চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

খাদ্যে ভেজাল: অ্যাকশনের বিষয়ে যা বললেন এফবিসিসিআই সভাপতি

ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নতুন সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। তিনি বিদায়ী কমিটিতে জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এফবিসিসিআইয়ের ২২তম সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছেলে।

গোপালগঞ্জ চেম্বারের প্রতিনিধি ফাহিম এফবিসিসিআই সভাপতির দায়িত্বে সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের স্থলাভিষিক্ত হন। মাল্টিডিসিপ্লিন প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ও ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকিউরমেন্ট কোম্পানি অবসিডিয়ান বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফাহিম ইউরো পেট্রো প্রডাক্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের নির্বাহী কমিটিরও সদস্য তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট এডওয়ার্ড ইউনিভার্সিটি ইন অস্টিন থেকে লিবারেল আটর্স ইন পলিটিক্যাল ইকোনোমিতে স্নাতক করা শেখ ফজলে ফাহিম মাস্টার্স করেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কনফেডারেশন অব এশিয়া প্যাসেফিক চেম্বারস অব কামার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতাও তার রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের চলমান ব্যবসা বাণিজ্যের নানা গতি প্রকৃতি নিয়ে কথা বলেন শেখ ফজলে ফাহিম।

প্রশ্ন: ভেজাল পণ্যে ভেজাল বাণিজ্য রমজানের সময়ে বেড়ে যায়। এই অবস্থা থেকে আমরা কিভাবে বেরিয়ে আসতে পারি?
শেখ ফজলে ফাহিম: ফুড অ্যাডালটারেশন অথবা ভেজাল একটি অ্যাক্ট অব ক্রাইম। এটাকে শক্তভাবে হ্যান্ডেল করা দরকার। কারণ এতে অ্যাফেক্টেড কোন একটি শ্রেণী না। বাংলাদেশের প্রতিটি শ্রেণী প্রতিটি নাগরিক, আমাদের সন্তান, ভাইবোন আত্মীয় স্বজন সবাই এর ভুক্তভোগী। এটাকে আমরা ব্যবসা হিসেবে দেখছি না।এটি বেসিক্যালি ক্রিমিনাল অ্যাক্ট। যে কোন ক্রিমিনাল অ্যাক্টকে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

প্রশ্ন: কিন্তু ভেজালকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না- কেন?
শেখ ফজলে ফাহিম: এটি কোনো সিজন্যাল বিষয় না। রেগুলেটরি ইস্যু সারা বছর জুড়ে প্র্যাকটিস করা দরকার। নিউজ রিপোটিংয়ে এটি প্রাধান্য অনেক বেশি পাচ্ছে এখন। পলিটিক্যাল ইন্সটিবিলিটি বাংলাদেশে হয়তো কম। নতুন নতুন অনেক জিনিসের উপরে আমরা ফোকাসড হচ্ছি টার্মস অব সোশ্যাল ইস্যু। কিন্তু আমরা এফবিসিসিআই থেকে যেটা করেছি- কেমিক্যাল নিয়ে যে আলোচনা খাবারে পাওয়া গেছে- রেসপেকটিভ টেক্সটাইল বা কেমিক্যাল যারা আমদানী করে তাদের সাথে আমাদের টীম বসেছিল। তাদের কাছ থেকে আমরা বুঝতে চেষ্টা করেছি যে, বিষয়টা কী? কিভাবে টেক্সটাইল কেমিক্যাল খাদ্যে যাচ্ছে? এখানে কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আমরা পাইনি। এখানে এসেছে যে, রেগুলেটরি যে বডিগুলো আছে তাদের হয়তো বা লোকবলে সমস্যা আছে- এটি আমরা জানতে পারলাম। এই ধরণের প্রসেস স্ট্যান্ডাইজেশন খুবই প্রয়োজন। কারণ গ্লোবাল ভ্যালু চেইনে যদি বাংলাদেশকে নিতে চান তাহলে গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডে আসতে হবে।

প্রশ্ন: কেন রমজান মাস এলেই শুধু ভেজালের বিষয় সামনে চলে আসে?
শেখ ফজলে ফাহিম: এর উত্তর আসলে আমার কাছে নেই। এটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যারা আছে রেসপেকটিভ সেক্টরের সাথে- তারা হয়তো এর বেটার উত্তর দিতে পারবে। এফবিসিসিআই কোনো রেগুলেটরি বডি না। এটি এডভোকেসি বডি বলতে পারেন। আমরা কাজ করি পলিসিগত পাবলিক এবং প্রাইভেটের ব্রিজ তৈরীতে ।

প্রশ্ন: কিন্তু আপনারা তো প্রতিনিধি- সেই জায়গা থেকে কোনো উদ্যোগ নেবেন কি?
শেখ ফজলে ফাহিম: এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এফবিসিসিআই প্রতিনিধি না, সদস্যও না। আমাদের সদস্য হলো- ট্রেড এসোসিয়েশন। যারা তেল তৈরী করেন তাদের যে এসোসিয়েশন তারা আমাদের সদস্য অথবা যারা কেমিক্যাল ইম্পোর্ট করেন তাদের সাথে আমরা কথা বলেছি যে, এই বিষয়গুলো কী এবং কী কারণে হচ্ছে এবং তা কিভাবে অ্যাড্রেস করা যায়? সেইভাবে আমরা এগিয়ে চলেছি এবং আমরা যে ফাইন্ডিং পাবো তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো যে, কিভাবে তা অ্যাড্রেস করতে পারি? ইন্ডাস্ট্রি মিনিস্ট্রির সাথে অলরেডি কথা হয়েছে। পাবলিক সেক্টর এবং অন্যান্য কাষ্টমস দেখে সুপারিশ করার সুযোগ আমাদের আছে। ভেজালের বিরুদ্ধে রেগুলেটরি অ্যাকশনের ম্যান্ডেড এফবিসিসিআই এর নেই।

প্রশ্ন: দুগ্ধ জাতীয় এবং শিশু পণ্যের অধিকাংশেই ভেজালের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি। কেন আমরা এসব জায়গায় শক্ত হতে পারছি না? দুগ্ধ জাতীয় পণ্যে অধিমাত্রায় সীসার উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে?
শেখ ফজলে ফাহিম: লেদ যখন আমরা আমদানি হয় তখন কোন উদ্দেশ্যে আমদানি হচ্ছে? কোন ইন্ডাষ্ট্রিতে যাচ্ছে তা আমদানি পর্যায়ে মূল্যায়ন করার কথা। ধরেন, বাংলাদেশে লেদের ডিমান্ড যদি ১ হাজার টন থাকে সেই ক্ষেত্রে যদি ২ হাজার টন আসে তাহলে কেন আসছে তা প্রডাক্ট ঢোকার সময়ে এটির মূল্যায়ন থাকার কথা। এই ক্ষেত্রে ওয়ান স্টপ প্রডাক্ট ইন ওয়ান সাইট। তারপরে এটি কিভাবে কোথায় যাচ্ছে তা ট্রাক করার মেকানিজম আমাদের আছে বলে জানা নেই। সেই কারণেই আমরা বলছি আমাদের ট্রেড এসোসিয়েশন যারা আছে এই রিলেটেড তাদের সাথে আলোচনা করেছি ইন্ডাস্ট্রি মিনিস্ট্রির সাথে আলোচনা করেছি এবং পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট যে সকল কর্তৃপক্ষ আছে তাদের সাথেও কথা বলবো এবং আমাদের সুপারিশ পেশ করবো।

প্রশ্ন: আমাদের দেশে অত্যন্ত উচ্চমানের পোশাক রয়েছে। কিন্তু তারপরেও ঈদের সময়ে দেখা যায় বিদেশী পণ্যে বাজার সয়লাব। এই প্রবণতা কিভাবে ঠেকানো যায়?
শেখ ফজলে ফাহিম: আমাদের লাইফ স্টাইল ব্র্যান্ড গেলো কয়েক বছর অনেকগুলো এসেছে। ফার্ষ্ট জেনারেশনে ক্যাটস আই। পরবর্তীতে অনেকেই এসেছে ঢাকা শহরে আমরা দেখতে পাই অথবা অনেক জেলায় গেলে দেখা যায়। আমরা সেকেন্ড লার্জেস্ট গার্মেন্টস ম্যানুফ্রাকচারার কিন্তু আমাদের প্রডাক্ট দিয়ে না। বাংলাদেশ কিন্তু জাপানের মত। কাঁচামাল এখানে নেই। কাঁচামাল এনে প্রডাক্ট ফিনিসড করে এক্সপোর্ট করা হয়। সুতরাং লোকালি গ্লোবাল মার্কেটে যেটি ডিমান্ড তার লোকাল রিসোর্সেস আমাদের নেই।

প্রশ্ন: কিন্তু সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট আমাদের আছে। কিন্তু ভারতে পাকিস্তানের তুলনায় আমাদের ব্র্যান্ড কেন তৈরী হচ্ছে না?
শেখ ফজলে ফাহিম: ম্যানুফ্যাকচারিং আর রিটেইল এটি টোটালি ডিফরেন্ট বল গেইম। সো রিটেইল বিজনেস ইন অ্যাপারেল অথবা লাইফ স্টাইল প্রডাক্টে আর ম্যানফ্যাকচারিং এটি লেভেল গুডস হোক অথবা অ্যাপারেল হোক আমরা যেগুলো তৈরী করি। এটি সম্পুর্ণ ভিন্ন বল গেইম। যারা ধরেন ফার্স্ট সেকেন্ড জেনারেশন অ্যাপারেলে আছে তাদের সেকেন্ড থার্ড জেনারেশন গিয়ে এখন- দে আর লুকিং ইন টু রিটেইল। সুতরাং এটি আমাদের বিশ্বাস যে, এটি যেভাবে শুরু হয়েছে- পাইওনিয়ার কিছু আছে বাংলাদেশে। মে বি ডাইন দ্যা রোড গেলে আরও বেশি দৃশ্যমান হবে।

প্রশ্ন: ঈদের সময়ে প্রচুর পণ্য বাংলাদেশে আসে অবৈধ পথে। এই বিষয় নিয়ে আপনারা কিছু ভাবছেন কি?
শেখ ফজলে ফাহিম: বাংলাদেশের এখন কম্পিটিটিভনেস বাড়ানো প্রয়োজন। ট্যারিফ নন ট্যারিফ এজ দিয়ে ওই কম্পিটিটিভনেস তৈরী হবে না। ইউ হ্যাভ টু ইনক্রিজ ইওর ক্যাপাসিটি। তাই যে প্রডাক্ট আসছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে আমাদের ইফেসিয়েন্সি এবং কম্পিটিটিভনেস বাড়াতে হবে। যেহেতু আমরা প্রডিউস করছি মোস্ট গ্লোবাল ব্র্যান্ডস ইন বাংলাদেশ। আমরা প্রত্যাশা করছি- এখন আমাদের পার ক্যাপিটা ইনকাম উনিশশত দশ টাকা। এটি প্রজেক্ট করা হচ্ছে ২০৩০ সালের ভেতরে স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড বলছে- এটি পাঁচ হাজার সাতশত এর মত হবে। হুইচ উইল বি মোর দ্যান আওয়ার নেবোরিং কান্ট্রি। যখন ওই ধরণের মার্কেট ক্যাপ্টে যাবে তখন আমাদের বিশ্বাস অর্থনীতির কিছু ইনডিজিনিয়াস কিছু প্রডাক্টগুলো যেমন, জামদানী অথবা টাঙ্গাইলের শাড়ী- এই প্রডাক্টগুলো মাস মার্কেটে না গেলেও যেমন আপনি যে ইম্পোর্টেড প্রডাক্টগুলো বলছেন যে, আমাদের রিটেইল ষ্টোরে পাওয়া যায় যা মাস মার্কেটে যাচ্ছে। আমাদের ইনিডিজিনিয়াস যেটা গুড কোয়ালিটি ন্যাচারাল ম্যাটেরিয়াল প্রডাক্টস আছে এই সব ফিনিস মার্কেটের জন্যে হাই ভ্যালু আনবে বলে আমরা মনে করি।

প্রশ্ন: বাংলাদেশে উৎসবকে কেন্দ্র করে বেশি মাত্রায় প্রফিট করার প্রবণতা দেখা যায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে। এর ভুক্তভোগী ক্রেতারা?
শেখ ফজলে ফাহিম: রিটেইল বিজনেস সারা বছর ষ্ট্রাকচারভাবে করা হয় যেগুলো অ্যাডভান্সড ইকনোমি সেই সব দেশে। ওখানে হলিডে সিজনের উপরে বেজ করে ৫০ বা ৩০ পারসেন্ট ডিসকাউন্ট দিয়ে প্রডাক্ট প্রমোশন করা হয়। প্রাইসিংটা স্ট্রাকাচারড করা হয় এইভাবে যে, কনজ্যুমার মনে করছে ৫০ পারসেন্ট একচুয়ালি প্রডিউসার বা রিটেইল পয়েন্টে কিন্তু- দ্যাটস নট দ্যা কেইস। এটি প্রাইস ইঞ্জিনিয়ারিং এর একটি ব্যাপার। আমাদের এখানে তা খুব একটা ইফেক্টিভ না আর কি?

প্রশ্ন: এফবিসিসিআই নিয়ে কি পরিকল্পনা আপনার?
শেখ ফজলে ফাহিম: আমাদের যে ঐতিহ্য আছে তার উপরে বেইজ করে কিছু ফোকাসড প্রকল্প নিয়েছি। যেটা মধ্যম আয়ের দেশ এবং উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের যে জার্নি আমাদের তা কমপ্লিমেন্ট করার জন্যে। তার ভেতরে একটি বাংলাদেশে প্রথমবারের মত। যেহতেু পলিসি অ্যাডভোকেসিতে এবং ষ্টেকহোল্ডার ইনপুটে এফবিসিসিআই যথেষ্ঠ স্ট্রং। তার সাথে আমাদের রিসার্চ উইংকে ইকনোমিক পলিসি রিসার্চ সেন্টার করেছি। এছাড়া আমরা গ্লোবাল অথরিটিতে ট্রেইনড হচ্ছি এখন সায়েন্টিফিক মেথডলজিতে। যে কোন প্রস্তাবনাকে জাষ্টিফাই করার লক্ষ্যে যেই ট্রেনিংটা দরকার বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠানের এখন নেই। সেই ট্রেনিংটা আমরা নিচ্ছি। একই সাথে এই সেন্টারটা পলিসি অ্যাডভোকেসি, রেগুলেটরি ইম্প্যাক্ট, সোশ্যাল ইম্প্যাক্ট, এনভায়রনমেন্টাল ইম্প্যাক্ট এইগুলোকে বিবেচনা করে যে কোন ধরণের পলিসিতে ফোকাসড থাকতে পারবে।