শিক্ষার অগ্রগতির প্রয়োজনেই সময়ে-সময়ে নানা সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এসব সিদ্ধান্তকে মোটাদাগে দু’ভাবে ভাগ করা যায়: রুটিন বা নিয়মিত সিদ্ধান্ত ও নীতিগত সিদ্ধান্ত। শিক্ষার দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা দ্রুত ও কার্যকর করার প্রয়োজনে রুটিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি। তবে যেসব বিষয় শিক্ষার সার্বিক পরিবেশে গভীর প্রভাব ফেলে এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অন্য কার্যক্রমের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত, সেখানে নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়। নীতিগত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও প্রয়োজনানুসারে চটজলদি সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু সেটি খুব সীমিত আকারে থাকাই বাঞ্ছনীয়।
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার আকার অনেক বড়, এবং তা মূলত জনসংখ্যার কারণেই। এ দেশের প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে যতো শিক্ষার্থী রয়েছে, অনেক দেশের মোট জনসংখ্যাই এর চেয়ে কম। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে একসঙ্গে বিবেচনা করলে এবং প্রতিটি স্তরের কার্যপরিধি একত্র করলে প্রাথমিক শিক্ষার কার্যক্রমে বিশাল কর্মযজ্ঞ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। এরকম একটি বড় শিক্ষা ব্যবস্থায় সব নীতিগত সিদ্ধান্ত সময় নিয়ে নেয়া হয় না বা গভীর পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।
বাংলাদেশের সব স্তরের শিক্ষার একটি বড় অসুবিধা হচ্ছে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই এখন পর্যন্ত স্থায়ী ও প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি গড়ে ওঠেনি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে, তার প্রতিষ্ঠিত ও গ্রহণযোগ্য মডেল এখনও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে গত তিন-চার দশকে প্রায়ই নানা পরিবর্তন এসেছে এবং এসব পরিবর্তনের কোনো কোনোটিকে ক্ষতিকর হিসেবেও দেখা গেছে। যেসব পরিবর্তন এসেছে, সেগুলো যে খুব চিন্তাভাবনা করে করা হচ্ছে, তেমনটিও মনে হয় না। একসময় ‘এসো নিজে করি’ নামে একটি হাতেকলমে কাজ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকে ছিলো, যা পরে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। শিখন-শেখানো কার্যাবলী হিসেবে এটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হতে পারতো আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য, কিন্তু বাংলাদেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতা ও বিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় এ-ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয় প্রস্তুত কি না, সেটি বিশ্লেষিত হয়নি।
একইভাবে, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন নিয়ে কিছুদিন পরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। প্রশ্নব্যাংক নামক একটি ক্ষতিকর পদ্ধতি ছিল গত শতকের শেষের দিকে। তারপর গ্রেডিং পদ্ধতি আনা হলো যাকে পরবর্তীতে বড় আকারে সংশোধন করতে হয়। একইভাবে, বিদ্যালয়-ভিত্তিক মূল্যায়ন (স্কুল-বেইজড অ্যাসেসমেন্ট বা এসবিএ), প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা, বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা, জুনিয়র সেকেন্ডারি সার্টিফিকেট ইত্যাদির প্রায় প্রতিটিতেই নিয়মিত কাঁটাছেড়া হচ্ছে। ফলে আমরা এখনও কোনো গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে স্থির হতে পারছি না, যা থেকে আমরা সত্যিকার অর্থেই আমাদের শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা সম্পর্কে ভালোভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হবো। এসব কারণে শিক্ষায় আমাদের প্রচুর সংখ্যাগত অর্জন থাকলেও গুণগত ও মানসম্পন্ন অর্জন সম্পর্কে বারংবার প্রশ্ন ওঠছে।
বেশ কিছুদিন আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নির্দেশ পেলেন প্রতিদিন একটি করে ইংরেজি শব্দ শেখানোর। এভাবে প্রতিদিন একটি করে শব্দ শেখায় শিক্ষার্থীদের ইংরেজি জ্ঞানের উন্নতি হয় কি না, সে-সম্পর্কে গভীর পর্যালোচনা ও গবেষণা না করেই সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা হয়। একইভাবে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সময়সীমা নিয়েও একটি নির্দেশ মাস কয়েক আগে পেয়েছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সেখানে একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কতক্ষণ থাকা প্রয়োজন, শিক্ষকদের দায়িত্ব অনুসারে কর্মঘণ্টা কেমন হওয়া উচিত— এসব নানা বিশ্লেষণ অনুপস্থিত। এখানে প্রাথমিকের উদাহরণ দেয়া হলেও এসব চিত্র মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা উভয়ক্ষেত্রেই বিদ্যমান। মোটাদাগে বলা যায়, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বাংলাদেশের শিক্ষা সেক্টরে নেয়া প্রায় সব সিদ্ধান্তই নেয়া হয় গবেষণা ছাড়া এবং এতে শিক্ষার বড় ক্ষতি হয় যার প্রভাব পড়ে শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সেক্টরেও।
দেশের শিক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নানা বিবেচনায় বড় বড় সিদ্ধান্ত নেন। আগেই বলা হয়েছে, পরিস্থিতর প্রয়োজনে কখনও কখনও খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং সেটি দোষণীয় না-ও হতে পারে। কিন্তু, যেসব সিদ্ধান্তের প্রভাব সুদূরপ্রসারী, সেখানে চটজলদি নেয়া সিদ্ধান্ত বুমেরাং হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে সৃজনশীল প্রশ্নপত্র এবং প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার কথা উল্লেখ করা যায়। একদিকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত না করে সৃজনশীল পদ্ধতির কারণে লেখাপড়া গভীরতা হারিয়েছে, অন্যদিকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত থাকা চারটি পাবলিক পরীক্ষা দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে সার্টিফিকেটমুখী করেছে। বিদ্যালয়, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক— সবাই পরীক্ষাকে যতোটা গুরুত্ব দিচ্ছেন, শিক্ষার্থী কতোটুকু শিখলো, সেটি ততোটা গুরুত্ব পাচ্ছে না।
শিক্ষায় কী পরিবর্তন আসা প্রয়োজন, কেন প্রয়োজন— এসব বিশ্লেষণ প্রতিনিয়তই জরুরি। একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বিকশিত হয় নানা প্রয়োজনে। দেশের চাহিদা, জনমানুষের আকাঙ্ক্ষা, অপরাপর দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা, সক্ষমতা ইত্যাদি নানা প্রপঞ্চ যথাযথভাবে বিশ্লেষণের পর দূর ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন। এসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করে গবেষণা। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ যেখানে গবেষণাকে চূড়ান্ত পর্যায়ে গুরুত্ব দিচ্ছে, বাংলাদেশ সেখানে অনেকটাই পিছিয়ে। গবেষণা যেহেতু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রাধান্য না দিয়ে পদ্ধতিগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাস্তব অবস্থা তুলে ধরার পাশাপাশি যথাযথ কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করে, সেহেতু গবেষণাভিত্তিক সিদ্ধান্তে ক্ষতির মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা যায়। বাংলাদেশের শিক্ষা সেক্টরে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে গবেষণাকে একেবারেই যে ভিত্তি ধরা হচ্ছে না, তা নয়; কিন্তু সেটি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
উদাহরণস্বরূপ এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার কথা বলা যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গিয়ে প্রতি বছর শিক্ষার্থীরা যে-পরিমাণ দুর্ভোগের শিকার হয়, তা অপরিসীম। জনগণেরই একটি আকাঙ্ক্ষা যে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করুক যাতে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ কমানো যায়। নানা সময়ে জনগণের এই আকাঙ্ক্ষাই প্রতিফলিত হয়েছে মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এই দুর্ভোগ কমানোর বিষয়ে আহ্বান জানিয়েছেন একাধিকবার। ফলে, এই দুর্ভোগ নিরসনে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন উদ্যোগ নিয়েছে।
কিন্তু, মিডিয়ায় সমন্বিত পরীক্ষা নামে (পরবর্তীতে গুচ্ছ পরীক্ষা) যে-সমাধানটি এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে, সেটি নিয়েও অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি বড় অংশ বলেছেন, এভাবে দুর্ভোগ কমানো যাবে না; বরং নানা কারণে তা বাড়তেও পারে। নানা আশঙ্কায় দেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের বিরতও রেখেছে। অথচ, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি নিয়ে এই যে এতো বড় একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো, এর পেছনে কোনো গবেষণাভিত্তিক সুপারিশের সন্ধান মেলেনি। সমন্বিত পরীক্ষা বা গুচ্ছ পরীক্ষার মতো সিদ্ধান্ত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি বড় সিদ্ধান্ত। গবেষণা ছাড়া এ-ধরনের বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণ আমাদের গবেষণাহীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সংস্কৃতিকেই প্রকটভাবে প্রকাশিত করে।
তাই বলে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ নিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা কি এখানেই থেমে যাবে? যাওয়া উচিত নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাতন্ত্র্য, উচ্চশিক্ষার দর্শন, উচ্চশিক্ষায় চাহিদা ও প্রয়োজন এবং শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ইত্যাদি নানা বিষয় বিবেচনায় গবেষণার মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার দুর্ভোগের গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করা অবশ্যই সম্ভব। গবেষণার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করা হলে তা সবার কাছেই সমাদৃত হতো।
গবেষণা ছাড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে তা কী ধরনের বড় সমস্যা নিয়ে আসে, তারও অনেক উদাহরণ দেয়া সম্ভব। ১৯৭৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় শিক্ষা ওয়ার্কশপে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি যে ভাষণ দিয়েছিলেন তা গ্রন্থিত রয়েছে ‘নতুন শিক্ষানীতি: রাষ্ট্রপতির চিন্তাভাবনা’য়। সেই ভাষণে এমন অনেক সুপারিশ উপস্থাপিত হয়, যেগুলো চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়িত হলে তা দেশের জন্য ক্ষতিকর হতো। একইভাবে, ১৯৮৩ সালের ২৯ জানুয়ারিতে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ড. আবদুল মজিদ খান ‘শিক্ষা নীতি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জাতির উদ্দেশে টেলিভিশন ভাষণ’ দিয়েছিলেন। তিনি যেসব সিদ্ধান্ত সেসময়ে গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন, সেগুলো এতোটাই ক্ষতিকর ছিল যে, শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হয়। যেকোনো বিষয়েই কারও ব্যক্তিগত ভাবনা রাষ্ট্রের জন্য কতোটুকু গ্রহণযোগ্য, তারও উত্তর খোঁজা প্রয়োজন গবেষণার মাধ্যমে। ড. আবদুল মজিদ খানের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে দেশের উচ্চশিক্ষা সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যেতো। আজকে দেশের যতোটুকু অগ্রগতি আমরা দেখতে পাচ্ছি, থাকতে হতো তার ঢের পেছনে।
জনগণের আকাঙ্ক্ষার মতো দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যারা রয়েছেন, তাদের আকাঙ্ক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বরং তাদের আকাঙ্ক্ষা অনেক বেশি সুস্পষ্ট ও প্রাসঙ্গিক। দেশ পরিচালনার গুরুদায়িত্বে থাকায় তারা অনেক সেক্টরের যৌথচাহিদা একসঙ্গে দেখতে পান। সেসবকে ধারণ করে তারা যখন নীতিনির্ধারণী বিষয়ে বক্তব্য দেন, সেগুলোকে কার্যকর উপায়ে বাস্তবায়নের দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের। তবে, সেসব বিষয় বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ যদি গবেষণার ফলাফলকে গুরুত্ব দেন, সেক্ষেত্রে দেশের নেতৃত্ব ও জনমানুষের আকাঙ্ক্ষা একসঙ্গে কার্যকরভাবে প্রতিফলিত হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের বিষয়টি গবেষণার মাধ্যমে যথাযথভাবে সমাধান করা যেতো, সেক্ষেত্রে মহামান্য রাষ্ট্রপতির আকাঙ্ক্ষা ও শিক্ষার্থীদের চাহিদা দুটোই পূর্ণাঙ্গভাবে পূরণ করা সম্ভব হতো।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর যথাযথভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন। বাংলাদেশে বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে এবং এর ফলে আগামী দিনগুলোতে দেশ একটি ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি যে গুরুত্বারোপ করেছেন, সেটি নিয়ে দ্রুত ও গুরুত্বসহকারে ভাবা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন বলেই দেশের বিদ্যালগুলোতে পরিপত্র দিয়ে বিজ্ঞান শিক্ষার্থী বাড়াতে শুরু করে, তাহলে তা আরও ভয়াবহ হবে। বরং প্রধানমন্ত্রী কী চেয়েছেন, সেটি জেনে বাংলাদেশের আগামী ৫০ বছরের বিজ্ঞান শিক্ষার চাহিদা নিরূপণ করে কীভাবে কার্যকরভাবে বিজ্ঞান শিক্ষাকে উন্নত করা যায়, সেই বিষয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চাইলেই নানাভাবে এসব গবেষণার আয়োজন করতে পারে। যেমন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণা করতে পারে। আবার, দেশের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান প্রতি বছর নিয়মিত গবেষণা-কার্যক্রম পরিচালনা করে। তারাও এসব ক্ষেত্রে জোর ভূমিকা রাখতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) প্রতি বছর গবেষণার ক্ষেত্রে অর্থায়ন করে। কোনো একটি নির্দিষ্ট বছরে প্রতিষ্ঠানটি শুধু মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর গবেষণা প্রস্তাব আহ্বান করতে পারে। এতে গবেষকবৃন্দ বিজ্ঞান শিক্ষার নানা দিক নিয়ে গবেষণা করবেন এবং এসব গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
মোট কথা, গবেষণা ছাড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে সেসব সিদ্ধান্তে দূরদর্শিতার পরিচয় মেলে না। শিক্ষাব্যবস্থার যেকোনো বড় পরিবর্তন যেহেতু খরচসাপেক্ষ, সেহেতু আর্থিক ব্যবস্থাপনার নিরিখে হলেও গবেষণাকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। অপরদিকে, শিক্ষার প্রভাব সব সেক্টরেই দৃশ্যমান হয় একটি নির্দিষ্ট সময় পর। সেক্ষেত্রে বর্তমানে নেয়া সিদ্ধান্ত কতোটুকু সঠিক, তা বুঝে উঠতে বড় সময় পার হয়ে যায় এবং ততোদিনে ক্ষতি থেকে ফেরত আসার সুযোগ থাকে খুব কমই। সব দিক বিবেচনায় শিক্ষার যেকোনো সিদ্ধান্তে গবেষণাকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত; কারণ গবেষণাহীন সিদ্ধান্তে ক্ষতির পরিমাণ বেশি।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।