ভাষা সংগ্রামী অলি আহাদ (১৯২৮-২০১২)। ৬ ভাই ৪ বোনের মধ্যে ৫ম। ১৯৪৬ সালে আইএসসি পাস করে পাকিস্তান মুসলিম রাষ্ট্রের জন্য আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কমার্স এ ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে বিকম এ প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। ১৯৪৯ সালে কর্মচারীদের পক্ষে আন্দোলন করার জন্য আরো ২৭ জনের সাথে বহিষ্কার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয় ৫৭ বছর পর ২০০৬ সালের ১৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় তার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
রাজনীতি: ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি গঠিত হওয়া পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন অলি আহাদ। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষা আন্দোলনের জন্য প্রথম গ্রেপ্তার হন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। এক সময় আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রচার সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন।
১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে মাওলানা ভাসানীর সাথে প্রগতিশীলদের পক্ষে যোগ দেন। রাজনৈতিক দল জাতীয় লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। স্বাধীনতার পর বাকশাল গঠন করা হলে তিনি এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। পরে নিজ দল জাতীয় লীগ অবলুপ্ত করে খন্দকার মোশতাক আহমেদের সাথে ডেমোক্রেটিক লীগ গঠন করেন। খন্দকার মোশতাক আহমেদের সাথে মতবিরোধ হলে পৃথকভাবে ডেমোক্রেটিক লীগ পুনর্গঠন করে দলটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে দলটি বিএনপি নেতৃত্বাধীন সাত দলীয় জোটের শরিক হয়। পরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরীক হয়।
পুরস্কার সম্মাননা: স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার।
স্ত্রী: রাশিদা বেগম।
সন্তান: ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা (কন্যা)।
গ্রন্থ: জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ৭৫। বইটির ৪র্থ সংশোধনী প্রকাশিত হয়েছে।
তাকে নিয়ে লেখা বই: চির বিদ্রোহী অলি আহাদ, লেখক মুন্সি আব্দুল মজিদ।
মৃত্যু : ২০ অক্টোবর ২০১২।
ভাষা সংগ্রামী অলি আহাদের সাক্ষাতকার ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯, ২০১০ সালে নেয়া হয়েছে এবং তিনি সাধারণত সাক্ষাতকার দিতে চাইতেন না অসুস্থতার জন্য, তার কথা তার বইয়ে লেখা আছে বলে বই পড়ে নিতে বলেন। তারপরও বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন, তার কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হল।
সাক্ষাতকারগুলো ল্যাবরেটরি রোডে অলি আহাদের বাসায় নেয়া।
অলি আহাদ: কাঠের চেয়ারে বসতে হয়। তা না হলে বসতে পারি না। এবং বসলে আবার উঠতে কষ্ট হয়। সুতরাং আমার পক্ষে ইন্টারভিউ দেওয়াটা…আমি অনেক সময় ডিসকারেজ করি। অনেক সময় পারা যায় না, বয়সও হইয়া গেছে। স্মৃতি শক্তিও স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কমে গেছে। সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন করলে নিশ্চই আমি জবাব দেব। এত বিভ্রান্তি যে, এরমধ্যে থেকে সঠিক তথ্য বের করে আনা কঠিন! তারিকুল ইসলাম মাসুম: আপনার সমসাময়িকদের সাথে কথা বলে অনেকটা….
অলি আহাদ: বুঝতে পারছেন?
তা ই মাসুম: জ্বি। পরশু আব্দুল গফুর সাহেব বলেছিলেন, আপনি অলি আহাদ সাহেবের বাসায় গেছেন? হি ওয়াজ দ্যা রিয়াল হিরো। তার কাছে যান।
অলি আহাদ: উনি সৈনিক পত্রিকার এডিটর ছিলেন। তমদ্দুন মজলিশের মূল চাবিকাঠির মতো ছিলেন। সে সব ব্যাপারে ওনাদের অবদান ছিল।
কথা উঠল আব্দুল মতিন সম্পর্কে, উনি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ গঠন করেন অর্থাৎ স্টেটস ল্যাংগুয়েজ কমিটির যে, কনভেনার। ২০ ফেব্রুয়ারি (১৯৫২) রাতে আওয়ামী মুসলিম লীগের অফিসে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের বিপক্ষে ১১ জন আর পক্ষে ৪ জন। ৪ জন হল আমি, মতিন সাহেব ১ জন, তার পরে শামসুল আলম সাহেব ভাইস প্রেসিডেন্ট অব দি ফজলুল হক হল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন, অর্থাৎ ছাত্র সংসদ এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ ভাইস প্রেসিডেন্ট ভি পি ডা. গোলাম মাওলা।
এই ৪ জন। আর ১১ জন বিরুদ্ধে ভোট দিছে। মেম্বার ছিল ২৮ জন, এদের মধ্যে ১৫ জন উপস্থিত ছিল ভোট পর্যন্ত। অর্থাৎ রাত ১২টা পর্যন্ত। আর বিকেল বেলা তো হইল ১৪৪ ধারা ৪টা থেকে ঘোষণা করল। আর কেন করল? ঐ দিন ২১শে তারিখে ইস্ট পাকিস্তান অ্যাসেম্বলি, অর্থাৎ প্রাদেশিক পরিষদ সভা ডেকেছিল তারা(সরকার)।
এবং এটা আর কথাটা হল, নাজিমুদ্দিন সাহেব আমাদের সাথে এগ্রিমেন্ট করছে ১৯৪৮ সালে, ১৫ই মার্চে সাইন করেন। ১১ই মার্চের আন্দোলনের ফসল হিসেবে। এবং আমরা তখন জেলে ছিলাম। এবং জেলে আমাদের সাথে দেখা করেছেন আবুল কাশেম সাহেব এবং দুই কমরুদ্দিন আহমেদ। এবং তার সাথে আমরা ২/৩ জন ছিলাম। আমি, আমাকে শেখ (মুজিবর রহমান) সাহেবকে তারপরে আরো ২/৩ জনকে তাদের সাথে দেখা করাইল। এবং দেখা করতে পাঠাইছিল।
তখন ৮ দফা এগ্রিমেন্টটা হয়। বাংলাকে স্টেট ল্যাংগুয়েজ করা হবে। প্র্রাইম মিনিস্টার নাজিমুদ্দিন সাহেব যখন ঢাকায় আসলেন (১৯৫২)তখন ছিলেন চিফ মিনিস্টার (১৯৪৮) তখন পূর্ব পাকিস্তানে আবার প্রাইম মিনিস্টারই বলত, পূর্ব বাংলায়।
যাই হোক, তো তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৯৫২’র জানুয়ারির ২৬ তারিখে তিনি এইখানে আসেন পল্টনে একটা জনসভা করলেন। ‘উর্দু শ্যাল বি দি স্টেট ল্যাংগুয়েজ’। তার এই ঘোষণার বিরুদ্ধে আমরা ৪ তারিখে (ফেব্রুয়ারি) তার পরে ১৩ তারিখ, এরপর একে একে ২০ তারিখ ২১ তারিখ। ২০ তারিখে বিকেল বেলা জারি করা হইল ১৪৪ ধারা। বাধ্য হইয়া তাৎক্ষণিকভাবে আমরা বসে গেলাম। আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি মাওলানা ভাসানী উনি থাকার কথা ছিল, উনি আসেন নাই, (টাঙ্গাইল ছিলেন)
আতাউর রহমান খান….এবং এমনভাবে কনভিন্সড হইল, রাতে যখন ৯৪ নাবাবপুর রোডে…এবং শামসুল হক সাহেব জেনারেল সেক্রেটারি অত্যন্ত ভাল মানুষ এবং তিনি তখন আওয়ামী মুসলিম লীগের জেনারেল সেক্রেটারি। অনেক শক্তিশালী সংগঠক ছিলেন। আমরা উনারই নেতৃত্বে ছিলাম। তিনি আমাদের নেতা, তাকে আমরা মানি, কিন্তু এক্ষেত্রে গিয়া তার সঙ্গে আমাদের মতের অমিল হয়। ঐ কমিটিতে বসে। হইল তো ১১ জন আর ৪ জন। এই ৪ জন আমরা ছিলাম যে, ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করতেই হবে। তার জন্য যতকিছু করার আছে করব।
তখনই একটা রেজ্যুলেশন শামসুল হক সাহেব মুভ করলেন, এটা ১১/৪ এ আমরা ডিফিটেড হইয়া গেলাম। এই ১১’র মধ্যে শামসুল হক সাহেব বললেন, এটা রেজ্যুলেশন, যদি এর বিরুদ্ধে কোন প্রকার অ্যাকশন আগামীকল্য নেয়া হয় তাহলে এই কমিটি ডিজল্ভ হয়ে যাবে। আমি বললাম নো, নো, এটা হতে পারে না। কমিটি কেন ডিজল্ভ হবে? কমিটি থাকবে! সংখ্যাধিক্য সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটাভুটি হইল, এ পর্যন্ত কথা।
পারবে না, কি হবে না, সেটা ছাত্রদের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। সেখানে আমাদের কিছু বলার নাই। যুব সম্প্রদায়ের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। আমাদের কোন সেখানে হাত নাই। পরে ভরে গেল ইউনিভার্সিটি, এত আসল চতুরদিক থেকে। আমরা তো সংগঠন তো তখনও মোটামুটি স্কুল কলেজ সর্বত্র ছড়ানো ছিটানো ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ’। সেই সংগঠন রাত্রে আমার সাথে যোগাযোগ করল।
আমি বললাম, তোমরা তৈরি হইয়া আসবা, দেখা যাবে। যদি সেখানে মেজরিটি ভোট হয়! আমি কি করব? আমি কি কইতে পারব? না, তোমরা মান?
তাহলে আমার গলা চেপে ধরবে। আর আমি তা করব কেন? আমি তো ভাঙ্গার পক্ষেই। আমি চুপ করে যাব, এছাড়া তো আমার কিছু করার নাই।
আর দরকার নাই, সব কথা শুনবেনও তো না?
অলি আহাদ: আমার বই, এখন ৪র্থ সংস্করণ বের হইছে আমার বইয়ের। সেটা পড়লে পাবেন। তর্কটা হয় আমার সাথে।
তা ই মাসুম: হ্যাঁ, আমাকে আব্দুল মতিন সাহেব বলেছেন, যে, আপনি (অলি আহাদ) মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সাহেবকে বলেছেন, ইউ আর ওয়ার্থলেস পার্সন, ইউ আর গভর্নর জেনারেল অব পাকিস্তান, আমরা কমনওয়েলথে আপনার বিরুদ্ধে বলব।
অলী আহাদ: এইটা বই পইড়া নিবেন। আমার একটা স্টেটমেন্ট ছিল, যে বিদ্যুতের অভাব! পরবর্তীতে দেখতে হবে বিদ্যুতের জন্য গ্যাস আছে কি-না? যে সব স্যাবোটাসের জন্য এই সব গ্যাস যেমন মাগুরছড়া সেটা সন্বন্ধেতো কিছুই করে নাই। সব গ্যাস এই যে সাফ হইয়া গেল, বাড়ী গেল পুকুর গেল, জমি গেল, সবাই গেল। কিন্তু এর ক্ষতিপুরণ কি মাগুরছড়া দিয়েছে? দেয় নাই। মাগুরছড়ার ক্ষতিপুরন যে সরকার আদায় করতে পারে না, সেই সরকার বিদ্যুৎ পরিচালনা করতে কখনোই পারবে না। এবং কখনো পারে নাই। নাইকো কি?
তা ই মাসুম: তেল গ্যাস উত্তোলনকারী কোম্পানি।
অলি আহাদ: তেল গ্যাস ৪ টাতে নাই বলে, ফেনী, ছাতক, আরকেটা কামতা নাকি বলে, কিন্তু ছাতকে তে পুরোপুরি গ্যাসটাই ছিল। এই গ্যাসটাসহ ১৩ হাজার কোটি টাকায় নাইকো বিক্রি করে দিয়েছে। ইয়ের কাছে, নাইকোর কাছে। বিক্রি তো আর করে নাই! তাদের দিয়েছে উত্তোলন করতে। ১৩ হাজার কোটি টাকা এতে লস হইছে।
তো এই সকল না জাইন্না, না শুইন্না কাজে হাত দিলে তো হবে না। খালি চাইতো কইলেই হবে না। চালাবার কর্মদক্ষতা যে টেকনিক্যাল নো হাউ যেটাকে বলা হয়, সেটা থাকতে হবে। আমেরিকার কাজ হইল খালি নেওয়া, বিশ্ব ব্যাংকের কাজ হইল খালি নেওয়া। আমাদেরকে রুগ্ন রাইখা সব নিবে।
তা ই মাসুম: তারাই তো বুদ্ধি দেয়?
অলি আহাদ: এ্যা, এরাই বুদ্ধি দেয়। এ্যাগর কথাই গ্রহণ করে। যেমন: জুট মিল কর্পোরেশন, সাইফুর রহমান যখন ফাইন্যান্স মিনিস্টার তখন জুট মিল কর্পোরেশনকে অর্থাৎ বিশেষ কইরা, আদমজী জুট মিলকে বন্ধ করে দেওয়া হল।
আমি তখন একটা স্টেটমেন্ট করছিলাম যে, ৫০ কোটি ডলার আমাদেরকে দেওয়ার কথা হইতেছে, বিশ্ব ব্যাংকের কথায়। সেখানে জুট মিলগুলিকে কেন আরো শক্তিশালী করা হইবে না? যে করাপশন জুট মিলে আছে সেই করাপশনকে কেন মোকাবেলা করা হইল না? কি কারণে? আছে, কোন কারণ? সেটাকে ডিল করতে জানাটাই হইল অ্যাডমিনেস্ট্রেশন। এই অ্যাডমিনেস্ট্রেশন পুরোপুরি ফেইল করছে। ওটার নাম ছিল জুট মিল কর্পোরেশন। এতো আমরা তো, অনেক দূর চলে গেছি?
তা ই মাসুম: তাই?
অলি আহাদ: (হাসতে হাসতে) নানান কথায় নানান বিষয় এসে পড়েছে।
তা ই মাসুম: আপনি একথা না বললে, আমিতো সেভাবে জানতে পারতাম না।
অলি আহাদ: আমি তো বলেছি, তো সাইফুর রহমানের ফাঁসি হইল না কেন? আদমজী জুট মিল ধ্বংস করার জন্য দায়ী হইল সাইফুর রহমান। দেশের ক্ষতি হইতাছে, বিদেশে রপ্তানি নাই! বিদেশে রপ্তানি না হইলে আজকে ফরেন এক্সচেঞ্জ কোথা থেকে আসবে?চাউল কিনতে হইলেও তো ফরেন এক্সচেঞ্জ লাগবে। তো ফরেন এক্সচেঞ্জ পাবে কোথায়? পাইতে হইলে একটা মাত্র শক্তিশালী জায়গা ছিল জুট মিল। যেটা বিদেশে রপ্তানি করত। এবং সেই জুট মিল, ইন্ডিয়া কখনো এ ব্যাপারে আমাদের সাথে বিশেষ করে জুট মিলের ব্যাপারে আমাদের সাথে টিকে নাই ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশনে।
তা ই মাসুম: এখন ভারত কিন্তু অনেক জুট মিল চালু করছে।
অলি আহাদ: এ্যাঁ, তারাও তো ৫০ কোটি ডলার পাইছে। এবং তারা সেখানে ৫টা জুট মিল করছে। তারা যে সাহায্য পাইছে সেটা দিয়া তারা সেটা করছে। আমরা সেটা করি নাই। বরং আমরা আমাদের জুট মিল ধ্বংস করার জন্য করছি। এ ব্যাপারে জনকন্ঠে (পত্রিকা) বহু ডেসপাস উঠেছে।
তা ই মাসুম: স্যার, আমরা আবারো ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গে যাই? ভাষা আন্দোলনে আমাদের কি চাওয়া ছিল? কি পেয়েছি? কি পাইনি?
অলি আহাদ: ভাষা আন্দোলন যখন নাকি আরম্ভ হয়, সেটা তমদ্দুন মজলিশ আরম্ভ করে। এবং ঐ আব্দুল গফুর সাহেবরা এবং সৈনিক পত্রিকা ছিল।
সে আন্দোলন ১৯৮৪ সালে ১১ই মার্চে, আমরা যখন নাকি আন্দোলনে স্ট্রাইক ঘোষণা করলাম। আমাদের ওপরে হামলা, মারধর হইল এবং জেলে নিয়া যাওয়া হইল।
এক সার্জেন্ট, পুলিশ সার্জেন্ট অ্যাংলো ইন্ডিয়ান, পাকিস্তান সৃষ্টির পর তাকে যখন আমরা বললাম! তোমার নাজিমুদ্দিন সরকার কয় দিন থাকবে?তো বলল যে, হোয়াটস আপ দ্যা পিপল, হোয়েদার নাজিমুদ্দিন স্টেইস অর সামবডি এলস, উই উইল ক্যারি অন! তারপরে পিটাইয়া আমাদেরকে জেল খানায় নিয়া গেল। এই, এই এইটাইতো, এই সব কথা বলতে অসুবিধা হয়। জানতে হলে আপনাকে বই পড়ে নিতে হবে। বই পড়ে তারপরে আপনাকে জানতে হবে।
তা ই মাসুম: তাহলে স্যার, আমরা ঐ দিকে এখন যাব না। অন্যদিকে যাব। স্যার, আমরা কি পেলাম? কি পেলাম না? ভাষা আন্দোলন থেকে?
অলি আহাদ: ভাষা আন্দোলন থেকে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ, স্বাধীন বাংলাদেশ। অর্থাৎ লাহোর রেজ্যুলেশন অনুযায়ী পাকিস্তান দু’টি রাষ্ট্র হবে। লাহোর রেজ্যুলেশন হয় ১৯৪০ সালে, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক সেই প্রস্তাব দেন। আর পাঞ্জাবের চিফ মিনিস্টার সেকান্দার হায়ত খান। মূল কথা, ভাষা আন্দোলন থেকে আমরা বাঙালিরা প্রমাণিত হইল। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে আমরা ২১ দফা আন্দোলনে জিতে গেলাম। এবং সরকার হইল। মুসলিম লীগের পতন। এবং মুসলিম লীগ আর কোন দিন আসতে পারে নাই। এরপরে এসে গেল স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালে। ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ।
তা ই মাসুম: বাংলাদেশ তো স্বাধীন হল, বাংলায় কথা বলি, নিজেদের রাষ্ট্র হয়েছে। এখানে কি ২১ শে’র চেতনার বাস্তবায়ন হয়েছে এখন পর্যন্ত?
অলি আহাদ: ২১ শে’র চেতনা! কোন সময়ই হয় নাই। ছাকরা ছাকরা হইছে।
যেমন: বাংলা একাডেমি হইছে, ১৯৫৪ সালে এটা ছিল ২১ দফার মধ্যে যে, বর্ধমান হাউজ হবে বাংলা একাডেমি। বর্ধমান হাউজ ছিল পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বাসস্থান। এটি হল ইমোশন এবং সেটা হইছে।
তা ই মাসুম: আর কি হইছে?
অলি আহাদ: আর তো কিছু জানা নেই। বাংলাদেশ স্বাধীন হইয়া গেছে আর কি হবে?
তা ই মাসুম: তাহলে কি হয়নি?
অলি আহাদ: কি হয় নাই! তা তো অনেক কথা, ইন্ডস্ট্রিয়ালাইজেশন হয় নাই। যেটুকু হইছিল তা ধ্বংস হইছে। গঙ্গার পানি, বহ্মপুত্রের পানি হিন্দুস্তান নিয়া গেছে। অর্থাৎ ফারাক্কা বাঁধ। ফারাক্কা বাঁধের ফলে দেখা গেল আমার গঙ্গার পানি, আমার বহ্মপুত্র আমার নাই!আমাদের প্রস্তাব ছিল সর্বসময়ে, পাকিস্তান আমলে সবসময়ই যে, ব্রহ্মপুত্র বাঁধ আমরা চাই, ফারাক্কা বাঁধের এগেইনেস্টে। এটা হয় নাই। একটা দেশ মরুভূমি হইয়া গেল! আর কিছু লাগে।
তা ই মাসুম: তো এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা কি?
অলি আহাদ: রাস্তাটা হইল গণসচেতনতা। গণসচেতনতা ধরে রাখার জন্য একটা সংগঠন, শক্তিশালী রাজনৈতিক সংগঠন। যেটা চীনে হইছে। আগে হইছিল সোভিয়েত রাশিয়াতে।
তা ই মাসুম: সেটা তো তারা (সোভিয়েত) ধরে রাখতে পারেনি?
অলি আহাদ: না, ধইরা রাখতে পারে নাই, সোভিয়েত রাশিয়া, তার ফলটাতো এখন সবাই দেখতে পাচ্ছেন! এখন তো এসে গেছে অ্যাটম বোমার খেলা। হাইড্রাজেন বোমার খেলা। তো এগুলি একটা জাতির জন্য বা মানব জাতির জন্য হুমকি ছাড়া আর কিছু না। আমেরিকা বলবে এক রকম, রাশিয়া বলবে এক রকম, যেমন (ভ্লাদিমির) পুতিন (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট) এখন যা বলছে, যে আমরা ৪ হাজার চ্যানেলের উপরে আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি। আমাদের আনবিক বোমা সেখানে যাইতে পারে। অর্থাৎ মিসাইল যেতে পারে। সেই মিসাইল সিভিলাইজেশনের মধ্যে আমরা পড়ে গেছি।
যদি চীন বলে, যারা যারা মালিক সিকিউরিটি কাউন্সিলের। এই যে ৫ জন মেম্বার। আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চীন। এখন তাদের মধ্যে কম্পিটিশন হবে। আর মধ্যে থেকে আসতেছে জায়গায় জায়গায় অ্যাটম বোমা, পাকিস্তান, যেমন আছে ইন্ডিয়া, যেমন আছে নর্থ কোরিয়া, এখন যেটা চেষ্টা করতেছে সেটা হল ইরান। নর্থ কোরিয়াতে আছে, তারা স্বীকার করে না। স্বীকার করুক আর না করুক আছে বলেই আমেরিকার সাথে ঝগড়াটা হইতেছে। তো আমেরিকা যদি বলে আমার হইতে পারবে তাহলে কোরিয়া পারবে না কেন?
তা ই মাসুম: স্যার, তাহলে সাজেশন কি?
অলি আহাদ: ইন্টারন্যাশনাল মারলিটি!
তা ই মাসুম: ওরা তো আমাদের কথা শুনবে না।
অলি আহাদ: তাহলে হবে না! সোভিয়েত রাশিয়া একাই যদি না শুনে হবে না, চীন যদি একাই না শুনে হবে না, আবার আমেরিকা যদি না করে একাই! হবে না।
ফলে হইতেছে জঙ্গী, সর্বত্র কার্বন ডাই অক্সাইড ফলে, এভারেস্ট ভাইংগা পড়তেছে। উত্তর মেরু ভাইংগা পড়তেছে, পানির উচ্চতা বাইড়া যাইতেছে ফলে আমরা লাস্ট সিডর (ঘূর্ণিঝড়) পাইসি। অতএব এর কোন শেষ নাই। মানব জাতিকে বাঁচানোর জন্য মানবের, মানসিক পরিবর্তন প্রয়োজন। এটা কেউ মানাতে পারবে না। মানার উপর নির্ভরশীল। মনোজগতের পরিবর্তন ছাড়া, মানব জাতির প্রতি মানুষের ভালবাসা, সেটাতে উদ্ভাসিত হওয়া ছাড়া উপায় নাই। এক কথায় মোরাল টার্পিচ্যুডকে ভুলে যেতে হবে।
তা ই মাসুম: এবার ব্যক্তিগত বিষয়ে কিছু কথা বলি? জীবনে অর্থ উপার্জনের জন্য কিছু করলেন না। কেন করলেন না?
অলি আহাদ: কেন করি নাই? করি নাই! কিছু করি নাই। এটা হল যার যার মানসিক অবস্থা। এইটা কেউ বদলাইয়া দিতে পরবে?
তা ই মাসুম: না।
অলি আহাদ: তাইলে!
তা ই মাসুম: আপনার সংসার চলে কিভাবে?
অলি আহাদ: আমার বউ-ই সংসার চালায়। এছাড়া উপায়টা কি? এর আগে আমার ফ্যামিলি চালাইত। আমার ফ্যামিলিতে সিএসপি ছিল, ফ্যামিলিতে ডিন আছে, আমার ফ্যামিলিতে ভাইস চ্যান্সেলর আছে। সুতারাং এই সব ব্যক্তিগত প্রশ্ন করলে আপনি আমার কাছে কিছু পাবেন না। আমি অতি সাধারণ লোক। অতি সাধারণ লোক হিসেবেই আমার জীবন চলে। (খন্দকার) মোস্তাক সাহেবরে জিজ্ঞাস করলে কি কইত? বলত, চান্দা তুইল্যা খাই! (হাসি দিয়ে) বলত আর কিছু করেন না। বলে, আমি তো রাজনীতি করি সবসময়। এই হইল ওনার উত্তর। তো, আমার কাছে এসব কথা জিজ্ঞেস করেন কেন?
আমি কি ঢাকা ক্লাবে কাউকে রিসিপশসন দেই? তাহলে? যারা যারা ঢাকা ক্লাবে রিসিপশন দেয় টাকা কই থেকে আসে? আবার আসা যাওয়ার। এসব তো বাস্তব অবস্থা আপনি জানেন। এসব প্রশ্নের কোন উত্তর নাই। আর এসবের জন্য আমি আসি নাই। উত্তর দিতে (মুচকি হেসে)। তাদের সঙ্গে তো আমার অনেক অমিল। টাকা-পয়সা, গাড়ী-ঘোরা এগুলা কোনটা আমার দ্বারা হবে না। এটাতে আমি অভ্যস্ত নই। সুতরাং কি করব?
আজকে রবীন্দ্রনাথ লেখা নিয়ে জিজ্ঞাস করব এর আমারে উত্তর দেবে কে? রবীন্দ্রনাথ তো জমিদার এবং কার জমিদার? ব্রিটিশের আবার নোবেল প্রাইজ ও পাইছে। নোবেল প্রাইজ পাওয়ার মতো পাইছে। আমি তারে জিজ্ঞাস করবো, এবার উত্তর একমাত্র রবীন্দ্রনাথই দিতে পারবে। আবার দেখা গেছে রবীন্দ্রনাথই এই পাঞ্জাব ইয়েতে গুলি চলল যখন, ব্রিটিশ আমলে তখন রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। তো, সে রকম, একক সময় একেকটি সুযোগ আসে। (কাজী নজরুল ইসলাম) নজরুলকে পাবেন অতি সাধারণ ঘরের লোক। এবং নজরুলকে পাবেন স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাপাইয়া পড়ার যে প্রেরণা। জেল খাটছে। তো, সেটাতে আমি ইচ্ছা করলে রবীন্দ্রনাথের চাইতে বড় করে দেখাইতে পারব? আমি তো পারব না। আমার কাছে, নজরুলই হইল আমার আদর্শ।
তা ই মাসুম: এখন এই সময়ে আপনাদের মতো যারা আছেন, আমি যাদের সাথে কথা বলেছি। তাদের রাজনীতি বা আন্দোলন ছাড়া কিছু করা হয়নি। এরকম লোক এখনকার রাজনীতিতে নাই।
অলি আহাদ: নাই! তো এরকম লোকের দামও নাই! (হাসলেন) দাম আছে? চট্টগ্রামের ভাষা সংগ্রামী কবি মাহবুবুল আলম (যিনি একুশের স্মরণে বিখ্যাত কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ লিখেছেন), অলি আহাদকে নিয়ে একটি কবিতা লিখেছেন তার ‘সূর্যের ভোর’ কাব্যগ্রন্থের ২৬ নম্বর পৃষ্ঠায়।
একটি লাল গোলাপ
অলি আহাদকে
বাঁধন ছেঁড়া সেই তেজী ঘোড়াটা
যিনি একদিন ইতিহাসের বীনায় ঝংকার তুলেছিলেন
তাঁর আপোষহীন সাহসী ভূমিকায়,
সেই তিনি কি কঠিন নিরবতায়
বন্ধু-বান্ধবহীন অভিমানী বালকের মতো
চলে যাবেন আমাদের চোখের অগোচরে
বিধ্বস্ত নীলিমায়,
না, তাঁর ব্রতের গৌরবে
আমরা তাঁকে স্মরণ করব প্রতিদিন,
উজ্জীবিত হবো কঠিন ব্রতে
আঁধার দূর কারা সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞায়
আমরা কি কৃপনের মতো তাকে যোগ্য আসনটি
না দিয়ে, ঠেলে দেবো
কালো পর্দার অন্তরালে
না, একুশের ভোরে
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার
স্পর্ধিত সংলাপটি স্মরণ করে
প্রতি একুশে
তাঁকে কিছু ফুল আর বুকভরা ভালোবাসা দেবো।
আমার সেই স্পর্ধিত বন্ধুটিকে,
সাহসী নাবিকটিকে,
একুশের ভোরে
নাটকীয় অবাধ্যতায় স্মরণ করে
একটি লাল গোলাপ
তুলে দিলাম।
৫ ফাল্গুন, ১৪১১
তা ই মাসুম: স্যার, একসময় আপনি বঙ্গবন্ধুর সাথে রাজনীতি করেছেন। এক সময় আলাদাভাবে রাজনীতি করেছেন। তার হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্যটা কি ছিল? (আর কোন প্রশ্ন করতে না দিয়েই)
অলি আহাদ: প্রথম উত্তরই হইল ২৫শে জানুয়ারি সেই ১৯৭৫ সালের সিরাজ শিকদার নামে কারো নাম শুনেছেন?
তা ই মাসুম: শুনেছি।
অলি আহাদ: শুনেছেন, সিরাজ শিকদার, তার বাপ ছিল ডেপুটি মিনিস্টার। ম্যাট্রিকে ফার্স্ট ডিভিশন, আইএসসিতে ফার্স্ট ডিভিশন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিতে গেলেন, ফার্স্ট, ফার্স্ট, ফার্স্ট। সে একটা দল করছে ৫ জনের করুক, ১০ জনের করুক। এত বড় শিক্ষিত লোক আমিতো এমনিতেই মাথা নত করি। অন্য কথা বাদই দেন।
তাকে ধরাইয়া দিল। পুলিশ দিয়া ধরাইল, মাইরা ফেলল। একই রাত্রে। ২৫ তারিখে তিনি (বঙ্গবন্ধু) পার্লামেন্টে দাঁড়াইয়া কইলেন, কোথায় এখন সিরাজ শিকদার?
আমি সেভেন্টি থ্রিতে ইলেকশনে, আমারে একটা মন্ত্রীত্ব দিল, আমি রাজি হইলাম না। সে জাউগ্গা এইডা বাদ দেন। এডি ব্যক্তিগত ব্যাপার। সেভেন্টি থ্রিতে ইলেকশনে গেলাম। সেভেন্টি টু কনস্টিটিউশন হইল। সেই ইলেকশনে আমি জিতলাম এবং সেখান থেকে নির্বাচনী অফিসার, ঘোষণা করে দিল ইয়েস, আই অ্যাম ইলেক্টেড।
রাত্র ২টার সময় ঘোষণা করা হইল শক্তিশালী প্রার্থী অলি আহাদ তাহের উদ্দিন ঠাকুরের কাছে ১০ হাজার ভোটে পরাজিত।
ঢাকা ফিরে আসলাম। আমাকে টেলিফোন করল শেখ মুজিবুর রহমান।
কি রে? কেমন আছত?আমি বললাম, মুজিব ভাই আছি, কোনমতে আরকি।
ইলেক্টেড হইলি না?আমি বললাম, আপনি এখানে থেকে শেষ কইরা দিবেন, আমি ইলেক্টেডটা ক্যামনে হমু। অফিসারে ঘোষণা করছে, আমি তো ইলেক্টেড হয়েছিলাম।
এক দলীয় শাসন! আমার ফোর পিলারস অব কনস্টিটিউশন। ধর্মান্ধতার কোন সেখানে জায়গা নাই। সেই কনস্টিটিউশনটা একদলীয় কেন হইল? তাতে নির্বাচিত সরকার হবে। পার্লামেন্ট হবে। একদলও হইতে পারে দশ দলও হইতে পারে।
তুমি এটা না করতা? তুমি একদল করলা কোন সাহসে?আবার সামনে পড়লে একবারে ভাল। অসম্ভব ভাল! যেকোন কাজের জন্য যাবেন, মুজিব ভাই কইরা দিবে। এ্যাক্কালে মুজিব ভাই যে, ঠিকই মুজিব ভাই।
আমার জিজ্ঞেস করার আছে, কামাল (ড. কামাল হোসেন) সাহেব সম্মন্ধে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় আপনি কোথায় ছিলেন? না ছিলেন বাংলাদেশে? না ছিলেন ভারতে। আমরা যারা কুত্তার মতন সেখানে গেছিলাম। ছিলেন পাকিস্তানে। আপনার বিচার হবে না কেন? আপনাকে উত্তর দিতে হবে। আপনি এখন কথা বলেন?এরশাদের বিচার কেন হইল না? আমাকে বলে দিতে হবে। আজো কেন হয় না। জিয়ার সাথে আমার দ্বিমত আছে। আমার হাতে ধইরা আমারে ইয়া করতে পারে নাই। আমারে ৭ তারিখের ইয়ে দিতে চাইছে। ঐটাকে কি বলে, ৭ তারিখে অ্যাওয়ার্ড দিতে চাইছে। আমার কাছে আসছে তার ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার হইছে। তার নাম হইর এসএ বারী এটি।
আমি বললাম, তুমি আমার কাছে এইটা নিয়া সাহস পাইলা আইতে! একটা মেজর সে সাহস পাবে আমাকে দিতে?ভাষা আন্দোলনের ব্যাপারে? আমারতো সবটাই বৃথা তাহলে! তোমারটাও তো বৃথা! তুমিও তো জেলে ছিলা আমার সাথে? তুমিও তো পিকেটিং করছ রাস্তায়, তাহলে? আমি গ্রহণ করি নাই। শেষ গ্রহণ যেটা করেছি, সেটাও এদেরও (স্ত্রী কন্যা) চাপাচাপি আছে। চাপাচাপিতে সেটা হইল, যেটা ন্যাশনাল ডে, সেদিনের জন্য যে অ্যাওয়ার্ড সেই অ্যাওয়ার্ডটা (স্বাধীনতা পুরস্কার) গ্রহণ করেছি।
এর পর আপনের আর কোন প্রশ্ন আছে?আমার এই কথাগুলি খুব কাটা কাটা।
গোলাম আযমের কথা কোন দুঃখে আপনি জিজ্ঞেস করলেন না আমাকে? বলেন? আপনার কিছু লাগে? আপনি কিছু খাইছেন?
তা ই মাসুম: না।
অলি আহাদ: বিচার কেন হবে না? কোলাবরেটার্স অ্যাক্ট শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব করলেন নাইন্টিন সেভেন্টি টু তে। ৩৫ হাজারকে গ্রেপ্তার করা হইল। দ্বিতীয় রাতে ২০ হাজারকে ছেড়ে দিলেন। না বোধ হয় ২৫ হাজার। যাই হোক ১০ হাজারকে রাইখা দিলেন যাদের বিচার করবেন। জিয়াউর রহমান সাহেব ক্ষমতা দখল করে তাদেরও ছেড়ে দিলেন এবং কোলাবরেটার্স অ্যাক্টই বাতিল করে দিলেন।আমাকে যখন ধইরা নিতে আইছিল (স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়), টের পাইয়া গেছে আমি কোথায় আছি। যার বাসায় ছিলাম, সেটার চতুর্দিকে একটা পর্দা আছে। দেখার জন্য, রাত্রে তিনটা-সাড়ে তিনটার দিকে আসছে। সে গাড়ীতে দেখলাম, বড় একটা গাড়ী, সে গাড়ীতে দেখলাম যে, ওরা তো আছেই পাক আর্মি বাঙালি কয়জন আছে। চিনাইয়া দিবে। আমি পর্দাটা একটু ফাঁকা বড় করে দেখে তার পর বন্ধ করে দিলাম। আল্লাহ’র হুকুম।
যখনই জিজ্ঞেস করল দারোয়ানকে। থ্রি হান্ড্রেড ফাইভ কোন হ্যায়? কোনঠু হ্যায়? এইটা হ্যায়?নেহি সাহাব, এ নেহি হে। ও বাড়া রাস্তামে হ্যায়। ওহা দেখিয়ে।
তো গেল সেখানে, আল্লাহ’রই হুকুম আর ফিরে আসল না। আমি আজো বেঁচে আছি। আপনার সাথে কথা বলছি। অতএব, ঐ যারা দেখাইন্যা এরা হল গোলাম আযম তারা। আমার বিয়েতে, সেজন্য বলছি ছবি আছে টিক্কা খান, গোলাম আযম তার পরে নূরুল আমীন এদের সবার ছবিসহ। ছবি দেওয়া আছে। অপারেশন সার্চ লাইট বইল্যা কোন কথা শুনছেন?
তা ই মাসুম: জ্বি স্যার।
অলি আহাদ: কয় তারিখ হয়েছিল?
তা ই মাসুম: ২৫ মার্চ রাতে। ১৯৭১।
অলি আহাদ: ২৫ মার্চ রাতে। এই অপারেশন সার্চ লাইটে ১৬ জনকে মারতে আদেশ দেওয়া হইছিল তারমধ্যে ৯ নম্বর আমি। নুরুল আমীন ঘোষণা করছিল, প্রোকলেমেশন, আমাকে ধইরা দেওয়ার জন্য। আমার মতো আরো কয়েকজনকে। তো আমি তো আজো বেঁচে আছি। কার ইচ্ছায়? ‘তাসাউফ’ ওপরে ইশারা করে ওর (আল্লাহ) ইচ্ছায়।
তা ই মাসুম: এখন এদের কী করতে হবে?
অলি আহাদ: এখন এই দালালদের বিচার করতে হবে। যুদ্ধাপরাধী তারা নয়। যুদ্ধাপরাধীদের শেখ মুজিব ছেড়ে দিয়েছেন। নাইন্টি থ্রি থাউজেন্ডস পাক আর্মি। তারা হইল যুদ্ধাপরাধী। যুদ্ধ করেছ যারা। এই নাইন্টি থ্রি থাউজেন্ডকে সেই মিটিংএ ভূট্টো, সেই মিটিং এ ইন্দিরা গান্ধী, সেই মিটিংএ শেখ মুজিবুর রহমান। সিমলা কনফারেন্স যেটাকে বলা হয়। সেখানে ঘোষণা করা হইল, নাইন্টি থ্রি থাউজেন্ড পাকিস্তানি আর্মিকে মুক্তি দেওয়া হইল। তরা চলে গেল। আর রাজাকার, আল বদর, আল শামস, তাদের সম্বন্ধে আর কোন বক্তব্য নাই। এটা এখানকার জিনিস এটা শেখ মুজিবুর রহমানের দায়িত্বই রইছে। কই তাদের তো সে বিচারটা শেষ করে নাই। পয়লাই তো গোলাম আযমেকে ধইরা ই করতে হইবে। গোলাম আযমকে সে নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়েছিল।
আসলো কি করে দেশ? আজো তো সে বেঁচে আছে! দি হাই কোর্ট মেম্বার ২ জন, একজন হইলেন ব্যারিস্টার মোস্তফা কামাল সাহেব (সাবেক প্রধান বিচাপাতি),আরেকজন হইলেন হাবিবুর রহমান (সাবেক প্রধান বিচারপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকোরের প্রধান উপদেষ্টা ও ভাষা সংগ্রামী) সেও ব্যারিস্টার। তারা ২ জন ছিলেন। তারা সেখানে আদেশ দিয়া দিলেন যে গোলাম আযমের নাগরিকত্ব বহাল। কই তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা হয় নাই! তাদের কলমের খোঁচায় আমরা স্বাধীনতা আনছি? কলমের খোঁচায় আমার রক্ত গেছে এতগুলো লোকের? কলমের খোঁচাই দেশ চাইছি একথা লিখছে? তাইলে? আমি এক্ষণ বিচার চাই। এই মুহূর্তে বিচার চাই। এই মুহূর্তে।
এইটা কি খুব কঠিন! গোলাম আযমকে নিজামীকে ধরা খুব কঠিন! নিজামীর বাড়ী হয় কি কইরা? সে স্পেশাল পারমিশনটা কি? কেন রাজউক তাকে স্পেশাল পারমিশন দিল? কার আদেশে দিল? রাজউকের এই শক্তি কোথা থেকে আসল? এটা তো পরিষ্কার অংক। একথা লিখতে পারবেন? বলবেন?
তা ই মাসুম: এটা।
অলি আহাদ: হ্যাঁ, দেখি মিথ্যা কথা বইলা গেলেন কিনা আমার কাছে। এরপর কিন্তু কোন ইন্টাভিউ দিব না।
তা ই মাসুম: আমি পারব।
তা ই মাসুম: আপনার বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু কেমন মানুষ?
অলি আহাদ: আমার বিবেচনায় অত্যন্ত নরম মানুষ, ভাল মানুষ, ক্ষমতা বিলাসী। অত্যন্ত নরম মানুষ, অত্যন্ত ভাল মানুষ, কিন্তু ক্ষমতা বিলাসী। আপনি যদি বলেন ওনাকে মুজিব ভাই আমার এই কাজটা কইরা দেন। কইরা দিবে।
তা ই মাসুম: তার হত্যাকাণ্ডেস কারণ কি একটা না বহু?
অলি আহাদ: নরম, নরম অত্যন্ত নরম হৃদয়ের মানুষ।
তা ই মাসুম: তার হত্যাকাণ্ডের যে ঘটনা এর কারণ কি এক না বহু?
অলি আহাদ: হু হু (মুখ বুজে হেসে) এটা কি আজকেই নিতে চান? এটা আমার কাছে জিজ্ঞেস না করে তখন যিনি চিফ (আর্মি) ছিলেন শফিউল্লাহ সাহেব আওয়ামী লীগ করে তাকে জিজ্ঞাস করেন। তখন যিনি সিজিএস ছিলেন, যিনি নাকি সমস্ত সিকিউরিটির চার্জে। তার নাম হইল খালেদ মোশাররফ।
তা ই মাসুম: তিনি তো নাই।
অলি আহাদ: তিনি অভিযুক্ত। তো তাদের জিজ্ঞাস করেন। সিপাহি বিপ্লবটা কি? অফিসারদের মাইরা শেষ কইরা দেওয়া। তার মানে আর্মিটা ধ্বংস কইরা দেওয়া। এই সিপাহি বিপ্লব কে করেছিল? কারা?ঐ যে একজন নাম শুনা যায়। দাঁড়ি রাখছে, দাদা ভাই বলে। কি নাম?
তা ই মাসুম: সিরাজুল আলম খান।
অলি আহাদ: সিরজুল আলম খান। তারই দল জাসদ। ইন্ডিয়ার প্ররোচনায় জাসদ করা হয়। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর জন্য। তারা এই সিপাহি বিপ্লব করে। শেষ হইলতো আমাদের স্টার অফিসারগুলি। খালেদ মোশাররফও শেষ হইল। শেষ পর্যন্ত জিয়াউর রহমানও আমার দ্বিমত আছে সেটা অন্য কথা। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানও শেষ হইলেন।
আর সবচেয়ে ব্রিলিয়ান্ট অফিসার যিনি, জেনারেল মঞ্জুর জিওসি অব চিটাগং গেরিসন। তাকে ধরে নিয়ে, আহারে! আরো ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা অফিসার। ওনাকে ধরে আনলেন, আমাকে ধরেছিল মতিঝিল উনি ছিলেন চিফ। এরশাদ আমাকে মারবে। টেলিফোন করেছে ওখানে, ওকে আমাদের কাছে পাঠাইয়া দাও। আমাকে আইসা বলে, ওঠেন ওঠেন, জলদি ওঠেন! ওঠেন, ওঠেন জিপে ওঠেন! জিপ তৈরি কইরা রাখছি। এক্ষণ কোর্টে যাবেন! কোর্টে গেলাম, বেইল দিউক আর না দিউক, জেলখানায় পাঠাইয়া দিউক। এরশাদের কাছে যেতে হবে না।
তা ই মাসুম: এক কথায়, এতকিছু করলেন, পেলেন কি এখন পর্যন্ত?
অলি আহাদ: পাওয়ার জন্য তো কিছু করি নাই?
তা ই মাসুম: দেশ কি পেলো?
অলি আহাদ: দেশ পেয়েছে, স্বাধীনতা।
তা ই মাসুম: আর?
অলি আহাদ: আর, স্বাধীনতার চেয় বড় আর কি আছে?
তা ই মাসুম: একটা কথা আছে না? স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন?
অলি আহাদ: রক্ষা করা কঠিন, সেটা আমার দায়িত্ব না। সেটা হইল, যারা স্বাধীনতা এনজয় করবে তাদের দায়িত্ব। তারা যদি না বুঝতে পারে তাহলে আমার তো করার কিছু নাই। আমার তো উপায় নাই, আজকে আছি, কালকে হয়তো আমি চলে যাব।
তা ই মাসুম: তো, তাদের জন্য আপনার কোনো পরামর্শ? এখন যারা আছেন, ভবিষ্যতে যারা আসবেন স্বাধীনতা ভোগ করবেন।
অলি আহাদ: আপনারা দায়-দায়িত্ব অনুযায়ী যা করা দরকার তাই করেন!
তা ই মাসুম: মুরুব্বী হিসেবে কোনো পরামর্শ দিবেন না?
অলি আহাদ: না, পরামর্শ দেওয়ার কি? আমার তো যাওয়ার পথে…এখন তো, তারা অনেককিছু দেখে ফেলেছে। সুতরাং আমার কাছে তো তাদের পরামর্শের দরকার নাই। তারাই পরামর্শ দিবে। স্রষ্টা তারাই হবে।
তা ই মাসুম: এখন এই অবস্থায়, ৩৮ বছরের(স্বাক্ষাতকারগহণকালে) বাংলাদেশ, একজন পরিণত যুবকের বয়স ৩৮, উদাহরণ হিসেবে কাছাকাছি যদি বলি মালয়েশিয়া, ভিযেতনাম, সিঙ্গাপুর, এদের দিকে তাকালে তো মনে হয় আমরা এদের হাটুর কাছে পড়ে আছি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিক থেকে বা অন্যান্য দিক থেকে।
অলি আহাদ: শাসকরা যেরকম হয় সেরকম হবে। আছে না এদের শাসক? সেইটা যেরকম হইছে, এইটাও সেই রকম হবে। সুতরাং শাসকের ওপর নির্ভর করবে। শাসক যদি ভাল না হয়….আবার দেশের জনগণও যদি শক্তিশালী হয়, তারা যদি দাবি আদায় করতে জানে তাহলে তারা দাবি আদায় করতে পারবে। এই সব প্রশ্ন… এই সব প্রশ্নের উত্তর নাই। এসব কথার দাম নাই, আমার কথার দাম নাই।
তা ই মাসুম: স্যার, আপনি তো গণ-মানুষের নেতা, গণ-মানুষের রাজনীতি করছেন, এই দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য, মানুষের উন্নতির জন্য, মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য মানুষকে কি করতে হবে?
অলি আহাদ: মানুষদেরকেই করতে হবে।
তা ই মাসুম: সেটা কি করা উচিৎ? আমার মতো, আমি তো বুঝি না কি করা উচিৎ, আরেকজন বোঝে না কি করা উচিৎ, এই মানুষগুলোকে একটা ম্যাসেজ দেয়ার মতো আপনার মতো তো নেতা নাই। কি বলবেন?
অলি আহাদ: ম্যাসেজ তো একটাই। কবি নজরুল হতে পারবে তো?
তা ই মাসুম: কবি নজরুল সবাই হতে পারবে না।
অলি আহাদ: না হইতে পারলে হবে না। কবি নজরুল তো ইতিহাস সৃষ্টি কইরা দিয়া গেছে। উদাহরণ হিসেবে রেখে গেছে নিজেকে। আমি তো রবীন্দ্রনাথের কথা কই না। কেন কই না? হে হে কইরা গান গাওয়ার জন্য তো দেশ না। সে গান গাওয়া এক কথা, আর সংগ্রাম করা এক কথা। কবি নজরুল ছিলেন, সংগ্রামী। উদাসী কবি। তো, সুতরাং একজায়গায় তো যাইতে হবে? এইটাও পারিব না, ঐইটাও পারিবনা, তাইলে কোনোটাই হবে না। এখন উনি যদি পারেন?তো, আমার কাছে এইসব উপদেশ নিলে, এখন আমি কিছুই করতে পারি না। এখন তো, কখন যাবো এইটা চিন্তা আছে। আল্লাহ কখন নিয়া যাবে।
তা ই মাসুম: সবাইতেই তো নিয়া যাবে। আমাকেও নিয়া যাবে। আমাকেওতো আপনার আগে নিয়া যাইতে পারে। এইটার তো কোনো গ্যারান্টি কেউ দিতে পারে না।
অলি আহাদ: নিতে পারে, আমি গ্যারান্টি বলিও না। তো এই শক্তি আমার কাছে আর নাই এখন। শক্তি আমি নিজেও বোধ করি এখন ফুরাইয়া আইছে। তো, ফুরাইয়া আইছে মনে হয়, আবার কাল দেখা যাইবে যে আরো জোয়ান হইয়া গেছি, হইতে পারে। তো, সেইটা, সেই ধরনের পুরুষ আমি নই মনে হয়। হইলে দেখা যাইবে!আজকে ছাইড়া দেউক গভর্নমেন্ট আমার কাছে, ‘দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন’ সরকারের প্রথম কথাই এইটা। দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন। এইটা যে করতে পারবে না, তার কোনো গভর্নমেন্ট নাই। সে কমিউনিস্ট পার্টি করুক, সে ডেমোক্রেটিক গভর্নমেন্ট করুক, যেকোন অ্যাডমিনেস্ট্রেশনে করুক, দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন, আসল কথা।
দুর্নীতি, আমলাতন্ত্রের ভূত কে ছাড়াবে? আমলাতন্ত্রে একটা ভূত আছে। তাহলে, এটাকে যে ম্যানেজ করতে পারবে সেই, গভর্নমেন্ট চালাবে। আর যে পারবে না, এই রকমই চলবে, গভর্নমেন্ট চলতে থাকবে, যাইতে থাকবে। কথাতো এইটা পরিষ্কার।
তা ই মাসুম: জ্বি। মানে, সবার কাছে রাস্তা খোলা আছে, আপনি কোন রাস্তাটা ব্যবহার করবেন? সেটা হলো বিষয়।
অলি আহাদ: হ্যাঁ, একটাই রাস্তা, দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন। সোভিয়েত রাশিয়া কেমনে ভাইঙ্গা চুরমার হইয়া গেল। খুব দুষ্টের দমন করতে গেছিল। এমন দমন করাই করছে! কেজিবি’র মারফত দিয়া, এইরপর তো গর্ভাচেভ এইটা ভাইঙ্গাই দিছে, যাহ! মানে অত্যাচারটা এত বেশি হইছে! সেই অত্যাচারটা গর্ভাচেভকে যাইয়া সেই অত্যাচারটা বন্ধ করতে হইছে। সব চুরমার। তো অতি টানলেও চলত না, অতি ঢিল দিলেও চলত না। তো, বেসিক কথা একটা দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন। আমি যে আন্দোলন করে আসছি, সেটার ঘটনা আপনি জানেন না। সেটা কি? সমগ্র বঙ্গদেশকে মিলিয়ে একটা স্বাধীন বঙ্গদেশ।
তা ই মাসুম: জ্বি।
অলি আহাদ: স্বাধীন স্বার্বভৌম বঙ্গদেশ।
তা ই মাসুম: জ্বি।
অলি আহাদ: সেটার নেতা ছিলেন, শরৎচন্দ্র বোস, সেখানে ছিলেন আমাদের নেতা আবুল হাশিম সাহেব। সেই রাজনীতি থেকে আমি এই পর্যন্ত ফাইট করতে করতে আসতেছি। একবার ছিটকাইয়া পড়ি একবার এই পড়ি, এই চলতেছে। তো, এখন যে কি হবে? এই বইটা লেইখা দিয়া গেছি, যার খুশী হয় পড়বে, না হয় পড়বে না? আমার কি? তো, অনেকে পড়ে এবং সে অনুযায়ী কোট ও করে। এই হইল আমার সাকসেস, আর কিছু না।
তা ই মাসুম: ভাষা সৈনিক শব্দটা নিয়ে আমার একটা জিজ্ঞাসা আছে। যারা ভাষা আন্দোলন করেছেন তাদেরকে আমরা কেন ভাষা সৈনিক বলি? এ বিষয়ে ড. রফিকুল ইসলাম স্যারের সাথে কথা বলেছিলাম। তিনি বলেছেন, স্বাধীনতার পর কিছু লোক নিজেদের বাহাদুরী দেখানোর জন্য নিজের নামের সাথে ভাষা সৈনকি শব্দটা ব্যবহার করছেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি আপনাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আপনি না-কি বলেছেন, ওরা যদি ভাষা সৈনিক হয় তাহলে আমি তো সিপাহসালার। এটা না-কি আপনি কৌতুক করে বলেন, আসলে ঘটনাটা ঠিক।
অলি আহাদ: হুম, কথাটা ঠিক। কথাটা সত্য।
তা ই মাসুম: আর ভাষা সৈনিক শব্দটার ব্যাপারে উনি (ড. রফিকুল ইসলাম) একটা আপত্তি তুলেছেন। তিনি যেটা বলছেন, স্বাধীনতার পর কিছু লোক নিজেদের সুবিধা নেওয়ার জন্য নামের আগে ভাষা সৈনিক শব্দটা ব্যবহার করছেন যারা ভাষা আন্দোলনের সাথে ছিল না বা স্বাধীনতা যুদ্ধের সাথে ছিল না।
অলি আহাদ: একথাও সত্য। একথা সত্য। সবে যার যার সুবিধামত শব্দ ব্যবহার করছে। একথা সত্য।
তা ই মাসুম: এ শব্দটা স্যার, কিভাবে আসছে আপনার মনে হয়?
অলি আহাদ: কিভাবে আর, আইনা ধরাইয়া দিলো আর হইয়া গেলো। একজনে স্লোগান দিলো, এটা স্লোগান হয়ে গেলো, লগে যে সেও হয়ে গেলো। সেও নেতা হয়ে গেলো! সুতরাং, কথাগুলি এইভাবে আসছে। অনেকে এক্সিডেন্টলি আসছে, আবার এক্সিডেন্টলি এটা অ্যাপ্রুভডও হয়ে গেলো। হাভ-ভাব দেখানোর জন্য, হয়ে গেলো, হয়ে গেলো!
তা ই মাসুম : এ বিষয়ে কিছু বলবেন?
অলি আহাদ: আর কিছু নাই।
তা ই মাসুম: কিছু নাই?
অলি আহাদ: নাহ।
চলবে…