অর্থনৈতিক সংকট শুধু নয়, ফুটবলের দুর্নীতিও পেছনে ঠেলেছিল দেশটির ফুটবলকে। সেই অবস্থা থেকে ফাইনালে পৌঁছে মদ্রিচ-রাকিটিচরা নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ক্রোয়েশিয়া ফুটবলকে।
ক্রোয়েশিয়া ফুটবলের দুর্নীতি নিয়ে কয়েকমাস আগে আদালতে একটি মামলা হয়। যে মামলায় ফেঁসে গিয়েছিলেন দেশটির সবচেয়ে নামী ক্লাব ডায়নামো জাগরেবের সভাপতি দ্রাভকো মামিচ। বিপুল পরিমাণ আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন তিনি।
মামিচের ক্লাব থেকে যেসব ফুটবলার ইউরোপের বিভিন্ন নামী-দামী ক্লাবে যেতেন, তাদের ট্রান্সফার ফি থেকে বিশাল অঙ্কের লাভ করতে মামিচ। সেই আয় লুকিয়ে ফেঁসে যান। অবস্থা বেগতিক দেখে প্রতিবেশি দেশ বসনিয়া-হার্জেগভেনিয়া পালিয়ে যান। সেখানেই এখনো লুকিয়ে আছেন।
মামিচের মামলায় কিছুটা কলঙ্কিত হয়েছিলেন লুকা মদ্রিচও। এখন মদ্রিচকে দেশের সেরা ফুটবলার বলা হলেও সেসময় তার ছবিতেই কালি মাখা হয়েছিল।
কি করেছিলেন মদ্রিচ? মামিচের মামলায় সাক্ষী দিতে গিয়ে মদ্রিচ বলেছিলেন, ট্রান্সফার মূল্য থেকে মামিচের লাভ করার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। এতেই চটেছিলেন দেশের ফুটবল ভক্তরা। তাদের দাবি, ভাবমূর্তি ঠিক রাখতেই সত্য গোপন করেছেন মদ্রিচ। এই অভিযোগে তখন সারাদেশে বিদ্রুপের মুখেও পড়েছিলেন রিয়াল তারকা।
বিশ্বকাপে একধাপ করে এগিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। আর দেশের মানুষ একটু একটু করে ভুলে গেছে কলঙ্কের কথা। সবাই মেতে উঠছে উৎসবে। পরিস্থিতি অনেকটাই ২০০৬ সালের ইতালির মতো। তখন সেদেশের সেরা ক্লাব জুভেন্টাস গড়াপেটায় জড়িয়ে অবনমনের শাস্তি পেয়েছিল। সেবাই আবার সবাইকে অবাক করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইতালি।
ক্রোয়েশিয়ার ভাগ্যও কি সেইরকম? স্বপ্নে বুক বাঁধছেন সমর্থকরা। তারা নিজেরাই বলছেন, ‘মদ্রিচ ক্রোয়েশিয়ার সর্বকালের সেরা ফুটবলার।’
দলের সাফল্য উদযাপনে দেদার খরচ করছেন ক্রোয়শিয়ানরা। ঢিমেতালে চলা দেশের অর্থনীতিতে গতি এনেছে বিশ্বকাপ সময়ের বেচা-কেনা।
বিশ্বকাপ চলাকালীন অবশ্য ক্রোয়েশিয়ার অর্থনীতি লাভের মুখ দেখে দু-তিনটি ক্ষেত্রে। এসময় বিয়ারের বিক্রি বেড়েছে অনেকটা। সেইসঙ্গে বিক্রি বেড়েছে চিপস ও টেলিভিশনের।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে জয়ের পর ক্রোয়েশিয়ায় চিপস বিক্রির পরিমাণ কত ছিল? শুনলে অনেকেই অবাক হবেন। দেশটির সবচেয়ে বড় রিটেইল চেইন কনজুমারের দাবি, সেদিন বিক্রি বেড়েছিল ১০০%।
আর শেষ দুই সপ্তাহে টিভি বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে ৪০০%। বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে এই দু-তিনটি পণ্যের জন্য ২০৫ কোটি ডলার (১২৯৫ কুনা, ক্রোয়েট মুদ্রা) খরচ করেছেন ক্রোয়েশিয়ানরা। এই বিক্রি প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে গত ডিসেম্বরে ক্রিসমাসের সময়কার বেঁচা-বিক্রিকে। ওই সময় ক্রোয়টরা খরচ করেছিল ১৩৮০ কোটি কুনা।
দল ফাইনালে যাওয়ার পর মন্ত্রীরা সংসদে গিয়েছিলেন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে। প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেই প্লেস্কোভিচ বলেছেন, ‘দলের ফাইনালে যাওয়া বিশ্ব পর্যায়ে দেশের সর্বোচ্চ প্রমোশন।’
ক্রোয়েশিয়ার সবচেয়ে খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ স্লাদেন ভেদ্রিসেচের মন্তব্য, ‘ক্রোয়েশিয়া ফাইনালে যাওয়ায় দেশের প্রতি আগ্রহ বাড়বে অন্য দেশের মানুষদের। ফলে অনেকেই ক্রোয়েশিয়ায় বেড়াতে আসবেন।’