টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের যখন আবির্ভাব, বলা হচ্ছিল পিকনিক ধরনের এই ফরম্যাট জনপ্রিয়তা পাবে না। কেবল খেলাটার বিশুদ্ধতাই নষ্ট করবে। আবার যখন জনপ্রিয়তার সিঁড়ি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল, বলা হচ্ছিল, টেস্ট ও ওয়ানডে ফরম্যাট ধূসর হয়ে যাবে এর প্রভাবে। ওপরের আশঙ্কাগুলো সত্যি হয়নি। ক্রমাগত জনপ্রিয়তা বেড়েছে টি-টুয়েন্টির, খেলাটার বিশুদ্ধতাও নষ্ট হয়নি, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জৌলুসও। জৌলুসের মাত্রাটা আবার কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে এটির ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট হিসেবে আবির্ভাবের মধ্যদিয়ে। বিশ্বব্যাপী ক্রিকেটপ্রেমীদের মাতিয়ে রাখা টুর্নামেন্টগুলোর অন্যতম একটি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। বিপিএলের পঞ্চম আসর মাঠে গড়িয়েছে শনিবার। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পাহাড়ঘেরা নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে জমে উঠেছে মাঠের লড়াইও। দেশি-বিদেশি ক্রিকেটাররা ব্যাটে-বলে মাতিয়ে রাখছেন গ্যালারি-টিভিতে উপচে পড়া দর্শকদের। সূর্য ডুবছে, জ্বলে উঠছে ফ্ল্যাডলাইট; সেই আলোকে ছাপিয়ে দারুণ সব পারফরম্যান্স দিয়ে সবটুকু আলো নিজের দিকে টেনে নিচ্ছেন ক্রিকেটাররাও। কিন্তু রঙিন পোশাকের ঝলমলে আলোকবিচ্ছুরণ কতটুকু আলোকিত করছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যতকে? উদ্দেশ্য কী এই বর্ণিল আয়োজনের? বাংলাদেশের ক্রিকেট আর হাঁটি-হাঁটি করে চলার অবস্থায় নেই। গতিপথ পাল্টে দেয়ার মত পারফর্মাররা এসেছেন। তারা পরিণত, দলকে দারুণসব সাফল্যও এনে দিচ্ছেন। বিশ্বের দাপুটে সব দলের বিপক্ষে বুক চিতিয়ে লড়ছে টাইগাররা। কিন্তু মাশরাফী-সাকিব-মুশফিকরা তো সারাজীবন খেলবেন না। সেই জায়গায় যে তরুণরা আসবে, তাদের ভিত্তি গড়তে কতটুকু সাহায্য করছে এই বিপিএল? দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে অব্যবস্থাপনার অন্ত নেই। আগামী দিনের ক্রিকেটাররা সেখানে খেলে নিজেদের গড়তে পারছেন না। সব বাধাবিপত্তি টপকে যারা বয়সভিত্তিক দলের পথ পেরিয়ে জাতীয় দল পর্যন্ত আসছেও, তাদের পড়তে হচ্ছে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে। সেইসব তরুণদের মারকাটারি এই ক্রিকেট খেলে কী লাভ? অল্প বয়সে অর্থের ঝনঝনানির মধ্যে পড়ে পথ হারানোর শঙ্কাটা তো সঙ্গী হচ্ছেই! তাহলে কি কোন কাজেই আসবে না বিপিএলের জৌলুসপূর্ণ আয়োজন? আসবে! সেজন্য দেশের তরুণ ক্রিকেটারদের সঠিক নির্দেশনার মধ্যে রাখতে হবে। মাঠে গেলাম, দুটো বল তুলে মারলাম, আউট হয়ে ফিরলাম, এমন ধারণা থেকে বের করে আনতে হবে ভবিষ্যৎ কাণ্ডারিদের। বোঝাতে হবে আমলা-স্মিথদের মত বিশুদ্ধবাদী ব্যাটসম্যানরাও টি-টুয়েন্টিতে সফল। সাঙ্গাকারা তো চলতি আসরেও খেলছেন। তাদের অনুসরণ করার রসদ যোগাতে হবে তরুণদের মাঝে। দেশের ক্রিকেটের বহুল আক্ষেপের একটা বিষয় হার্ডহিটার না পাওয়া, সম্ভাবনাময় তেমন তরুণদের তুলে আনার সিঁড়ি হিসেবে বিপিএলকে কাজে লাগাতে হবে। খেলতে আসা বিদেশিদের কাছে থেকে শেখার তাড়না সঞ্চারিত করতে হবে দেশি ক্রিকেটারদের মাঝে। তাতে জৌলুসের ক্রিকেটের পাশে সুপ্ত থাকা সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে বিপিএলকে সত্যিকার অর্থেই অর্থবহ করে তোলা সম্ভব। ক্রিকেটীয় এসব হিসাব-কেতাবের সঙ্গে থাকছে ক্রীড়াপিপাসুদের ক্ষুধাটাও। মাঠে ভাল খেলা হোক, পরিচ্ছন্ন খেলা উপহার দিক দলগুলো, কোন বিতর্ক সঙ্গী না হোক, বিসিবির সফল আরেকটি আয়োজন পরিণতি পাক বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে, সর্বোপরি জয় হোক ক্রিকেটের। বিপিএলের জন্য শুভকামনা।