অবশেষে বাংলাদেশ সফরে আসছে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দল। ‘সামান্য অনিশ্চয়তা’ রেখে এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ডকে উদ্ধৃত করে বলেছে, চলতি বছরেই অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর প্রায় নিশ্চিত। যদি এর মধ্যে নিরাপত্তাজনিত কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে। আমরা জানি ২০১৫ সালের অক্টোবর দল ঘোষণা করেও সফর শুরুর মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশ সফর স্থগিত করেছিল অস্ট্রেলিয়া। এমনকি একই ইস্যুকে সামনে এনে বাংলাদেশে হওয়া অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটেও অংশ নেয়নি তারা। অজিদের সেই ঘোষণা ওই সময় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তিতে একটা কালো ছায়া হয়ে এসেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সফল আয়োজনে সেই কালো ছায়া থেকে আলোকিত সূর্যের দেখা মিলেছিল। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে তা এনে দিয়েছিল বিশেষ মর্যাদার আসন। যদিও গত বছরের ১ জুলাই গুলশানের জঙ্গি হামলায় আবারো হুমকির মুখে পড়ে বাংলাদেশের ইমেজ। দেশের ইতিহাসে বিরল জঙ্গি হামলার ওই ঘটনায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ১৭ বিদেশি নাগরিককে। ঘটনার পর শঙ্কার মুখে পড়ে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড সিরিজও। যদিও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রতি আস্থা রাখে ইংল্যান্ড। সব ধরনের হুমকিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে প্রায় এক মাসের বাংলাদেশ সফর শেষে নিরাপদেই ফিরে যায় ইংলিশরা। আমরা নিশ্চিত করেই বলতে পারি এই ইংল্যান্ডের এ সফরই মূলত চাপ তৈরি করে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার উপর। জেমস সাদারল্যান্ড নিজেও ওই সফরে ইংল্যান্ডকে দেয়া বাংলাদেশের নিরাপত্তা মানের প্রশংসা করেছেন। তাই এখন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। গত কয়েক বছর অস্ট্রেলিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তেই ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা আমরা দেখেছি। ফ্রান্স-জার্মানি, আমেরিকা-কানাডা, চীন-ভারতের মতো বড় বড় দেশ একাধিকবার সেই সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে। এসব হামলা প্রমাণ করে দিয়েছে বিশ্বের প্রতিটি দেশই এখন নিরাপত্তা হুমকিতে। কিন্তু তাই বলে বৈশ্বিক নিরাপত্তাহীনতার ইস্যুকে বাংলাদেশের মতো একটি দেশের ওপর অস্ট্রেলিয়ার চাপিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না, সেটা প্রমাণিত হয়েছে। দেরিতে হলেও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার বোধদয় হয়েছে বলে তাদেরকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। আমাদের চাওয়া, স্থগিত হওয়া সফর নিশ্চিত করে বাংলাদেশের প্রতি তাদের করা পাপের প্রায়শ্চিত্ত করুক অস্ট্রেলিয়া।