তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬। সর্বশেষ সংশোধন হয় ২০১৩ সালে। আইসিটি আইনটি প্রথম প্রচলন করা হয় ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর। তারপর ২০০৯ সালে আইনের ১৮ ধারায় সংশোধনী আনা হয়। ২০১৩ সালের ২০ আগস্ট অধ্যাদেশের মাধ্যমে এই আইনের বেশ কিছু ধারায় সংশোধনী আনা হয়। শুরু থেকেই এই আইনের ৫৭ ধারা বাক স্বাধীনতার প্রতি হুমকি হয়ে আছে।
অনলাইনে লেখালিখি সংক্রান্ত অভিযোগসমূহকে আমলযোগ্য ও অ-জামিনযোগ্য করায় এ অপরাধে কাউকে গ্রেফতারের জন্য আদালতের কোনো ওয়ারেন্টের প্রয়োজন হবে না, নিরপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত কোন জামিনও মিলবে না, এবং লেখালিখি সংক্রান্ত অভিযোগ যত ক্ষুদ্রই হোক, প্রমাণিত হলে এর সর্বোনিম্ন শাস্তি হবে সাত বছরের জেল এবং অনধিক এক কোটি টাকা জরিমানা।
এই আইনে মানুষজন অভিযোগ দিতে পারে, পুলিশ অভিযোগ নিতে পারে এবং গ্রেফতারের ক্ষমতাও পুলিশের হাতে। অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার এবং এরপর কোন ধরণের শুনানি ছাড়াই জেলে রাখার সম্ভাবনার বিপরীতে মানবাধিকার কিংবা আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান এই অধিকারটুকু কেড়ে নেওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হয়ে গেছে।
আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে- ‘কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েব সাইটে বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানী প্রদান করা হয়, তাহা ইহলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ’।
এটা ঠিক যে ব্লগ, ফেসবুক বা অনলাইন পত্রিকার নামে যা কিছু একটা ছাপিয়ে কাউকে হেনস্তা করা বা দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যাদের উদ্দেশ্যে তাদের প্রতিরোধ করার জন্য আইনি কাঠামো সংশোধন, সঠিক ভাবে তথ্য প্রযুক্তির ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া প্রয়োজন।
কিন্তু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর ৫৭ ধারায় যেভাবে অপরাধের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে তা এই অপরাধ দমনে ভূমিকা রাখবে না।
আইসিটি আইনে মানবাধিকার-সম্পর্কিত বিদ্যমান আইন ও নীতিমালা, বিশেষত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং নাগরিকের মত প্রকাশের অধিকারের হুমকিস্বরূপ বলে মনে করছে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর জোট হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ। আলোচনার মাধ্যমে এ আইনটির প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার আহ্বান জানিয়েছে ফেরামটি।
সংগঠনটি আরো জানিয়েছে চলমান মামলাগুলোর বিচার-প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করার।
গতকাল রোববার ফোরামের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে সই করেন সংগঠনের আহ্বায়ক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল।