্বোচ্চ দুই কর্মকর্তা।

‘খেলোয়াড়রা জানে যে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাতেই কাঠামো পরিবর্তন হয়েছে। পিসিবির দায়িত্ব এটা কার্যকর করা কিন্তু ক্রিকেটাররা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী আর তাদের ঊর্ধ্বতনরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানাবে!’, ক্রিকইনফোর কাছে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সেই সভায় থাকা এক কর্মকর্তা।

কেবল মিসবাহ, আজহার কিংবা হাফিজরাই নন; পাকিস্তানের প্রায় সব প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটাররাই ইমরানের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। ইমরানের নতুন কাঠামোতে তারা যে শুধু আর্থিক দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তাই নয় ভেঙে পড়বে পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামোও। ঐতিহ্যগতভাবে বিভাগীয় দলগুলো শুধু ক্রিকেটারদের আর্থিক নিরাপত্তাই দেয় না, এর বাইরে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটারদের অন্যান্য ক্রিকেটীয় সুযোগ সুবিধাগুলো দেখভালের দায়িত্ব তাদের। অবশ্য শেষ কয়েক মৌসুমে বিভাগীয় দলগুলোর অনেকেই নিজেদের এই ঐতিহ্য থেকে সরে এসেছে।

ইমরানের নতুন কাঠামোতে ছয়টি প্রাদেশিক দলের বাইরে অন্য দল না থাকায় কমে এসেছে খেলোয়ারদের সংখ্যাও। ৩০০জন থেকে এখন কেবল ১৯২ জন ক্রিকেটার প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পাবেন এতে। একইসঙ্গে কমবে অর্থের পরিমাণও। তবে নতুন মৌসুমে খেলোয়াড়দের বেতন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে পিসিবি।

অবশ্য এই কাঠামোতে জ্বালা আছে পিসিবির নিজেরও। এখন থেকে এই চুক্তিভুক্ত ১৯২ ক্রিকেটারকে প্রতি মাসে বেতন দিতে হবে বোর্ডটির। আগে ক্রিকেটারদের বেতনের জায়গায় চুক্তি অনুসারে একটা নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ ক্রিকেটারদের হাতে তুলে দিতো বিভাগীয় দলগুলো।

তবে কেউ কেউ আবার নতুন কাঠামোতে মানিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি যেমন বলছেন, ‘আমার মনে হয় না বিভাগীয় ক্রিকেট বিলুপ্ত হওয়ায় বেকারত্ব বাড়বে। বেশিরভাগ দলের বাইরে থাকা ক্রিকেটারের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। প্রতিটি নতুন কাঠামোতে মানিয়ে নিতে দুই-তিন বছর সময় লাগে। তখন হয়তো আমরা এর সুফল দেখতে পাবো।’

‘যদি প্রধানমন্ত্রী মনে করে থাকেন যে নতুন এই কাঠামোতে বিশ্বমানের ক্রিকেটার তৈরি হবে তাহলে আমাদের অন্তত ১২ কিংবা ১৮ মাস অপেক্ষা করা উচিৎ। আমাদের ফলাফলের জন্য তাড়াহুড়ো করা উচিৎ নয়। পাকিস্তানের ক্রিকেট ৭০ বছর পুরনো। নতুন এই কাঠামোর সময় এবং আমাদের সমর্থন প্রয়োজন।’

এখন প্রশ্ন হচ্ছে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় কী শাস্তি পাবেন মিসবাহ ও আজহার? হাফিজ কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরে থাকায় তাকে কোনো সাজা দিতে পারবে না পিসিবি। তবে ধারণা করা হচ্ছে বড় কোনো শাস্তি না দিয়ে হয়তো ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা হবে দু’জনকে।