শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের কারণে জনগণের ক্ষোভ এখন তুঙ্গে। ঋণের ভারে জর্জরিত দেশটিতে দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য ও তেল সংকট। এমন সংকটে দেশটির জনগণকে জটিল এক পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে দিন পার করতে হচ্ছে।
সেখানে দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না সেখানে। দেখা দিয়েছে ওষুধের সংকটও। চিকিৎসকরা বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শিগগিরই ভেঙ্গে পড়বে।
পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ, তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। উভয় ব্যাংকই এখন পর্যন্ত স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণের ওপর ভর করে কোনোমতে টিকে আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মোট বৈদেশিক ঋণ সমন্বয় করলে তার ঋণাত্মক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৩২০ কোটি ডলার। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট ঋণাত্মক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৮০ কোটি ডলার।
এমন অবস্থায় গত শুক্রবার দেশটিতে জারি করা হয় জরুরি অবস্থা। মঙ্গলবার গভীর রাতে এক বিজ্ঞপ্তির মধ্য দিয়ে এই জরুরি অবস্থা তুলে নেয়ার কথা জানান রাজাপাকসে।
![](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2024/02/Channeliadds-Reneta-16-04-2024.gif?fit=300%2C250&ssl=1)
এতে তিনি বলেন, আমি শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে ৫ই এপ্রিল মধ্যরাত থেকে জরুরি অবস্থা বাতিল ঘোষণা করছি। রাজনৈতিকভাবে রাজাপাকসের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
তবে তিনি তার ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসেকে সরিয়ে শ্রীলঙ্কায় নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে পারেন। কিংবা ২০২৫ সালে যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল তা এগিয়ে নিয়ে আসতে পারেন।
শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা বাতিল করার ফলে মঙ্গলবার রাতেই ক্ষমতাসীন জোট থেকে সরে দাঁড়ান ৪১ জন আইনপ্রণেতা। এরফলে পার্লামেন্টে আর সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই রাজাপাকসের। এরমধ্যে নতুন ধাক্কা হিসেবে পদত্যাগ করেছেন সদ্য নিয়োগ পাওয়া অর্থমন্ত্রী আলি সাবরি। তিনি মাত্র একদিন অফিস করেছেন। সামনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ থেকে ঋণের বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পূর্বে তিনি পদত্যাগ করলেন।
এরই মাঝে আজ সংসদে পুনরায় বৈঠকে বসছে। গতকাল শ্রীলঙ্কা রাষ্ট্রপতি ‘ঐক্য সরকার’ গঠনের আহ্বান জানালেও বিরোধীরা তৎক্ষণাৎ তা নাকচ করে দেয়। আসলে দেশের গোটা মন্ত্রিসভার ইস্তফার পরে তাদেরও পদত্যাগ যে সময়ের অপেক্ষা, তা বুঝতে পেরেই নড়েচড়ে বসেছে দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি।
পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতিকে বলতে শোনা যায়, তিনি সংসদে যেকোন দলের হাতে সরকার হস্তান্তর করতে প্রস্তুত রয়েছেন, যদি সেই দল ১১৭ টি আসন ধরে রাখতে সক্ষম হয়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
শ্রীলঙ্কায় যেখানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ঊর্ধ্বমুখী এবং মানুষের জীবনে অন্ধকার ক্রমশ গ্রাস করছে, সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সমগ্র মন্ত্রিসভার পদত্যাগ শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীকে এক নতুন সুযোগ করে দিয়েছে।
কারণ বর্তমানে মন্ত্রিসভায় আসন ভরানোর জন্য তিনি নতুন মুখ নিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন; ফলে তার এই কৌশল মানুষের মধ্যে ক্ষোভের নিরাময় ঘটাতে পারে কিনা, সে দিকেই তাকিয়ে সকলে। এছাড়াও শোনা যাচ্ছে, শাসক জোট দেশবাসীর বিপুল সংখ্যক জনমত নিয়ে ক্ষমতায় আসলেও বর্তমানে সেই জোটের ভাগীদারদের মধ্যে বেশ কিছু দল এককভাবে সংসদে বসার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে যে তারা শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নগুলিকে ‘খুব নিবিড়ভাবে’ পর্যবেক্ষণ করছে কারণ কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে দ্বীপ দেশটিতে জনগণের অস্থিরতা বাড়ছে।