নিকট অতীতে দলে অনুপ্রবেশকারীদের অনেক বিশেষণ দেয়া হয়েছে। হাইব্রিড,মৌসুমি পাখি,ফার্মের মুরগী, কাউয়া প্রভৃতি শব্দ বেশ আলোচিত রাজনৈতিক অঙ্গনে।এসব আলাপ আলোচনায় তাদের প্রচার পরিচিতি ও ক্ষমতার ভিত মোটেও হ্রাস পায়নি।বরং দলে বেড়েছে তাদের সক্ষমতা ও প্রভাব।এসব বিশ্লেষন্ধারী সক্রিয় হয় দল ক্ষমতায় থাকার সময়।ক্ষমতার বাইরে থাকার সময় তাদের দেখা মেলে না।এখন যেহেতু বিএনপি ক্ষমতায় নেই তাই সেখানে এসব বিশ্লেষণধারীদের দেখা মেলে না।যে যায় লঙ্কায় সে হয় রাবণ এই কথাটা রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য খুবই প্রযোজ্য।এখন ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট।ক্ষমতার অংশীদার হিসেবে রয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ (ইনু)।১৪ দলের কিছু শরীকের ভূমিকা কেবলই তাদের সমর্থনে।তাদের সংসদে কিংবা রাষ্ট্রীয় কোন প্রতিষ্ঠানে অংশ গ্রহণ নেই।অবশ্য ব্যতিক্রম দীলিপ বড়ুয়া। তিনি ১৪ দলীয় জোট হতে ১টি আসনে মনোনয়ন না পেয়েও সরাসরি হয়েছিলেন পূর্ণমন্ত্রী।মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে অনেক লোকের আগমন ছিল তাকে ঘিরেও।তখন তাঁরও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হতে চাওয়ার লোকের অভাব ছিলো না। কিন্তু এখন কি কেউ হতে চাইবে? কারণ ব্যক্তিটাও তিনি এখনো আছেন।
ক্ষমতায় থাকলে নেতার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হতে প্রতিযোগিতা লেগে যায়।এটাকেই তারা মনে করে ক্ষমতার মূল সিঁড়ি।এই সিঁড়ি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অনেকেই বিত্তহীনতার স্তর ডিঙ্গিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে বিত্তবানের স্তরে। এসব জায়গারও অধিকাংশই দখল করে চলছে কথিত হাইব্রিড,মৌসুমি পাখি,ফার্মের মুরগী ও কাউয়ারা। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের নিষেধ সত্ত্বেও বিভিন্ন জেলা উপজেলায় দলে দলে বিএনপি জামাত হতে আওয়ামী লীগে যোগদান করিয়েছে।এমন কি নৌকা মার্কাও তুলে দিয়েছে বিএনপি জামাতের নেতার হাতে।সংবাদ পত্রে প্রতিনিয়ত সংবাদ হচ্ছে এসব খবর।কেন প্রতি এলাকাতেই তো রয়েছে সাংসদ ও প্রতি সাংসদের রয়েছে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা।তারা কী দায়িত্ব পালন করছেন? চার দলীয় জোট সরকারের আমলে যারা নির্যাতকের ভূমিকায় ছিল তারা আজ মঞ্চ বদল করে ক্ষমতার উত্তাপে তারই ধারাবাহিকতা রক্ষায় তৎপর রয়েছেন।হিন্দু মুসলমান হলে ডাবল গরু খায় বলে গ্রামদেশে একটা কথা চালু আছে।পুরনো মুসলমানের চেয়ে নবাগত মুসলমান অধিক হিন্দু বিদ্বেষী হয়।যেমন আমরা স্বপন ব্যানার্জি নামের এক হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে দেখেছি।ব্যানার্জি যেখানেই যেতো হিন্দু বিদ্বেষী কথা ছড়াতো।এতে বাড়ত পরধর্ম বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উস্কানি।
বিএনপি জামাতকে আর না’বলে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষীয় শক্তি বাম প্রগতিশীলরা ১৪ দলীয় জোটে শরীক হয়।তৎকালীন সাম্প্রদায়িক জোট পরিচালিত পুলিশের হাতে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত হয়েছিল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন,জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাম্যবাদী দলের দীলিপ বড়ুয়া প্রমুখ।১৪ দলে হামলাকারীরা রঙ পাল্টে দলে দলে ১৪ দলের মিছিলে অংশ নিচ্ছে।দেশ গড়েছেন শহীদ জিয়া,নেত্রী মোদের খালেদা জিয়া শ্লোগানের বদলে তারা আজ রাজপথে শ্লোগান দিচ্ছে,জয় বাংলা ও জয় বঙ্গবন্ধু বলে।জয় বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু বলে নারী নিপীড়নের ঘটনাও ঘটাচ্ছে একটি চক্র।সংবাদ পত্রে শিরোনাম হচ্ছে, ধানে ভারী হচ্ছে নৌকা,অনৈতিক সুবিধা দিয়ে নৌকা ক্রয় প্রভৃতি।আরও খবর বেরোচ্ছে কথিত মৌসুমি পাখিরা মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ জন সেজে নিয়োগ পাচ্ছে তার বিশেষ সহায়কের। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে যাচ্ছে এসব কথিত হাইব্রিড,মৌসুমি পাখি বিশেষণের সুবিধাভোগীরা।ইতালিতে ১২-১৪ ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কালো পতাকা প্রদর্শন করেছিল ইতালি বিএনপির সহসভাপতি লায়লা শাহ্।এবারের নারী দিবসে সেই কালো পতাকা প্রদর্শনকারী নেত্রীর নেতৃত্বাধীন মহিলা সমাজ কল্যাণ সমিতির অনুষ্ঠানে ইতালিস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আব্দুস সোবহান সিকদারের উপস্থিতির খবর বেরিয়েছে।বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রীকে কালো পতাকা প্রদর্শন করবে যে ব্যক্তি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হয়ে তার সভায় তিনি কিভাবে গেলেন?
জানা যায় বর্তমানে ইতালির রাষ্ট্রদূত আব্দুস সোবহান সিকদার বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রীর মুখ্যসচিব ছিলেন।এসব গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের আগে দলের দুর্দিনের সময় কী ভূমিকায় ছিলেন তিনি? বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীকে কালো পতাকা প্রদর্শন কারীর সভায় তার উপস্থিতিকে কিভাবে মূল্যায়ন করছে সরকার ও তার দল?এসব ব্যক্তিবর্গ কি আদর্শিক সহযাত্রী না ক্ষমতার?ক্ষমতা হারা হলে কে হতে চাইবে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা অথবা সচিব?দল ক্ষমতায় না থাকলে কে কিনবে নৌকা?অনেক ক্ষেত্রেই এসব ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে আর ব্যক্তি জেগে ঘুমাচ্ছে।ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা ব্যক্তির পরিচয় দিয়ে গণদের মাঝে হয়ে উঠছে প্রবল ক্ষমতাধর।ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের কি কেবলই ব্যক্তির সহায়ক হিসেবে থাকা কাম্য নয়?ব্যক্তির দলের সহায়ক হিসেবে থাকা কাম্য নয়?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)