তুরস্কের সেনাবাহিনীর একটি অংশ দেশটির অভ্যুত্থানের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। সেনা অভ্যুথানের বিরুদ্ধে ইস্তানবুলে সরকারের পক্ষে যে লক্ষ মানুষ পথে নেমে এসেছে সেটা প্রধানত সম্ভব হয়েছে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের দেয়া এক সাক্ষাতকারের কারণে। আর সেকারণেই সেনাবাহিনীরা ব্যর্থ হয়েছেন বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
তিনি তার ফেসবুকে পেজে লিখেছেন, তুরস্কের (চলমান) সেনা অভ্যুথানের বিরুদ্ধে ইস্তানবুলে সরকারের পক্ষে যে লক্ষ মানুষ পথে নেমে এসেছে সেটা প্রধানত সম্ভব হয়েছে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের দেয়া এক সাক্ষাতকারের কারণে; সিএনএন’র তুর্কি ভাষার টেলিভিশন স্টেশনকে তিনি ওই সাক্ষাৎকার দেন যখন প্রায় ধরেই নেয়া হচ্ছিলো যে অভ্যুথান সফল হয়েছে। সেখানেই তিনি সাধারন মানুষকে পথে নামতে ডাক দেন, অনুরোধ করেন বিমান বন্দরে যেতে।
তার সমর্থকরা বিমান বন্দরে যাবার কারণেই এরদোগান ইস্তানবুলে ফিরতে পেরেছেন। তিনি ওই সাক্ষাৎকার দেন আই ফোনের ফেইস টাইমের মাধ্যমে। আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির কারণে চাইলেই তথ্যের প্রবাহের ওপরে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় না এটা আরেকবার প্রমাণিত হল।
কিন্ত এ ঘটনার আরেকদিক হচ্ছে এই যে, একজন কর্তৃত্ববাদী শাসক হিসবে গত বছরগুলোতে এরদোগান গণমাধ্যমের ওপরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন, সাংবাদিকদের ওপরে চালিয়েছেন নির্যাতন।
আলী রিয়াজ আরো লিখেন, মে মাসের গোড়াতে প্রকাশিত এক খবরে দেখা যায় দেশের শীর্ষ স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রতি সপ্তাহেই দুই একবার আদালতে হাজির হতে হয়, একাধিক সাংবাদিক হত্যার ঘটনাও ঘটেছে, দেশের অস্থিতিশীল দক্ষিণ-পুর্বে কুর্দী সাংবাদিকদের পেটানোর বা আটকের ঘটনা ঘটছে অহরহ, বিদেশী সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত লাঞ্ছনার শিকার হন অথবা তাদের জোর করে বের করে দেয়া হয়।
বিরোধীদের মালিকানাধীন গণমাধ্যম জোর করে বা কৌশলে সরকারের সমর্থকদের দখলে তুলে দেয়া হয়েছে। এরদোগানের ভরসা ছিলো সরকারী গণমাধ্যমের ওপরে যারা কেবল তার গুণগানেই ব্যস্ত।
কিন্ত নিয়তির পরিহাস এই যে, তার সবচেয়ে বিপদের দিনে তার সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে দেশে চালু থাকা একটি বিদেশী গণমাধ্যম। আর সে কারণে সেনারা ‘সিএনএন টার্ক’ চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েছিল কিন্তু সিএনএন তার্ক আবার চালু হয়েছে।