ব্যক্তিগত কারণে ২০১৭ সালে দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘শিরোনামহীন’ ছেড়ে সে বছরই ‘আভাস’ নামে নতুন ব্যান্ড গড়েন তানযীর তুহীন। দল ছেড়ে গেলেও গান ছাড়েননি তিনি। আভাসের মৌলিক গানের পাশাপাশি শ্রোতা-দর্শকের সামনে শিরোনামহীনের গানগুলোও পরিবেশন করে যাচ্ছিলেন তুহীন। আর এটা নিয়েই শিরোনামহীনের সঙ্গে তার দ্বন্দ্বের শুরু। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি গড়ায় আদালতে।
শুরুতে ব্যান্ডদল শিরোনামহীন ৪৯টি গানের কপিরাইট নিয়ে নিম্ন আদালতে একটি মামলা (টাইটেল স্যুট) করেন। যে মামলায় ৩৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং গানগুলো অন্য কেউ যাতে পরিবেশন করতে না পারে সে ব্যাপারে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করা হয়। পরবর্তীতে নিম্ন আদালত শিরোনামহীনের গান অন্য কেউ পরিবেশনের ক্ষেত্রে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি সিভিল রিভিশন করেন ‘আভাস’ ব্যান্ডের তুহীন। সেই রিভিশ আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২০ অক্টোবর বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের হাইকোর্ট বেঞ্চ নিম্ন আদালতের দেওয়া (শিরোনামহীনের গান অন্য কেউ পরিবেশন করতে পারবে না) অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন এবং এ বিষয়ে রুল জারি করেন।
আর সে রুলের শুনানি নিয়ে গত সোমবার (২০ জানুয়ারি) বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলটি নিস্পত্তি করে হাইকোর্টের দেয়া আগের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশটি বাতিল (ভ্যাকেট) করে দেন।
সেই সাথে এই আদেশের কপি পাওয়ার ৭ দিনের মধ্য নিম্ন আদালতকে শিরোনামহীনের গান অন্য কেউ পরিবেশনের ক্ষেত্রে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার প্রথম আবেদনটি নিস্পত্তি করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং ওই ৭ দিন বিষয়টির ওপর (স্ট্যাটাসকো) স্থিতিবস্থা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দুই পক্ষই (শিরোনামহীন ও তুহীন) হাইকোর্টের সেই আদেশের কপি হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন বলে চ্যানেল আই অনলাইনকে জানিয়েছেন তাদের আইনজীবীরা।
তুহীনের পক্ষে এই মামলায় লড়ছেন অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান। মঙ্গলবার বিকেলে চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, শিরোনামহীনের মামলাটা হয়েছে ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে। ফলে তাদের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার প্রথম আবেদনটি নিস্পত্তির বিষয়টিও ওখানেই ডিসাইড হবে। হাইকোর্টের লিখিত আদেশ পাওয়ার পর স্থিতবস্থা (স্ট্যাটাসকো) মেনেই আমরা আমাদের মতো প্রস্তুতি নিচ্ছি।
হাইকোর্টের এই আদেশের ফলে ‘আভাস’ ব্যান্ডদলের তুহীন ‘শিরোনামহীন’-এর গান পরিবেশন করতে পারবে না বলে জানান শিরোনামহীনের আইনজীবী মো. ইফতাবুল কামাল অয়ন।
তবে তুহীনের পক্ষের আইনজীবী জানালেন, বিভিন্নভাবে তারা (শিরোনামহীনের পক্ষের আইনজীবী) বলছেন মামলার অনমেরিট শুনানি হয়ে গেছে, রায় সমস্ত কিছুই তাদের পক্ষে চলে গেছে। কিন্তু এটা মোটেও ঠিক নয়। এই বিষয়টি আমি (মঙ্গলবার) কোর্টে মেনশন করেছিলাম, তো কোর্ট আমাদের বললেন যে না, এরকম কোন রায় দেয়া হয়নি।
হাইকোর্ট দুই পক্ষকেই ধৈর্য্য ধরতে বলেছেন বলে জানান এই আইনজীবী। তিনি বলেন, গানের কপিরাইটের বিষয়টি কার পক্ষে যাবে, না যাবে সমস্ত কিছু ডিসাইড হবে ডিস্ট্রিক্ট জজ কোর্টে।
এদিকে তানযীর তুহীনের জন্য রায় পক্ষে নেয়া কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেছেন লাইসেন্স অব কালেক্টিং সোসাইটি ফর সিনেমাটোগ্রাফ ফিল্ম (এলসিএসসিএফ)-এর চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার ওলোরা আফরিন। যিনি দেশে প্রথমবারের মত আইনি সহায়ক হিসেবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় অধিনস্থ কপিরাইট অফিসে নিয়োগপ্রাপ্ত।
ব্যারিস্টার ওলোরা বলেন, কপিরাইট অফিস, এটর্নি জেনারেল, এবং এন্টি-করাপশনের আইনজীবী খুরশীদ আলমের মতোন মানুষেরা যখন এই মামলাটি রিপ্রেজেন্ট করেন, তখন কোর্ট কিন্তু বিষয়টি খুব সিরিয়াসলি দেখেন।
ডিস্ট্রিক জজ কোর্টের রায় শিরোনামহীনের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি দেখছেন ওলোরা। তবে রায়টি শিরোনামহীনে পক্ষে গেলেও আপিল ডিভিশন থেকে পুনরায় স্টে অর্ডার নিতে পারবেন তুহীন। তবে সেটা আইনীভাবে কতোটুকু টিকবে তা নিয়েও সন্দিহান এই ব্যারিস্টার।