কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ডিভিশন বা প্রথম শ্রেণির বন্দীর মর্যাদা পাওয়া না পাওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন সাবেক ডিআইজি (প্রিজন) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি জানিয়েছেন, বিচারাধীন মামলায় আটক আসামি এবং আদালতের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদির জন্য কারাগারে ডিভিশন বা প্রথম শ্রেণির বন্দীর মর্যাদার বিষয়ে ভিন্নতা রয়েছে।
‘বিচারাধীন মামলায় আটক সামাজিক-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে ডিভিশন দেয়া হয়। কিন্তু রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজাপ্রাপ্ত হলে ডিভিশনের জন্য দু’টো পথ খোলা থাকে।’
সাজাপ্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির জন্য ডিভিশন প্রাপ্তির এই দু’টো পথ সম্পর্কে সাবেক এ ডিআইজি (প্রিজন) চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: বিচারাধীন মামলায় কারাগারে থাকা সামাজিক-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে কারাকর্তৃপক্ষ নিজ থেকে ডিভিশন দিতে পারে। কিন্তু যখন কেউ আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর সাজাপ্রাপ্ত ডিভিশন পাবেন কি পাবেন না সেটা আদালত ঠিক করে দেন।
‘যদি কোন কারণে আদালত এটা ঠিক না করে দেন তখন সাজাপ্রাপ্তকে কিংবা তার আইনজীবীকে ডিভিশনের জন্য কারাকর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হয়। কারাকর্তৃপক্ষ এই আবেদন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে পাঠায় এবং মন্ত্রণালয় ডিভিশনের দেয়া না দেয়ার সিদ্ধান্ত দেয়।’
সাজা প্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিভিশন না দেয়া নিয়ে সৃষ্ট ধোঁয়াশা দূর করে তিনি বলেন: গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ৮ ফেব্রুয়ারি দেয়া আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত খালেদা জিয়ার ব্যাপারে জেলকোড মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। আদালতের আদেশে সরাসরি তাকে ডিভিশন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলে কারাকর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশই পালন করতো।
খালেদা জিয়াকে সাধারণ বন্দীর মতো রাখার বিষয়ে শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি অফিসিয়ালি ডিভিশন দেয়ার আগে তাকে সাধারণ বন্দির মতো রাখা হয়নি। উনি খাট-বিছানা-মশারি পেয়েছেন। কারাগারে প্রবেশের পর থেকে তাকে মর্যাদা অনুযায়ী সাধ্যমত দিয়েছে কারাকর্তৃপক্ষ। পুরোনো কারাগার কয়েক মাস খালি পড়েছিল। এখানে যেহেতু মানুষ ছিল না তাই স্বাভাবিক বসবাসের পরিবেশ ফিরতে সময় লাগতে পারে।
রোববার সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপারসনকে জেলকোড অনুযায়ী ডিভিশন দিতে কারাকর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন আদালত। সাজাপ্রাপ্ত খালেদার আইনজীবীদের করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক আখতারুজ্জামান এ আদেশ দেন।
এ বিষয়ে বর্তমান কারা মহাপরিদর্শক (আইজি) সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন সাংবাদিকদের জানান, আদালতের আদেশের কপি পাওয়ার পরেই তা বাস্তবায়ন করা হবে।
জেলকোডের অধ্যায় ২৭, রুল ৯১০(১) অনুযায়ী রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের কারাগারে ডিভিশন (প্রথম শ্রেণির মর্যাদা) দেওয়া হয়। তবে আদালতের নির্দেশে কাউকে কাউকে ডিভিশন দেওয়া হয়। ডিভিশন পেলে একজন হাজতি পছন্দের খাবার, বিছানা, দৈনিক পত্রিকা, চেয়ার-টেবিল, ড্রেসিং টেবিল, পছন্দের চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসার সুবিধা পেয়ে থাকেন।
এছাড়া প্রথম শ্রেণির মর্যাদাসম্পন্ন বন্দী হিসেবে ১৫ দিনের পরিবর্তে ৭ দিনে একবার চিঠি লেখার সুযোগ পাবেন।
একজন ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দী সকালে ৮৭ গ্রাম আটার রুটি ও ৮৭ গ্রাম ডাল-সবজি পান। দুপুর ও রাতে ৪৯৫ গ্রাম সরু চালের ভাত, ২১৮ গ্রাম মাছ-মাংস এবং সারাদিনে প্রায় ১৪৫ গ্রাম ডাল পান।
তেল, লবণ, মরিচসহ সব মিলিয়ে তিন বেলা খাবার বাবদ একজন ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দীর জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ হয় ১১৫ টাকা।
ভিআইপি বন্দীরা কারা ক্যান্টিন থেকে বাড়তি খাবার সংগ্রহ করতে পারেন এবং বন্দীদের স্বজনরা সাক্ষাতের সময় শুকনো খাবার ও ফলমূল নিয়ে যেতে পারবেন। এর বাইরেও প্রয়োজনে প্রিজন ক্যান্টিনের (পিসির) মাধ্যমে কারাগারে বন্দীর নামে টাকা পাঠানোর রীতি চালু রয়েছে।