ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর সরকার দাবি করেছিল, এর কোনো প্রভাব দেশের বাজারে পড়বে না। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হু হু করে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। রাজধানীর বাজারগুলোতে গত ২৪ ঘণ্টায় কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কমপক্ষে ২৫ টাকা।
খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, পাইকারি বাজারেও ২৪ ঘণ্টায় ব্যবধানে বেড়ে ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কাঁচাবাজার, কৃষি মার্কেটের পেঁয়াজের আড়ত ও টাউন হলের কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
পেঁয়াজ-রসুন ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বলছেন, চলতি মাসে ভারত পেঁয়াজের রপ্তানির মূল্য তিনগুণ বাড়িয়েছিল, কিন্তু গতকাল রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় পেঁয়াজের দাম আরো বেড়ে যায়।
তবে ক্রেতারা বলছেন, চাহিদা ও আমদানি সংকটকে পুঁজি করে ‘মধ্যস্বত্বভোগীরা’ নিয়ন্ত্রণ করছে পেঁয়াজের বাজার।
অবশ্য পেঁয়াজের এই টানাপোড়নের মধ্যেও রাজধানীর ৩৫টি স্পটে ৪৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।
মোহাম্মদপুরের টাউন হলে পেঁয়াজ কেনার সময় কথা হয় একজন ক্রেতা ওসমান গনির সঙ্গে। তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বললেন, ‘‘ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করবে কি করবে না সেটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, আমাদের দেশেও তো পেঁয়াজ কম উৎপন্ন হয় না। আর রপ্তানি বন্ধ শুনেই আমাদের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম একদিনে ২৫-৩০ টাকা বাড়িয়ে দিলো। এটা দেখার কি কেউ নেই? শুধু রমজান মাসেই আমরা ম্যাজিস্ট্রেটসহ ভ্রাম্যমান আদালত বাজারে পাঠায়। এখন কি এ বিষয়গুলো দেখার কেউ নেই?’’
টাউন হলের পেঁয়াজ বিক্রেতা হোসেন আলী জানালেন পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের বাজারে দাম বেড়ে গেলে আমাদের আর কিছুই করার থাকে না।
কৃষি মার্কেটের পেঁয়াজের পাইকারি বিক্রেতা আজমত হোসেন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি করছি ৮২ থেকে ৮৪ টাকা, বার্মা পেঁয়াজ ৭৭ থেকে ৮০ টাকা। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৮৫ থেকে ৯০ টাকা।
মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসার সৈয়দ আনোয়ারুল কবীর চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, চাহিদা ও আমদানি সংকটকে পুঁজি করে ‘মধ্যস্বত্বভোগীরা’ নিয়ন্ত্রণ করছে পেঁয়াজের বাজার। এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় কিভাবে একদিনে পেঁয়াজের দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে যায় তা বুঝতে পারি না।
মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. সোহাগ মৃধা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমরা আজকে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। সকালে কেউ কেউ ১২০ টাকা কেজিতেও বিক্রি করছে। পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ আনার পর অনেক পেঁয়াজ পচা বের হয়। আবার এলাকার অনেক কনফেকশনারি দোকানে আগের পেঁয়াজ কেনা থাকে। তারা তখন অল্প দামে বিক্রি করতে পারে। তাই আমাদের একটু লাভ করতে হয়।
দেশে পেঁয়াজের মজুদ পর্যাপ্ত
সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দফতরে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ আছে। পাশাপাশি মিয়ানমার, তুরস্ক ও মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে টিসিবির ট্রাকসেল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, এসব মজুদ পেঁয়াজ যাতে স্বাভাবিকভাবে বাজারে সরবরাহ করা হয় এবং বাজারের কোনো পক্ষ যাতে কারসাজি করতে না পারে সেজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১০টি তদারকি টিম গঠন করেছে। এই টিমগুলো রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। ফলে আশা করা যাচ্ছে, পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক থাকবে।
কেউ অসৎ উদ্দেশে পেঁয়াজের সংকট সৃষ্টি করলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান বাণিজ্য সচিব।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিবছর চাহিদার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পেঁয়াজ দেশে উৎপাদন হয়। বাকিটা ভারত থেকে আমদানি করা হয়। সম্প্রতি আমদানিকারকেরা মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, একই বছর আমদানি হয়েছে প্রায় ১০ লাখ ৯২ হাজার টন।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পেঁয়াজ-রসুন ব্যবসায়ী সমিতির নেতা মো. শহিদুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারত পেঁয়াজের রফতানি মূল্য তিনগুণ বাড়িয়ে দেয়। পরে গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৩৫-৪০ টাকা কেজি পেঁয়াজ দাম বেড়ে ৬০-৬৫ টাকায় ওঠে। কিন্ত গতকাল বিকেলে যখন বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর আসল ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে, তারপর থেকেই দাম বাড়তে থাকে।’
কনজিউমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) জানায়, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ না থাকলে দাম ক্রমান্বয়ে আরো বাড়বে, আমদানিকারকদের আরো বেশি করে বিকল্প বাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে উৎসাহিত করতে হবে।
রাজধানীর যেসব স্থানে বিক্রি হচ্ছে টিসিবির পেঁয়াজ
বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখতে ট্রাকে করে ৪৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।
এক বিজ্ঞপ্তিতে টিসিবি জানায়, সোমবার থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ৬ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হবে পেঁয়াজ। এছাড়া চট্টগ্রামসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতেও পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পণ্য বিক্রি চলবে। তবে শুক্রবার বন্ধ থাকবে।
টিসিবি জানায়, একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ দুই কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারবেন। একজন ডিলার কেজি ৪৫ টাকা দরে প্রতিদিন এক হাজার কেজি (এক টন) পেঁয়াজ বিক্রি করবে।
১. সচিবালয়ের গেইট, ২. প্রেস ক্লাব, ৩. কাপ্তান বাজার, ৪. ভিক্টোরিয়া পার্ক, ৫. সায়েন্সল্যাব মোড়, ৬. নিউ মার্কেট/নীলক্ষেত মোড়, ৭. শ্যামলী/কল্যাণপুর, ৮. ঝিগাতলা মোড়, ৯. খামারবাড়ি, ফার্মগেট; ১০. কলমীলতা মোড়, ১১. রজনীগন্ধা সুপার মার্কেট, কচুক্ষেত; ১২. আগারগাঁও তালতলা ও নির্বাচন কমিশন অফিস, ১৩. রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স, উত্তরা; ১৪. মিরপুর-১ নং মাজার রোড, ১৫. শান্তিনগর বাজার, ১৬. মালিবাগ বাজার, ১৭. বাসাবো বাজার, ১৮. আইডিয়াল স্কুল, বনশ্রী; ১৯. বাংলাদেশ ব্যাংক চত্বর, ২০. মহাখালী কাঁচাবাজার, ২১. শেওড়াপাড়া বাজার, ২২. দৈনিক বাংলা মোড়, ২৩. শাহজাহানপুর বাজার, ২৪. ফকিরাপুল বাজার ও আইডিয়াল জোন, ২৫. মতিঝিল বক চত্বর, ২৬. খিলগাঁও তালতলা বাজার, ২৭. রামপুরা বাজার, ২৮. মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর, ২৯. আশকোনা হাজি ক্যাম্প, ৩০. মোহাম্মদপুর টাউনহল কাঁচাবাজার, ৩১. দিলকুশা, ৩২. মাদারটেক নন্দীপাড়া কৃষি ব্যাংকের সামনে ও পলাশী মোড়ে।