গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইটিই) বিভাগ পরিবর্তনের দাবিতে টানা ২৮ দিন আন্দোলনকারী ১৫৮ জন শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে না নেওয়ার কারণে আগামী ২৭ নভেম্বর বুধবার থেকে অনুষ্ঠিতব্য সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা।
গত ১৪ নভেম্বর ফরম পূরণের শেষ দিন থাকলেও কেউ ফরম পূরণ করেননি। ক্ষতির মুখে পড়বেন জেনেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত ইটিই বিভাগের ১৫৮ জন শিক্ষার্থী।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী কামরুল, সাহেব, আদিব, হান্নান, আকাশ ও মুরসালিনসহ একাধিক শিক্ষার্থী বলেছেন, ইইই বিভাগের সিলেবাসের সাথে ইটিই বিভাগের সিলেবাসের ৮০-৯০ ভাগ মিল রয়েছে। তা সত্ত্বেও চাকুরিক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে ইটিই বিভাগের শিক্ষার্থীদের। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) ও পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) কর্তৃক গৃহীত পরীক্ষায় ইটিই বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র কোনো সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়নি। সেজন্য ইইই বিভাগের পাঠ্যসূচি অনুযায়ী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। ইটিই এর বিষয়ভিত্তিক অধিকাংশ চাকরিগুলোতে ইটিই এর গ্রাজুয়েটদের পরিবর্তে ইইই গ্রাজুয়েটদের থেকে আবেদন আহ্বান করে। বিষয়ভিত্তিক বিকল্প হিসেবে ইইই বিভাগকে গুরুত্ব দেয়া হয় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইটিই বিভাগের গুরুত্ব পাওয়ার কথা। এখানেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছি আমরা।
তারা আরও বলেন, বিসিএস পরীক্ষায় ইটিই বিভাগের নির্দিষ্ট কোনো বিষয় কোড নেই। যার ফলে টেকনিক্যাল ক্যাডার পদে ইটিই গ্রাজুয়েটদের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ থাকছে না। বাধ্য হয়েই শুধুমাত্র সাধারণ ক্যাডারে অংশ নিতে হয়। শিক্ষকদের সাথে এ বিষয়ে কথা হলে ইটিই বিভাগের চাকরির বাজারে বর্তমান অবস্থান এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইটিইর বিলুপ্তির বিষয়টি স্বীকার করে বিভাগ পরিবর্তন পূর্বক এই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন শিক্ষকরা। কিন্তু টানা ২৮ দিন পার হয়ে গেলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
অন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণ টেনে তারা বলেন, ইইই এর সিলেবাসের সাথে ইটিই এর সিলেবাসের সঙ্গতি ও সরকারি বেসরকারি সকল চাকরিতে ইটিই গ্রাজুয়েটদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক্স ও কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (এপিইসিই) বিভাগকে ইইই বিভাগে রূপান্তরিত করা হয়েছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইটিই ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসিই বিভাগকে ইইইতে রূপান্তরিত করা হয়। অথচ বশেমুরবিপ্রবিতে ২০১৭ সালে এপিইসিই বিভাগকে ইটিই বিভাগে রূপান্তরিত করা হলেও পাঠ্যসূচিতে এপিইসিই এর সিলেবাস অনেকটাই অনুরূপ রয়েছে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইটিই বিভাগের চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শাহজাহান বলেন, ‘ওরা আমাকে যখন স্মারকলিপি দিয়েছিল তখন ওদের আমি লিখিতভাবে জানিয়েছি যে, এটা একটি মেজর ডিসিশন, আমি এখানে কেবলমাত্র রুটিন দায়িত্বপালন করছি। এতো বড় ডিসিশন দেওয়ার ক্ষমতা আমার নাই। নতুন ভিসি এসেই সিদ্ধান্ত নিবেন এমন কথা বলে তাদের ক্লাসে ফিরে যেতে বলেছি। কিন্ত তারা ক্লাসে ফিরে যাননি।’
উল্লেখ্য গত ২৭ অক্টোবর থেকে একাডেমিক ভবনের শ্রেণিকক্ষের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন ইলেকট্রনিক এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইটিই) বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের সঙ্গে যুক্ত হতে এক দফা দাবি নিয়ে প্রায় ১ মাস ধরে এ আন্দোলন করে আসছেন ইটিই বিভাগের শিক্ষার্থীরা।