কিছু বেপরোয়া চালকের কারণে দেশের সড়কপথগুলো বহুদিন আগেই মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। আর এখন তাতে একটাই পার্থক্য, তা হলো গভীরতার। যতই দিন যাচ্ছে, মানুষের প্রাণের বিনিময়ে সেই মৃত্যুকূপের গভীরতা বাড়ছে। প্রতিদিন সেইসব সড়কে ঝরছে অগণিত প্রাণ। অথচ তাদের এভাবে মৃত্যু হওয়ার কথা ছিল না। অকালে ঝরে যাওয়া সেই মানুষগুলোকে আসলে দুর্ঘটনার নামে হত্যা করা হচ্ছে। যার কোনো প্রতিকার নেই। নির্বিকার আমরা শুধু তা দেখছি।
এই তো চারদিন আগে ময়মনসিংহের ফুলপুরে মাইক্রোবাস পানিতে পড়ে একই পরিবারের ৮ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আজ আরেক ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে গেল ভালুকায়। ইউটার্ন নিতে যাওয়া একটি প্রাইভেটকারকে দুমড়ে-মুচড়ে দেয় দ্রুতগতির একটি বাস। এতে ঘটনাস্থলেই ৬ জনের মৃত্যু হয়।
এখানেই শেষ নয়, এই ঘটনার কয়েকঘণ্টা আগে আরও দুটি দুর্ঘটনায় নান্দাইলে ৩ জনের মৃত্যু হয়। তার মানে শুধু ময়মনসিংহেই আজ মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৯ জনের। এটা শুধু নিছক পরিসংখ্যান নয়, বড় বড় বিষাদের গল্প। পুরো পরিবার নিমিষেই শেষ হয়ে যাওয়ার বিবরণ।
যেমন করে গতকাল শুক্রবার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের রাবনা বাইপাস এলাকায় শেষ হয়ে গেল একটি পরিবার। অসুস্থ মাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে গিয়ে বাস-সিএনজি চালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে দুই শিক্ষকসহ সেই পরিবারের ৪ জন নিহত হয়। টাঙ্গাইলে যখন এই ঘটনার শোকের মাতম। তার কয়েকঘণ্টা পরই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে রামুর জোয়ারিয়ানালা এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টে যায়। যাতে নিহত হন অন্তত দুই যাত্রী।
আমরা জেনেছি, ময়মনসিংহের ফুলপুরে সেই ঘটনায় নিহতরা তাদের স্বজনের মৃত্যুর খবর শুনে দেখতে এসেছিলেন। ফেরার পথে করুণ পরিণতি। একসঙ্গে ৮ জনের মৃত্যু। প্রিয়জন হারানোর বুকফাটা আর্তনাদ, আহাজারির মধ্যেই আজকের এই নির্মম ঘটনায় পুরানো সেই প্রশ্ন আমাদের সামনে আবার নতুন করে এসেছে দাঁড়িয়েছে। কবে শেষ হবে এই মৃত্যুর মিছিল? কবে বন্ধ হবে এই হত্যাকাণ্ড?
না, কেউ নেই। এই প্রশ্নের জবাব দেয়ার। আর নেই বলেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। বলতে গেলে কারো কোনো দায় নেই। যেন দায় ছিল না; এমন একটা পরিস্থিতির জন্ম দেয়া হয়েছে।
তাহলে এভাবেই কি দিনের পর দিন, বছরের পর বছর কিংবা যুগের পর চলে যাবে? মৃত্যুকূপ সড়কগুলো আরও প্রাণ নিয়ে নিয়ে নিজের গভীরতা বাড়াবে? আর সেইসব বেপরোয়া চালকের কোনোদিন শিক্ষা হবে না? হত্যাযজ্ঞ চালিয়েই যাবে তারা?
না, আর না। অনেক হয়েছে। এবার ঘুমিয়ে থাকা রাষ্ট্রযন্ত্রকে জাগাতে হবে। আমরা মনে করি, আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া এত এত মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব না। আর সেই কাজটা রাষ্ট্রকেই করতে হবে। দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।