খবরদার মেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করবে না। মনে কর সমাজটা একটা বক্সিং রিং। তোমাকে কেউ ঘুষি মেরেছে মোহাম্মদ আলীর মত হেলে দুলে তুমিও ঘুষি মারো। এক ঘুষিতে বিপক্ষ হয়তো পড়ে যাবে না বিপক্ষ, কিন্তু এক্সপোজ হতে থাকুক। মাথার ওপর একটি পাথর চেপে বসুক। তোমার সাহসের ভারে কুঁজো হতে হতে একদিন উঠে দাঁড়াবার শক্তি হারিয়ে ফেলবে ওরা।
সরব সোশ্যাল মিডিয়ার জামানায় আদিম যুগের ভাইরাস ‘ধর্ষণ’ অচল। তবুও চলছে। মেয়ে তুমিই পারো এই ভাইরাস ধ্বংস করে দিতে। যুগে যুগে হয়ে এসেছে তো কি হয়েছে? সমাজের কোনায় কোনায় ধর্ষক আছে, তাতে কী। তাই বলে ওদের পুষে যেতে হবে? একটা পরিবর্তন আসা দরকার আর সেই পরিবর্তন হলো সামনে এগিয়ে আসা। আড়ালে না থেকে সামনে এসে দাঁড়ানো এটাই আধুনিক যুগের ভিত্তি।
কথার পিঠে কথা বলা, সত্য উচ্চারণ করা এবং অন্যায়কারীকে ভয় না পেয়ে ন্যায্য দাবি তোলা, এটাই আধুনিকতার রূপরেখা। এতটুকু করতে পারলেই সমাজে পরিবর্তন আসবে। হাজার বছর ধরে মানুষ চুপ করে থেকেছে, লুকিয়ে বেঁচেছে, মেনে নিয়েছে। সেই প্রথা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। আধুনিক যুগে তুমি পুরুষকে বলবে কতটা দূরে থাকলে পুরুষ মানুষ হতে পারে না। এই দূরত্ব মেপে দেবে তুমি।
যিনি ইংরেজি অক্ষর চেনেন তার জানা কথা। ‘NO’ মানে না। ‘না’ নেগেটিভ শব্দ না। ‘না’ হলো সবচাইতে পজিটিভ। তুমি পজিটিভ ছিলে কাজেই তোমার পাশে বাংলা ইংরেজি জানা মানুষ পাবে। জর্জ সাহেবেরাও ভাল ইংরেজি জানেন। উকিল মোক্তার কোর্টের চাপরাসি সবাই জানে NO মানে না।
ছোট্ট বেলায় যখন হাটতে শিখেছিলে কেউ বলে দেয়নি কখন বসতে হবে। তুমি দাঁড়াও। যেখানে দাঁড়াবে সেখান থেকে লাইন শুরু। বনিক দেখুক, সোনাদার দেখুক, শাসক দেখুক লাইন কত লম্বা হতে পারে। খবরদার আত্মহত্যার কথা মাথায় আনবে না। আত্মহত্যা আদিম বিধান, তুমি মোটেও আদিম হবে না। নিজের লড়াই নিজকেই করতে হয়। কেউ পাশে থাকুক কিংবা না থাকুক। মরে গিয়ে বাঁচা যায় না, বাঁচতে বাঁচতে মরা ভাল।
গোপনাঙ্গে কারো ইজ্জত লুকানো নেই। এগুলো বাজে কথা। ইজ্জত রক্ষিত থাকে চিন্তা-চেতনা এবং কর্মের মাঝে। তুমি ‘না’ বলেছ সেটাই যথেষ্ট। এরপর আর কোন দায় দায়িত্ব নেই তোমার। আর কি করতে পারতে? কুকুরের গায়ে কামড় দিতে? কতোটা দাঁত বসালে কুকুর শান্ত হতো। দৌড়ে পালাতে! গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে আর সবাই এসে সামাজিক বাঘ দেখে যেতো! অনেক হয়েছে ওসব, এবার উঠে দাঁড়াও। নির্লজ্জের লজ্জা নেই তোমার কেন লজ্জা হবে।
আদালতের ভাষা হ্যাঁ কিংবা ‘না’ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। তুমি সেই ‘না’ এর আশ্রয় নিয়েছিলে। বিচারক যখন প্রশ্ন করবে তুমি কি ‘না’ বলেছিলে। তখন চিৎকার করে বলবে আমি ‘না’ বলেছিলাম।
মৃত্যুর পর লাশ হয়েও যারা রেপ ভিকটিম হয় তারা ‘না’ বলতে পারে না। তাদের সংখ্যাও কম না। ইউটিউবে গিয়ে দেখ এসব দৃশ্য। তুমি তাও ‘না’ বলেছ। তোমার ভাষা স্পষ্ট। মনে রাখবে, সম্মতির পক্ষে উচ্চারণ তিনবার। ‘কবুল, কবুল, কবুল’। কিন্তু অসম্মতির জন্য একবারই যথেষ্ট। ‘না’।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)