ঢোল, তবলা আর ভায়োলিনের সুরের মূর্ছনায় বুস্টার এনার্জি বিস্কুট-চ্যানেল আই ‘ক্ষুদে গানরাজ ২০১৫’ এর গ্র্যান্ডফিনালের মহাৎসবের পর্দা ওঠে। এবারের ‘ক্ষুদে গানরাজের’ খেতাব জিতে নিয়েছেন গাইবান্ধার মেয়ে পুষ্পিতা।
অনুষ্ঠানের প্রথমেই জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী লাকি আকন্দকের শ্রদ্ধা জানিয়ে জমকালো মঞ্চে সেরা সাত কণ্ঠ হাজির হয় ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা শুধু দুজনে’ সেই হৃদয় মাতানো গান নিয়ে।
দীর্ঘ সাতমাসের প্রতীক্ষা আর চূড়ান্ত পর্বে সাত প্রতিযোগীর তুমুল লড়াইয়ের পর শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় ‘ক্ষুদে গানরাজ’এর গালা রাউন্ড।
সারাদেশ থেকে ৬৫ হাজার প্রতিযোগীর মধ্য দর্শকদের এসএমএস ভোট আর বিচারকদের নম্বরে সেরা ক্ষুদে গানরাজ’র মুকুটি নিজের করে নিয়েছেন সবার প্রিয় পুষ্পিতা। আর প্রথম রানারআপ রায়া শারমিলা ইসলাম রাফতি। দ্বিতীয় রানার আপ হয়েছে মাহফুজ আহমেদ মাহিম।
অনুষ্ঠানটি শুরুর আগে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর।
বলেন, যেই সাতজন সেরা কণ্ঠ এখানে রয়েছে তারা সবাই বিজয়ী। কারণ এই সাতজনকে অনেক আগেই চ্যানেল আই আপন করে নিয়েছে। শুধু এখন আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেওয়ার পালা।
ক্ষুদে গানরাজের সঙ্গে দীর্ঘদিন সঙ্গী হয়ে আছে বুস্টার এনার্জি বিস্কুট। দীর্ঘ এই পথচলায় নিজের অংশীদার করতে পেরে সম্মানিত মনে করেছেন এ এসটি বেভারেজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা মো. হারুনুর রশিদ।
তিনি বলেন, ক্ষুদে গানরাজ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সুপ্ত প্রতিভাগুলো একটি প্লার্টফম পাচ্ছে। যেই প্লাটফমের উপর দাঁড়িয়ে তারা অনেক দূর যেতে পারবে। চ্যানেল আইয়ের এই উদ্যোগটিকে আমি স্বাগত জানাই। এই ধরনের প্রোগাম চ্যানেল আই আরো বেশি করে আযোজন করবে এবং তাদের সঙ্গে আমরা অংশীদার হতে পারবো এই কামনা করছি।
‘ক্ষুদে গানরাজের’ এবারের অনুষ্ঠানের বাড়তি চমক হিসেবে হাজির হয়েছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান সম্পন্ন সঙ্গীতশিল্পী রুনা লায়লা।
সঙ্গীত জীবনে ৫০ বছর পার করায় এই গুণী শিল্পীকে আজীবন সম্মাননা জানানো হয় মহাৎসবে। উপমহাদেশের সঙ্গীত জগতের কিংবিদন্তি রুনা লায়লাকে ক্রেস্ট ও উত্তরীয় দিয়ে সম্মাননা জানান ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর এবং চ্যানেল আই পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ।
রুনা লায়লাকে সম্মান জানাতে পেরে চ্যানেল আই সম্মানিত এমন মন্তব্য করে শাইখ সিরাজ বলেন, রুনা লায়লায় গানের মধ্য দেশ ও দেশের বাইরের সঙ্গীত অঙ্গন হয়েছে সমৃদ্ধ। তার খ্যাতি সর্বোপরি। তাকে সম্মান জানাতে পেরে চ্যানেল আই আজ সম্মানিত।
সঙ্গীত জীবনে ৫০ বছর পর করার কথা স্মরণ করে রুনা লায়লা বলেন, সঙ্গীতে ৫০ বছর পার করলেও আমার বয়স এখনো ৫০ হয়নি। আমার এই অর্জন শুধু মাত্র দশর্কদের জন্য। চ্যানেল আইয়ের কাছ থেকে এই সম্মান পেয়ে আমি আজ গর্বিত।
বিপদে সঙ্গীতশিল্পীদের পাশে থাকার আহবান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে গুণী কয়েকজন শিল্পী গুরুতর অসুস্থ। শুধু শিল্পীদের সুখের দিনে নয় তাদের বিপদেও আপনারা সবসময় পাশে থাকবেন; সহযোগিতা করবেন, সবার কাছে এই আবহান জানাই।
দেশ বরেণ্য রুনা লায়লার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও মডেল অপি করিম নৃত্য পরিবেশনা ছিলো মন মাতানো। ক্ষুদে সাত প্রতিযোগীদের গানের পাশাপাশি ছিলো চোখ ধাঁধানো গল্পকাহিনী জুলেখা, সাতভাই চম্পা ও সিনড্রেলা নৃত্য।
এতে অংশ নেয় সেরা নাচিয়ে প্রতিযোগীরা এবং অভিনেত্রী মেহজাবিন, নায়ক বাপ্পি। ছিলো গতবার ক্ষুদে গানরাজ প্রতিযোগীদের মনোমুগ্ধকর সঙ্গীত পরিবেশনা।
আনন্দঘন অনুষ্ঠানের পর আসে সেই মহেন্দ্রক্ষণ। ক্ষুদে গানরাজের দুই বিচারক নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌস আরা এবং সঙ্গীতশিল্পী এস আই টুটুল। সাথে বিশেষ বিচারক হিসেবে ছিলেন রুনা লায়লা। তাদের নম্বার ও দশর্কদের ভোটের মাধ্যমে ‘ক্ষুদে গানরাজ ২০১৫’ এবারের খতাবটি জিতে নেন পুষ্পিতা।
চ্যাম্পিয়নের হাতে ফরিদুর রেজা সাগর এবং শাইখ সিরাজ ৫ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন। এছাড়া দেশ বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের পক্ষ থেকে পরিয়ে দেন হীরার মুকুট।
প্রথম রানা আপ বগুড়ার মেয়ে রায়া শারমিলা ইসলাম রাফতিকে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় তিন লক্ষ টাকা। আর দ্বিতীয় রানা আপ ময়মনসিংহের ছেলে মাহফুজ আহমেদ মাহিনের হাতে তুলে দেওয়া হয় দুই লক্ষ টাকা।
প্রায় তিনঘণ্টার জমকালো এই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে উপমহাদেশের জনপ্রিয় রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার গানের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বকে জানানো হয় প্রতিটি শিশুর আবাস হোক নিরাপদ।
ইজাজ খান স্বপনের পরিকল্পনা ও পরিচালনায় গ্র্যান্ড ফিনালের পুরো অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে চ্যানেল আই।