দুইবার গানের রিয়্যালিটি শো ‘ক্লোজআপ ওয়ান’-এ অংশ নিয়েছিলেন অবন্তী সিঁথি। চূড়ান্ত পর্বের আগেই ছিটকে পড়েন। সর্বশেষ কলকাতার জি বাংলার রিয়েলিটি শো সারেগামাপার মঞ্চে শেষ ১৪-তে লড়ে দুই বাংলাতেই সমাদৃত ছড়িয়েছিলেন সিঁথি। আগস্টে মিজানুর রহমান আরিয়ানের ওয়েব ফিল্ম ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’তে সিঁথির গাওয়া গান ‘রূপকথার জগতে’ ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। গান বাজনা, অতীত সময়, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে অবন্তী সিঁথি কথা বললেন চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে…
দীপাবলিতে আপনার ‘আদ্যা স্তোত্র’ প্রকাশ পেয়েছে। এ ধরনের গান কেন করলেন?
কাজটি শুধু বাংলাদেশ নয়, এর আগে কোথাও এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। এমন সুর ছন্দ তালে কেউ তুলে ধরেনি। সংস্কৃত ভাষায় গানটি করা আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। খুব ভালো লাগছে এমন একটি কাজের সঙ্গে জড়িত থেকে। মিঠুন দাদা যখন বললেন আমি খুব উৎসাহ নিয়ে কাজটি করেছি। প্রকাশের পর দর্শকদের কাছ থেকে শুনছি, সুন্দর একটি কাজ হয়েছে। শুরুতে ভেবেছিলাম বেশী মানুষের কাছে পৌঁছুবে না। মানুষ এই ভাষার সঙ্গে রিলেট করতে পারবে না। কিন্তু মিউজিক্যালি অনেক মানুষকে গানটি কানেক্ট করতে পেরেছে। দীপাবলির দিন দেখলাম মানুষ গানটি নিয়ে চর্চা করছেন।
এর কিছুদিন আগে লুৎফর হাসানের সঙ্গে ‘কেমন আছো বন্ধু তুমি’ গানটি করে অভিজ্ঞতা কেমন?গানটি ধীরে ধীরে মানুষের কাছে যাচ্ছে। এটি টিকে যাওয়ার মতো গান। অনেকদিন পর্যন্ত মানুষ শুনবে। আগে লুৎফর ভাইয়ার লেখা-সুরে গান করেছি। এই প্রথম তার সঙ্গে দ্বৈতভাবে গাইলাম। উনি হয়তো প্রফেশনাল গায়ক নন বা গান তেমনভাবে শেখেন নাই। কিন্তু ভেতরে যেটা ফিল করেন বের করার চেষ্টা করেন। ওনার লেখার হাত অসাধারণ। আমি তার লেখার ভক্ত। আরেকটা গুণ হচ্ছে নতুনদের উনি ভালো কাজকে ভালো বলেন। এটা নতুনদের জন্য অনুপ্রেরণার।
‘ক্লোজআপ ওয়ান’ ও সা-রে-গা-মা থেকে যা শিখেছেন সেই শিক্ষা এখন কাজে দিচ্ছে?
২০০৬ সালে প্রথম ‘ক্লোজআপ ওয়ান’-এ অংশ নিয়েছিলাম। তখন ৫৫তম হয়ে বাদ পড়েছিলাম। পরে ২০১২ তে সেরা ১০-এ আসি। এরপর থেকে গানে নতুন করে কাজ শুরু হয়। বলতে গেলে তখন থেকেই অফিসিয়ালি পথ চলা শুরু। মাঝখানে অনেকটা সময় ধরে আমি শিখেছি। রিয়্যালিটি শোতে যে গ্রুমিং হয় সেটা খুব কাজে আসে। বিভিন্ন ধরনের গান গাওয়ানো হয়। মৌলিক গান গাওয়ার সময় এটা খুব সাহায্য করে। রিয়্যালিটি শোয়ের মাধ্যমে লাইমলাইটে আসা, মানুষের কাছে পৌঁছানো সহজ হয়। রিয়্যালিটি শো না করলে মানুষের কাছে পৌঁছাতে সময় লাগে। ২০১৫ থেকে গানের পাশাপাশি চাকরী করতাম। তখন দুটো সামলানো খুব টাফ ছিল। ২০১৮ সালে এসে আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় গান অথবা চাকরি যে কোনো একটা করতে হবে। গানটাকেই বেছে নেই। এখন মনে হয় খুব খারাপ সিদ্ধান্ত নেইনি।
রিয়্যালিটি শো থেকে বেরিয়ে প্রতিযোগীরা মৌলিক গানের সংকটে ভোগে না? আপনি অনুভব করেছেন?
এটা আমি এখনও ফেইস করি। আমার একটা আফসোস রয়েছে। রিয়্যালিটি শো থেকে আসার পর আইডেন্টিটি ‘কাভার সিঙ্গার’ হয়ে যায়। গত তিন বছরে মৌলিক গানের সংখ্যা আমার প্রায় ১০০ এর কাছাকাছি। কয়টা গান মানুষ শুনেছে? কিছুদিন আগে রূপকথার জগতে গানটি মানুষের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। তবে আমি বিশ্বাস করি কাজ করে যেতে হবে। হয়তো মানুষ একটি পিক করবে।
অডিও গান কমে গেছে। প্লে-ব্যাক করছেন না?
অডিও গান হচ্ছে তো। কিন্তু মানুষের কাছে কেন পৌঁছাচ্ছে না? আমার ধারণা, ভাইরাল হওয়া গানের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশী। তার মানে এই নয় যে ভালো গান হচ্ছে না। আর সিনেমার গানে আমার ফ্যাসিনেশন সবসময় বেশী। অনেককিছু ইমাজিন করে গান করা যায়। সামনে ‘নিটোল প্রেমের গল্প’ নামে একটি গান করছি। ভয়েস দিয়েছি। এবারও আরিয়ান ভাই, ভাই সোমেশ্বর অলি ভাইয়ের লেখা এবং সুর সংগীত সাজিদ সরকারের। এই মানুষগুলোর কেমিস্ট্রিটা অনেক সুন্দর। তারা যখনই কিছু করে একটা ম্যাজিক বেরিয়ে আসে। আমার সঙ্গে মাহতিম সাকিব গেয়েছেন।
রূপকথার জগতে এতো জনপ্রিয়তা পাবে ভেবেছিলেন?
গানে ভয়েস দেয়ার আগে আমি খুব হতাশ ছিলাম। অনেক গান করছিলাম কিন্তু মানুষ সেইভাবে নিচ্ছে না। বই পড়তে পড়তে সাজিদ সরকার ভাইয়ের স্টুডিওতে রেকর্ডিং করতে গিয়েছিলাম। তাকে বলেছিলাম, গান বাজনা ছেড়ে দেব। আবার চাকরি করবো। পরে গানটি প্রকাশের পর অনেক মানুষ গ্রহণ করেছে। বলতে গেলে এটাই আমার প্রথম মৌলিক হিট গান। আমার মৌলিক গান এতো মানুষের পছন্দ করলো এটাই পাওয়া। এর আগেও অনেক মানুষ আমার গান পছন্দ করেছে কিন্তু সেগুলো মৌলিক গান ছিল না।
যতদূর জানি চাকরি বলতে আপনি শিক্ষকতা করতেন। এখন কি পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছেন?
হ্যাঁ আমি এখন পুরোপুরি গান নিয়ে আছি। শিক্ষকতা করছি না। তিন বছর শিক্ষকতা করেছি সোনারগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেসরকারি) কেমিস্ট্রি পড়িয়েছি। গান জিনিসটা সিরিয়াস জিনিস। সাধনা করতে হয়। আর সাধনা করতে হলে অনেক সময় দিতে হয়। সারেগামাতে গিয়ে প্রথম ফিল করি। পরে সিরিয়াস হয়ে গানকে বেছে নিয়েছি। এখনও পর্যন্ত মনে হচ্ছে গান বেছে নিয়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বিয়ে করবেন কবে? কোনো ভাবনা আছে?
এই দায়িত্ব পরিবারের উপর ছেড়ে দিয়েছি। আমি আমার কাজটা করে যেতে চাই। আমার কাজটা সাপোর্ট করবে এমন একটা মানুষ চাই। যতদিন না পাচ্ছি করছি না।