জমকালো আয়োজনে দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত যুব গেমসের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, দেশব্যাপী আয়োজিত এই গেমসের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুপ্ত প্রতিভা উদ্ভাসিত হবে এবং খেলাধুলার প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ আরও বাড়বে।’
খেলাধুলার মধ্যে দিয়ে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ‘খেলাধুলার মধ্যে দিয়ে আমরা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ যেমন মোকাবেলা করব। তেমনি মাদকাসক্তি থেকে আমাদের যুব সমাজকে রক্ষা করব।’
জীবন গঠনে খেলাধুলার গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খেলাধুলা একটা মানুষের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারে। সুস্থ-সবল দেহ-মন এবং দেশ ও জাতির প্রতি ভালবাসা তৈরিতে খেলাধুলা একান্তভাবে প্রয়োজন।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন যুব গেমসের সাংগঠনিক কমিটির চেয়ারম্যান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক।
যুব গেমসের বর্ণিল উদ্বোধনীকে ঘিরে বিয়ে বাড়ির সাজ দেয়া হয় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামকে! আলোকসজ্জার সঙ্গে ছিল রং বেরংয়ের ব্যানার-ফেস্টুন।
বিকাল থেকে উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল স্টেডিয়ামের চারিদিকে। সন্ধ্যা ৬টা ৪২মিনিটে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত বেজে ওঠার মধ্য দিয়ে গেমসের চূড়ান্ত পর্বের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শুরু হয়। যুব জাগরণের গেমসে অভিনব পদ্ধতিতে মশাল প্রজ্বলন হতেই বাতাসে উড়েছে কনফেত্তি; তালে তালে মাতেন ক্রীড়াবিদরা।
আনুষ্ঠানিকতার শুরুতেই ছিল অংশগ্রহণকারী ২৬৬০ জন ক্রীড়াবিদের মার্চপাস্ট দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন। বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট বিভাগের তরুণ ক্রীড়াবিদরা মার্চপাস্ট করে মুল মাঠে প্রবেশ করেন, অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রীকে।
মশাল প্রজ্বলন করেন কমনওয়েলথ গেমস ও সাফ গেমসে স্বর্ণজয়ী আসিফ হোসেন খান; তিনি যখন মাঠ প্রদক্ষিণ করছিলেন, আকাশ রঙিন হয়েছে আতশবাজিতে, লেজাররশ্মির তালে বঙ্গবন্ধু সেটডিয়ামের উত্তর প্রান্তে জ্বলে ওঠে মশাল; এটি জ্বলবে আগামী ১৬ মার্চ আসরের পর্দা নামা পর্যন্ত।
ঘণ্টা দেড়েকের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল গেমসের মাস্কট তেজস্বীর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের মাঠ পরিভ্রমণ, গান-নাচ, অংশ নিয়েছেন দেশসেরা গায়ক-নৃত্য শিল্পীরা। মঞ্চ এবং মাঠে ডিসপ্লেতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশের জনপ্রিয় এবং বাংলাদেশ যুব গেমসের বিভিন্ন ডিসিপ্লিন, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু চিত্র ছিল প্রদর্শনীতে। উদ্বোধনী শেষ হয়েছে লেজার শো, পাইরো ও আতশবাজিতে। স্টেডিয়ামের ২টি স্থায়ী জায়ান্টস্ক্রীন ছাড়াও মাঠের মধ্যে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত ৬টি এলইডি বোর্ডে ভাসে অনুষ্ঠানের চিত্র।
২০ কোটি টাকা বাজেটের মহাযজ্ঞে সারা দেশ থেকে প্রায় ২৮ হাজার খেলোয়াড়ের মধ্যে চূড়ান্ত পর্বে খেলবে দুই হাজারের অধিক খেলোয়াড়। প্রতিভাবানদের বের করার জন্য এই আয়োজন।
ফুটবল-হকিসহ ২১টি ডিসিপ্লিনে গত বছরের ১৮ই ডিসেম্বর ভবিষ্যতের ক্রীড়াবিদ খুঁজে বের করার যে কার্যক্রম শুরু হয়েছিল, চূড়ান্ত পর্বের মধ্য দিয়েই তা শেষ হচ্ছে। যাচাই-বাছাইয়ের পর চূড়ান্ত পর্বে ২১টি ডিসিপ্লিনে দু’হাজার ৬৬০ জন ক্রীড়াবিদ অংশ নিচ্ছেন। এই পর্বে ১৫৯টি ইভেন্টে এক হাজার ১১৪টি পদকের জন্য লড়বেন তরুণ ক্রীড়াবিদরা। যার মধ্যে ৩৪২টি করে স্বর্ণ ও রুপা এবং ৪৩২টি ব্রোঞ্জপদক রয়েছে ২১টি ডিসিপ্লিনে।
চূড়ান্ত পর্বের ডিসিপ্লিনগুলো হল- অ্যাথলেটিক্স, সাঁতার, ফুটবল, কাবাডি, বাস্কেটবল, ভলিবল, হ্যান্ডবল, হকি, টেবিল টেনিস, ভারোত্তোলন, কুস্তি, উশু, শুটিং, আর্চারি, ব্যাডমিন্টন, বক্সিং, দাবা, জুডো, কারাতে, তায়কোয়ানডো ও স্কোয়াশ।