কোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে ধারাবাহিক চিকিৎসা না করা হলে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া যেকোনো সময় অন্ধ এবং পঙ্গুত্ব বরণ করে পারেন বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন তার ব্যক্তিগত দুই চিকিৎসক।
শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দল।
চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল কুদ্দুস ২০১৪ সাল থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করে আসছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনিই খালেদা জিয়া অন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
একই সঙ্গে সঠিক চিকিৎসা না দিলে খালেদা জিয়া কারাগারে পঙ্গুত্ব বরণ করতে পারেন বলে জানিয়েছেন তার আরেক চিকিৎসক ডা. ওয়াহিদুর রহমান।
চক্ষু বিশেষজ্ঞ কুদ্দুস বলেন, খালেদা জিয়ার দুই চোখই অপারেশন করা। মানুষের কিছু নিয়মিত অসুখ আছে। যেগুলোর কারণে চোখে সমস্যা হয়। চোখের পানি শুকিয়ে যায়। চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে যায়। প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার পরিবারের যে সদস্যরা সাক্ষাত করেছেন তাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, তার চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে গেছে। এই অবস্থায় একবার যদি কর্নিয়া ড্রাই হয়ে যায় তাহলে কোনো অবস্থাতেই ভালো করা যাবে না। যে কোনো সময় অন্ধ হয়ে যেতে পারেন। এমন অবস্থায় নন স্টপ সার্ভিসের ব্যবস্থা যেখানে আছে সেখানে চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন। তাহলে তার সুচিকিৎসা হবে।
নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. ওয়াহিদুর রহমান বলেন, খালেদা জিয়ার ঘাড়ের নার্ভগুলো চাপা পড়ে গেছে। সারাক্ষণ ব্যথা করে। ঝিনঝিন করে। একটু হাঁটলে হাটু অবস হয়ে যায়। এসব সমস্যায় যে কোন সময় তিনি প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারে।
এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ, অর্থপেডিক বিশেষজ্ঞ ডা. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, প্রফসর ডা. মালিহা রশিদ, প্রফেসর ডা. এম আলী প্রমুখ।
তবে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করাতে বিদেশ যাওয়ার দরকার নেই বলে মতামত দিয়েছে তার চিকিৎসায় সরকার গঠিত মেডিকেল বোর্ড।
গত ৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
পরের দিন বোর্ড প্রধান ডা. শামসুজ্জামান খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, তার ঘাড় ও কোমরের হাড়ে সমস্যা আছে। তবে রক্তের পরীক্ষাগুলো সবকিছু স্বাভাবিক পাওয়া গেছে।
বন্দী হওয়ার পর থেকেই বিএনপি নেতারা বলছেন, কারাগারে সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না খালেদা জিয়া। এই জন্য তাকে দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দী রয়েছেন খালেদা জিয়া। ওইদিন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক আখতারুজ্জামান তাকে একটি দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।
একই মামলায় খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার বিএনপির সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকেও ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।
বিচারিক আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল ও জামিন আবেদন করেন খালেদা জিয়া। আদালত তাকে চার মাসের অর্ন্তবর্তীকালীন জামিন দিলেও অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোয় তিনি মুক্তি পাননি।