ইডেন গার্ডেনসে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ-ভারতের ঐতিহাসিক গোপালি বলের টেস্ট। তারিখ ঠিক হওয়ার পর থেকেই সাজতে থাকে কলকাতা শহর। যার পূর্ণতা পায় শুক্রবার। যেখানে গোলাপি হয়ে যায় মিষ্টির রংও!
সবকিছু এমনভাবে এগিয়েছে যে, দর্শক কোনদিক ছেড়ে ইডেনের কোনদিকে তাকাবেন? একদিকে ‘ইডেন বেল’ বাজান দুই বাংলার দুই নেত্রী- বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। খেলা শুরুর আগে দু’দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলান তারা। তাদের পাশে তখন উপস্থিত ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি।
অন্যদিকে স্বপ্নের সব মুখ। বাংলাদেশ থেকে হাবিবুল বাশার, নাইমুর রহমান দুর্জয়, আকরাম খান, মেহরাব হোসেন অপি, হাসিবুল হোসেন শাস্ত-সহ দেশের হয়ে অভিষেক টেস্ট খেলা অন্য সদস্যরা। ছিলেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাও। তাদের পাশেই শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, অনিল কুম্বলে, মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন থেকে সুনীল গাভাস্কার, কপিল দেবরা।
ছিলেন ভারতের হয়ে অলিম্পিক সোনাজয়ী অভিনব বিন্দ্রার সঙ্গে পিভি সিন্ধু, মেরি কম, সানিয়া মির্জা, রানী মুখার্জী ও গোপীচন্দরা। ক্রিকেট, অলিম্পিক গেমস, বলিউড, রাজনীতি সব মিলেমিশে একাকার ইডেনে। ভরা গ্যালারির সামনে এই মায়াবী পরিবেশে শুরু হয় দুদেশের গোলাপি টেস্ট।
যে টেস্ট নিয়ে উন্মাদনা পুরো বাংলাদেশ-ভারতজুড়ে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে গেছেন ঐতিহাসিক ম্যাচ মাঠে বসে দেখতে। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় যে ম্যাচের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা হতে যাচ্ছে, সেই ম্যাচ জমল কোথায়! প্রথম ইনিংসে তাসের ঘরের মতো ভেঙে লুটিয়ে ইডেনের গোলাপি আভায় হারিয়ে গেল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল!
কলকাতার ইডেনে ক্রিকেটের জন্য এক ঘটনাবহুল দিন। শুরুতে একসঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখেন বহু লিজেন্ড ক্রিকেটার। ইতিহাসের দ্বিতীয়বার ‘কনকাশন’ পরিবর্ত নেয়া হয় এই ম্যাচে। তাও আবার এক নয়, দুইজনের জন্য। ভারতের হয়ে গোলাপি বলে প্রথম উইকেট নেয়ার সঙ্গে ১২ বছরের ক্যারিয়ারে দেশের মাটিতে প্রথমবার পাঁচ উইকেট নেন ইশান্ত শর্মা। সেইসঙ্গে চতুর্থবারের মতো ভারতীয় পেস বোলাররা প্রতিপক্ষের সব ব্যাটসম্যানকে আউট করেছেন।
ম্যাচের আগে কোটি টাকার প্রশ্ন ছিল টস জিতলে ব্যাটিং না বোলিং? প্রথম দু’ঘণ্টায় কি মাত্রাছাড়া সুইং হতে পারে? গোধূলি আলোর কথা ভেবে রিস্ট স্পিনার খেলানো কি মাস্টারস্ট্রোক হতে পারে?
ইন্দোরে সবুজ উইকেটে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে একরকম বোকামি করেছিলেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। এদিন অবশ্য বিশেষ কয়েনের টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
বিশেষজ্ঞদের মতামত, গোলাপি বলে বাড়তি চকচকে ভাব থাকার জন্য সুইং একটু বেশি হলেও তা ঘণ্টা দুয়েকের বেশি থাকে না। ওই ঘণ্টা দুয়েকই বল নড়বে। এটা উতরে দিতে পারলে পরের দুই সেশনে ব্যাটিং অনেক সহজ হতে পারে। এই কাজ মোটেও ঠিকভাবে করতে পারেনি বাংলাদেশ। পরে যেটা করে দেখান পূজারা-কোহলি-রাহানে।
গোলাপি টেস্টে ব্যাপারটা আরও কিছু কারণে অন্যরকম হয়ে দাঁড়ায়। লোকে জানে না, ব্রেকগুলোর কোনটা লাঞ্চ, কোনটা ডিনার। সন্ধ্যা নামার মুখে গোধূলি আলোয় ব্যাটসম্যানদের বল দেখতে সমস্যা হবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। গৌতম গম্ভীরের মতো অনেকের বক্তব্য, তেমন সময় নাকি রিস্ট স্পিনার বল হাতে ভেল্কি দেখাতে পারে। কথা উঠেছিল ‘শিশির কাঁটা’ নিয়েও।
কিন্তু অনেক হিসেব বা অনুমান তো ক্রিকেটে মেলে না। যেমন আজও মেলেনি। বাংলাদেশের ইনিংস শেষে দেশের এক ক্রীড়া সাংবাদিক যেমন লিখলেন, ‘গোধূলির আগেই অন্ধকার’। আসলেই তাই। গোধূলির কাছে যাওয়ার আগেই তো গোলাপি আভায় বিলীন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ।
দুই দেশের কাছেই আনকোরা বল। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে এমুহূর্তে টেস্টে ক্রিকেটের সচেয়ে শক্তিশালী দলটি। সেই অনভিজ্ঞ বাংলাদেশ দল টসে জিতে নিজেরাই ব্যাট ধরল। আর শুরু থেকেই নড়বড়ে ফর্ম দেখায় টাইগাররা।
ইমরুল কায়েসকে এলবিডব্লিউ করে শুরু করেন ইশান্ত শর্মা। তারপরই শুরু হয় একের পর এক শূন্য রানে ফিরে যাওয়ার পালা। অধিনায়ক মুমিনুল হকের পর, মোহাম্মদ মিঠুন, মুশফিকুর রহিমও শূন্য রানে ফেরেন। ওপেনার সাদমান ইসলাম কিছুটা ধরে খেলছিলেন। কিন্তু উমেশ যাদবের বলে মাত্র ২৯ রানেই ফিরতে হয় তাকে। সবমিলিয়ে ব্যাটসম্যানরা প্রথম দেখা বলটা চিনে ওঠার আগেই শেষ।
এই ম্যাচের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পর থেকে শোরগোলের প্রায় পুরোটাজুড়েই ছিল ভারত। বাংলাদেশ অনেকটা গল্পের পার্শ্ব চরিত্র হয়ে ছিল। সেই আলোচনার মতো ম্যাচের প্রথমদিনটাও একপেশে হয়ে থাকল।