এই অর্থবছরে গত ৩ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা, বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৩শ’ ৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। সেই হিসাবে গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ ১৪ হাজার ২শ’ ৮৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা বেড়েছে।
তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, প্রকৃত খেলাপি ঋণ এর চেয়েও অনেক বেশি। কারণ খেলাপির তথ্য গোপন রাখতে ব্যাংকগুলো নানা কৌশল অনুসরণ করে। যেমন, এ সংক্রান্ত মামলায় বারবার স্টে অর্ডার বহাল রাখা, পুনঃতফসিল, পুনর্গঠন এবং ঋণ অবলোপনের মাধ্যমে বড় অংকের খেলাপি ঋণ হিসাবের বাইরে রাখা হয়। এসব কৌশল না করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেড় লাখ কোটি টাকার মতো হতে পারে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক বলে আমাদের মনে হয়েছে।
দেশের অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের প্রধানস্থল ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বাধাগ্রস্ত হয় সন্দেহ নেই। এই অবস্থার মুখে ক্ষমতাসীন সরকারের শেষ অর্থবছরের বাজেট আসছে ৭ জুন, প্রস্তাবিত বাজেট ৩০ জুন পাস হবে। এবারের বাজেটের আকার ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা হতে পারে বলে জানা গেছে। এ বছরের বাজেট ভোটারদের সন্তুষ্টির কথা মাথায় রেখে তৈরি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। গেল কয়েকবছর ধরেই বিদেশী সাহায্যের উপর নির্ভর না করে অভ্যন্তরীণ সম্পদের উপর নির্ভর করে বাজেট তৈরি করে আসছে সরকার। সেসঙ্গে পদ্মাসেতুসহ বিভিন্ন মেগা-বাজেটের প্রকল্পের কারণে বিদেশী মুদ্রার রির্জাভের উপরেও প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
এ অবস্থায় বাজেটের রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হতে পারে এবং পুঁজি-বিনিয়োগের অভাবে স্থানীয়ভাবে ব্যবসায়িক সম্ভাব্য মন্দার কারণে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা। এ ধরণের কোনো পরিস্থিতি হলে তা দেশের জনগণের যেমন ভোগান্তি হবে, তেমনি দেশের চলমান নানা সমস্যার সুযোগ নিতে পারে নানা কূচক্রী মহল।
নানামুখী সমস্যার মধ্যে দিয়ে দেশের অগ্রগতি দৃশ্যমান, কিন্তু তা ধরে রাখতে না পারলে বা স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় না থাকলে অতীত অর্জন বৃথা বলে গণ্য হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি বিষয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নজর দেয়া জরুরি, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকলে গুরুত্ব সহকারে দেখবেন বলে আমাদের আশাবাদ।