বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এখন দেশের গণমাধ্যমের উপর সরাসরি চাপ না থাকলেও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা আছে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে অর্থনৈতিকভাবে চাপে রাখার চেষ্টার কথাও বলেছেন তারা।
গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞদের কাছে প্রশ্ন ছিল: গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, এখন এ দেশের গণমাধ্যমের উপর সরাসরি কোনো চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে না। কিন্তু নানানভাবে গণমাধ্যমের উপর প্রচ্ছন্ন প্রভাব তৈরি করা হচ্ছে।
‘দেখা যাচ্ছে অনেক গণমাধ্যমের বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, আবার কোনো কোনো গণমাধ্যমকে বলা হচ্ছে তাদের টকশোতে অতিথি হিসেবে কারা আসবেন, অতিথি ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। হয়তো কোনো সভা সেমিনারে এই বিষয়ে কথা বলা হচ্ছে না, বা আগের মতো সরাসরি কোনো কথা বলা হচ্ছে না,’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
চ্যানেল আই অনলাইনকে রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, গত বছরের তুলনায় সূচকের দুই ধাপ অগ্রগতি হলেও, ১৪৬ থেকে ১৪৪ এ অবস্থান হলেও গণমাধ্যমে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।
একই কথা বললেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের জার্নালিজম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রধান সজীব সরকার।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কিছু সূচক দিয়ে মাপা হয়। সেই সব সূচকের ভিত্তিতে আমরা এগিয়েছি। কিন্তু যেসব সূচকের ভিত্তিতে এসব অবস্থান নির্ণয় করা হয় সেসবের কোনো উন্নয়ন হয়নি।
তিনি বলেন, অতীতে কয়েকটি চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, এখন সেই পরিস্থিতি নেই। কিন্তু তারপরও গণমাধ্যমগুলোকে ফোন করে বা অন্যভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
‘এমন পরিস্থিতিতে কিছু সাংবাদিক নিজেদের গুটিয়ে নিলেও অনেক দায়িত্বশীল সাংবাদিক নিজেদের কাজ অব্যাহত রেখেছেন,’ বলে মন্তব্য করেন সজীব সরকার।
অবস্থা থেকে উত্তরণে দু’জনই সংসদে গণতন্ত্র আনার কথা বলেছেন।
রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, আমাদের দেশেই এখন গণতন্ত্রের ঘাটতি আছে। আমাদের সংসদেই গণতন্ত্র নেই। সেখানে চেক অ্যান্ড ব্যালান্স নেই। শক্তিশালী বিরোধীদলীয় নেতা নেই। মুখ খুলে বিরোধিতা করার মতো কেউ নেই। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারলে দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও নিশ্চিত হবে।
আর সজীব সরকারের মতে, দেশে গণতন্ত্র ফেরানোর কোনো বিকল্প নেই। যদি সঠিকভাবে নির্বাচন হয় এবং নির্বাচিত সরকার দেশে গণতন্ত্রের চর্চা শুরু করে তাহলে গণমাধ্যম মুক্ত হতে পারবে।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, সরকার এখন দেশের সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে না আসলে গণমাধ্যমের মুক্তি আসবে না।
এবারের বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের প্রতিপাদ্য, তথ্য জানা ও মৌলিক স্বাধীনতা সকলের অধিকার।
সপ্তাহ দুয়েক আগে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ইনডেক্সে ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৪।
তালিকার ১ নম্বরে ফিনল্যান্ড, ভারত ১৩৩ এবং যুক্তরাষ্ট্র ৪১ ও যুক্তরাজ্য ৩৮ নম্বরে। এছাড়া পাকিস্তান ১৪৭, শ্রীলঙ্কা ১৪১, আফগানিস্তান ১২০, নেপাল ১০৫ এবং ভুটানের ৯৪ নম্বরে অবস্থান। চীনের অবস্থান ১৭৬-এ।