নতুন বছরের প্রথম রোববার মাত্র ঘণ্টা কয়েকের ব্যবধানে খোদ রাজধানী ঢাকায় দুটি ভয়ংকর ঘটনার সাক্ষী থাকলো বাংলাদেশ। যার প্রথমটি ঘটে ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকার কুর্মিটোলায়। বান্ধবীর বাসায় পড়তে যাওয়ার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। আরেকটি ঘটনা ঘটে
উত্তরা এলাকায়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলীকে তার নিজ বাড়িতে সপরিবারে হত্যা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয় একদল দুর্বৃত্ত। বলতে গেলে তার মেয়ের উপস্থিত বুদ্ধি আর প্রতিবেশীদের সাহসী প্রতিরোধে বেঁচে যান সারওয়ার আলী ও তার পরিবার।
প্রথম ঘটনার বিমূঢ়তায় এবং তুমুল প্রতিবাদের মধ্যে পরের দিন ডা. সারওয়ার আলীর ঘটনা চাপা পড়ে যায়। মূলত মঙ্গলবার বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর হতবিহ্বল হয়ে যান অনেকে। ভয়ংকর সেই ঘটনার বর্ণনা শুনে গা শিউরে উঠে। একটি নয়, দুটি নয়; সাত সাতটি চাপাতি, স্কচটেপ, রশি, চেতনানাশক ওষুধসহ হত্যার সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছিল সেই দুর্বৃত্তরা।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দুর্বৃত্তরা প্রথম ডা. সারওয়ার আলী বাড়ির তৃতীয় তলায় গিয়ে তার মেয়ে ও মেয়ের স্বামীকে জিম্মি করে। আরেকজন চতুর্থ তলায় গিয়ে সারওয়ার আলী এবং তার স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা চালায়। সেই সময় এক দুর্বৃত্তকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের দরজা লাগিয়ে দেন তার মেয়ে। চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে বাড়ির দ্বিতীয় তলার ভাড়াটিয়া এবং তার ছেলে ছুটে সবাইকে রক্ষা করেন। এরই মধ্যে ৯৯৯-এ ফোন করার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দুর্বৃত্তদের ফেলে যাওয়া একটি ব্যাগ উদ্ধার করে। আর তাতেই পাওয়া যায় মোবাইল ফোন, সাতটি চাপাতি, স্কচটেপ, রশি ইত্যাদি।
এই ঘটনায় আমরাও হতভম্ব। যে ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে আজীবন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, সেই ডা. সারওয়ার আলী এভাবে আক্রান্ত হলেন? তিনি এদেশের প্রগতিশীল আন্দোলনে বরাবর সামনে থেকেছেন। অক্লান্ত পরিশ্রম আর শত প্রতিকূলতার মধ্যেও মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান তৈরিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন সেই মানুষটাকে সপরিবারে ভয়ংকর হত্যাচেষ্টার মুখে পড়তে হলো?
আমরা জানি, এমন নৃশংস ঘটনা ঘটানোর দুঃসাহস তারাই রাখে, যারা একের পর এক ব্লগার, প্রকাশক আর মুক্তমনা মানুষকে ধারাবাহিকভাবে হত্যা করেছে। ডা. সারওয়ার আলীকেও সেই জঙ্গি-মৌলবাদী গোষ্ঠীই সপরিবারে হত্যার উদ্দেশ্যে এই হামলা করা হয়েছে। এই ঘটনার পর তিনি নিজেও সেই আশঙ্কাই করেছেন।
২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবীতে উত্তাল শাহবাগের আন্দোলন থামাতে ব্লগার আহমেদ রাজিব হায়দারকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার মাধ্যমে এই গোষ্ঠী তাদের হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছিল। তারপর একে একে নিলয়, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাশ, প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনসহ বেশ কয়েকজনকে হত্যা করেছে।
আমরা মনে করি, সেই মৌলাবাদী-জঙ্গিগোষ্ঠীই আবার সুযোগ পেয়ে ডা. সারওয়ার আলীকে সপরিবারে হত্যার চেষ্টা করেছে। এদেরকে যে দমন করা যায়নি, এই ঘটনা তার প্রমাণ। আমরা চাই সঙ্গবদ্ধ এই গোষ্ঠীকে সমূলে উপড়ে ফেলতে হবে। তা হলে এরা বারবার বাংলাদেশের বুক চাপাতির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করতেই থাকবে।