ঝুম বৃষ্টি! এর মাঝে পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে তিন কোনা ছোট জাল পেতে দাঁড়িয়ে আছেন অনেকে। বেশিরভাগ শিশু ও নারী। তরুণও আছে কয়েকজন। নারীদের মধ্যে একজন তাহেরা, বয়স ৫০ এর মতো। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে পাহাড়ি ছড়ার ওপর জাল ধরে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। বললেন, এভাবে তারা কয়লা সংগ্রহ করেন।
প্রবল বৃষ্টিতে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় থেকে কয়লার ছোট ছোট টুকরো ভেসে আসে। জলে ভেসে আসা কয়লার টুকরো সংগ্রহ করে তারা বেপারিদের কাছে বিক্রি করেন। সীমান্তের ওপারের পাহাড়টি এই মানুষদের জীবিকার অবলম্বন।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের টেকেরঘাটের এই পাহাড়ি ছড়ার স্থানীয় নাম বড়ছড়া। এর নামে এলাকাটির নাম বড়ছড়া পাড়া। স্থানীয়রা এলাকার নামে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়টিকেও ডাকেন বড়ছড়া পাহাড়।
তাহেরা বেগম দেখাচ্ছিলেন, তার ছড়ার পাড়-ঘেঁষা ডেরা প্রবল বৃষ্টিতে ভেঙে পড়েছে। বলছিলেন, খেয়ে-পরে টিকে থাকাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তিনি বলতে থাকেন, ‘আগে সিঙ্গেল টুকাইতাম। তখন কিছু ভালো আয় হইতো। এখন সিঙ্গেল পাওয়া যায় না। আয়ও খুব কম।’
সিঙ্গেল মানে নুড়ি পাথর। এখন যেমন ঢলের পানিতে কয়লা ভেসে আসে, আগে তেমনি নুড়ি ভেসে আসতো। এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষ এসব নুড়ি সংগ্রহ করে পাথর ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতেন। মোটামুটি ভালো টাকা পেতেন। এখন নুড়ি কম পাওয়া যাচ্ছে। তাহেরা বেগমদের আয়ও কমে যাচ্ছে।
টেকেরঘাট-বড়ছড়া পাড়া এলাকায় ভাড়ায় মোটর বাইক চালানো আকাশ রানা জানান, বেপারিরা একটন কয়লা ১০/১২ হাজার টাকায় কেনেন। নারী-শিশু-প্রবীণরা পাহাড়ি ছড়া থেকে কয়লা সংগ্রহ করে জমিয়ে রাখেন। অল্প অল্প করে জমানো সেই কয়লা তারা বেপারিদের কাছে বিক্রি করেন। তাদের আয় খুব বেশি হয় না।
এই এলাকায় বাস করা বেশিরভাগ মানুষই এক সময় জীবিকার টানে নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে যাওয়া। অপরূপ দর্শনীয় স্থান লাকমা ছড়ায় গিয়েও চোখে পড়লো শত শত নারী-শিশু-তরুণ-প্রবীণ একইভাবে কয়লা সংগ্রহ করছেন। তীরে বসে আছেন ক’জন। তারা জালে সংগ্রহ করা পাথরগুলো জড়ো করছেন। জমিয়ে জমিয়ে একটু বেশি পরিমাণে বেপারিদের কাছে বিক্রি করবেন বলে।
পর্যটকরা যেখানে পাহাড়-মেঘ-ঝরনা-ছড়া দেখে মুগ্ধ হন, এই শিশু-নারী-প্রবীণ-তরুণরা সেখানে তুমুল বৃষ্টিতে ভিজে কুঁজো হয়ে কয়লা কুড়োতে থাকেন। কয়েক ছটাক চালের জন্য, ডালের জন্য।