গুলশানের কালাচাঁদপুরের একটি ফ্ল্যাট বাড়ির চার তলায় রহস্যজনকভাবে খুন হওয়া দুই গারো মা-মেয়ের হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কুশীলবদের ধরতে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণেই খুন হয়েছে দুই গারো মা-মেয়ে।
মঙ্গলবার বিকাল চারটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে খুন হন মা বেশেথ চিরান (৬৮) ও মেয়ে সুজাতা চিরান (৩৮)। ওই দিন দুপুর আড়াইটার দিকে বেশেথ চিরানের নাতি (বড় মেয়ের ছেলে) সঞ্জীব চিরান শেরপুরের ঝিনাইগাতি থেকে তিন বন্ধুসহ বেড়াতে আসে। ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় দেখা যায় বেশেথ চিরানের নাতি সঞ্জীব চিরান ও তার তিন বন্ধুর বের হবার দৃশ্য। পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করছে। সঞ্জীব চিরানসহ তার বাকি বন্ধুদের আটকের চেষ্টা করছে পুলিশ।
বুধবার সকাল সাড়ে নয়’টায় গুলশান থানায় নিহত সুজাতা চিরানের স্বামী আশীষ মানকিন অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ২৫।
বুধবার সরেজমিনে কালাচাঁদপুরের বাসায় গিয়ে দেখা মূল ফটক বন্ধ পাওয়া যায়, পরে মূল ফটকে আসেন বাড়িটির দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা আব্দুল আজিজ। তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, কাল দুপুর থেকেই বাসায় পানির সমস্যা ছিল, সামনের মোড় থেকে আমি পানি আনাতে ব্যস্ত ছিলাম। সন্ধ্যার দিকে বাসায় আসলে বেশেথের মেয়ের জামাই শিশু বাচ্চাকে কোলে করে নিয়ে নিচে নামে আর বলে আমার শাশুড়িকে কারা যেন মেরে ফেলেছে।
সুজাতার মেয়ে মায়াবী চিরানের স্বামী প্যালেস্টার দারিং প্রথমে বাসায় গিয়ে লাশ দেখতে পান। তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমি বারিধারার একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে বিপণন বিভাগে কাজ করি। সন্ধ্যা ছয়’টার দিকে মায়াবীকে ফোন দিয়ে আমাদের দেড় বছরের কন্যা মানসীর খোঁজ নিই। মায়াবী আামাকে বলে মানসী মায়ের কাছে রয়েছে।এর কিছুক্ষণ পর আমি বাসায় গিয়ে দরজার ছিটকিনি বন্ধ পাই। দরজা খুলে আমার রুমে গেলে মা’র (সুজাতা) গলা কাটা ও পেটে আঘাত করা লাশ খাটের উপর পড়ে থাকতে দেখি। পরক্ষণেই নিজের মেয়ে মানসীর কথা মনে পড়ে, পাশের রুমে খাটের উপর অক্ষত অবস্থায় মানসীকে পাই। ওই রুমের খাটের নিচেই ঘন্টা দেড়েক পর নানীর (বেশেথ চিরান) গলায় কাপড় পেঁচানো নিথর দেহ দেখতে পাই। নিজের শাশুড়ির লাশ দেখার পর মেয়ে মানসীকে নিয়ে নিচে নেমে বাড়ির মালিক সহ এলাকার সবাইকে জানাই।
মঙ্গলবার দুপুরে শেরপুর থেকে আসা বেশেথের বড় মেয়ের ছেলে সঞ্জীব চিরান ও তার বন্ধুদের সঙ্গে বাড়িতে ওই সময় উপস্থিত ছিলেন নিহত সুজাতার মেয়ে মায়াবী নিজেও।
মায়াবী চিরান চ্যানেল অনলাইন বলেন, দুপুরে সঞ্জীব সহ আমরা এক সঙ্গেই খাবার খাই। আমি পাশেই একটি শোরুমে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করি।বিকাল চারটা’র দিকে আমি বের হয়ে যাই। আমাদের কারো সঙ্গেই কোনো শত্রুতা ছিল না।
ছয় তলা বাড়ির প্রতিটি তলায় চারটি করে ইউনিট রয়েছে জানিয়ে বাড়ির মালিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে সুজাতারা আমরা বাসায় চার তলায় থাকত। সুজাতা ও তার স্বামী আশীষ মানকিন বাসা ভাড়া নিয়েছিল। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মাঝে মাঝে সুজাতার মা বেশেথ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থেকে এসে এখানে থাকত।
এলাকাবাসী ও পুলিশের ধারণা, পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণেই খুন হয়েছে দুই গারো মা-মেয়ে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন কয়েকদিন ধরেই খুব উচ্চ স্বরে ঝগড়া চলতো ওই বাড়িতে।
স্থানীয় শিক্ষক বাঁধন চিরান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, তাদের কারো সঙ্গে কখনো দ্বন্দ্ব ছিল না, সঞ্জীবের বাসা থেকে বের হবার পরই বাসায় লাশ উদ্ধার হয়। সঞ্জীবকে আটক করতে পারলেই বোধ হয় সব রহস্য বের হয়ে আসবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সঞ্জীব ও তার বন্ধুদের আটকের চেষ্টা চলছে, পরিবারিক দ্বন্দ্ব সহ বিভিন্ন বিষয় আমাদের নজরজারিতে রয়েছে, ঘটনাটি তদন্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। তদন্ত শেষ হলেই বলা যাবে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা ছিল, কী কারণে হত্যা করা হয়েছে।
ছবি: পরিবার থেকে ছবিগুলো সংগ্রহ করেছে নাজিম আল শমষের