প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিব কমিটির বৈঠকে ঘুষ-দুর্নীতি নিয়ে সরকারি প্রশাসনকে আরো একদফা সতর্ক করলেও গবেষকরা বলছেন, দুর্নীতিতে বেসরকারি খাত যেমন পিছিয়ে নেই তেমনি তাদেরও দায় আছে।
গবেষকরা বলছেন, সরকারি পর্যায়ে দুর্নীতির বড় বড় খবর মাঝে-মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তবে অনেক ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতও জড়িত থাকে। বেসরকারি খাতের অনেকে বাধ্য হয়ে দুর্নীতির শিকার হলেও অনেকে আবার নিজ থেকেই দুর্নীতিতে জড়িত। সরকারি পর্যায়েই দুর্নীতির মাত্রা বেশি, তবে এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতও একদম দায় এড়াতে পারে না।
সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, দুর্নীতি তো আর একা একা হয় না। সেখানে কেউ দুর্নীতির সুযোগ দেয় আর কেউ নেয়। যিনি দুর্নীতি করছেন তিনি কখনো বা বাধ্য হয়ে করেন, আবার কখনো স্বপ্রনোদিত হয়ে। এখানে প্রণোদনা হিসেবে কাজ করে বেতন–ভাতা ইত্যাদি।
‘সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান যুক্তিযুক্ত যে সরকারি কর্মচারীদের বেতন তো বাড়ানো হলো, এখন যেন আর দুর্নীতি না হয়,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেসঙ্গে যদি পাবলিক সার্ভিস অ্যাক্ট বাস্তবায়ন হতো তাহলে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা আরো সহজ হতো। সেটা প্রায় ৫-৬ বছর ধরে ড্রাফট হয়ে পড়ে আছে। বাস্তবায়ন হলে সবার প্রমোশন আরো বেশি ডিসিপ্লিনড হতো।
তাছাড়া এসব দুর্নীতির দেখার ব্যবস্থা যাদের আছে তারাও ভালোভাবে নজর রাখলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করেন মোস্তাফিজুর রহমান।
দেশের উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধক হিসেবে গুরুতর এই সমস্যা সমাধানে তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন শক্তিশালী সামাজিক আন্দোলনের উপর। ‘যদি সবাই মনে করে যে আমি কাউকে ঘুষ দেবো না, তাহলেই কেবল এসব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে দেশের এনবিআর এবং ও এন্টি করাপশন সংস্থাগুলোকে আরো শক্তিশালী করতে হবে।‘
তবে এই সমস্যা সমাধান করতে চাইলে বেসরকারি খাতও যেন জীবন ধারণের উপযোগী হয় সেই চেষ্টা করতে হবে বলে মনে করেন ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, দেশে মজুরি কমিশন আছে। সেটাতেও পরিবর্তন আনতে হবে। সবার জীবন যাত্রার মান যেন কমে না যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে।
একইরকম কথা বলছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: দুর্নীতি বিশেষতঃ হয় আঁতাতের ফলে। সরকারি কর্মজীবী, বেসরকারি কর্মজীবী, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ সবাই এখানে সম্পর্কযুক্ত থাকে। ফলে সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেই কেবল এই দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
তবে তিনি এটাও বলেন: মানুষ যে শুধুমাত্র বেতন ভাতা কম পেলেই দুর্নীতিগ্রস্ত হয় তাই না। বরং অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে- যাদের আছে তারা আরও চায়। তাতেই এই সমস্যা তৈরি হয়। আর তাছাড়া দুর্নীতি করে কখনো কারো শাস্তি পেতে হয়নি, ফলে ছোট ছোট দুর্নীতি করতে করতে একসময় অনেকে বড় দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে।
সবাইকে দুর্নীতিমুক্ত থাকতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আহ্বান জানিয়েছেন সেটাকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি আরো একটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেন: দুর্নীতিগ্রস্তদের শাস্তি না দিলে কখনো পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
‘দলবাজির কারণে অনেকসময় দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আনা আরো বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। যারা দলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তারা বড় বড় অন্যায় করেও ছাড় পেয়ে যায়। দলের কেউ দুর্নীতিগ্রস্ত হলে তার উপর আইনের শাসন কায়েম হয় না।’
দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে বেশ কিছু খাত প্রবলভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত। আর সেটা কারো অজানাও নয়।
‘কিন্তু এসব দুর্নীতিবাজ রাঘব বোয়ালদের কারো বিপক্ষেই অবস্থান নেওয়া হয়নি।’
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দুর্নীতি দমন করতে হলে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতিবাজরা সবকিছু ম্যানেজ করতে পারে। তারা যতদিন সেসব ম্যানেজ করতে পারবে ততদিন আর কোনোভাবেই এর লাগাম টানা সম্ভব হবে না।