একদিন আগেও নির্বাচন নিয়ে কোনো রকম সংলাপে বাসার কথা নাকচ করে দিয়ে আসা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ হঠাৎ করেই এই মুহূর্তে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে সংলাপে বসবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দ্রুত সময়ের মধ্যেই সেই সংলাপ শুরু হবে জানিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই সংলাপের নেতৃত্ব দেবেন। এই সংলাপ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেও হতে পারে।
এই সংলাপে বসতে আওয়ামী লীগের ওপর কোনো চাপ নেই বলে উল্লেখ তিনি আরো বলেছেন, আওয়ামী লীগ কারো কাছে নতিস্বীকার করে না। আর এই সংলাপের জন্য কোনো পূর্বশর্তও নেই। বঙ্গবন্ধু কন্যার দরজার কারও জন্য বন্ধ থাকে না। তাই সংলাপে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
আমরা দেখেছি, একদিন আগে রোববার নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে জাতীয় নির্বাচনসহ ঘোষিত ৭ দফা দাবি ও ১১টি লক্ষ্য সম্বলিত একটি চিঠি আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে লেখেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। সেই চিঠিতে সংলাপের আহ্বান জানানো হয়।
সংলাপের এই খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পরপরই তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বেশিরভাগ মানুষ। তারা আশাবাদ প্রকাশ করে বলছেন, এর মাধ্যমেই নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে যে অাস্থার সংকট তৈরি হয়েছে; তার সমাধান সূত্র মিলবে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ থেকেই নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে বিএনপি-জামায়াত জোট। তাদের বর্জন এবং সহিংসতার মুখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ১৫৪ জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়। সেই সংসদের মেয়াদও আজ শেষ হতে গেল।
কিন্তু পাঁচ বছরে আগের সেই দাবি থেকে সরেনি বিএনপি এবং তাদের মিত্ররা। সম্প্রতি গঠিত ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টেও আছে দলটি। এর আগে গত পাঁচ বছরে অসংখ্যবার বিএনপি সংলাপের জন্য সরকারি দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু তাতে সাড়া দেয়নি আওয়ামী লীগ।
তাই আরেকটি নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে এসে এই সংলাপ প্রস্তাব এবং একদিন পরই তাতে ইতিবাচক সাড়া দেয়ায় বিভিন্ন মহল আশাবাদী হয়ে উঠেছে। তাদের আশা, আলোচনার টেবিল থেকেই সমাধানের একটা পথ বের হয়ে আসবে।
এটা ঠিক দেশের মানুষ কোনো রকম রাজনৈতিক সহিংসতা চায় না। তারা চায় যে কোনো সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান। জনগণের এই চাওয়ার কথা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও ভালো করেই জানেন। তাই আমরা মনে করি, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে জনমনে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে – এই সংলাপের মাধ্যমে তার সমাধান আসবে। খুলে যাবে গণতন্ত্রের সমস্ত রুদ্ধ দ্বার।