এজবাস্টনে অনিন্দ্য সুন্দর ১৪৪ রানের ইনিংসটি খেলার পর যেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটপ্রেমীদের হাহাকার বাড়িয়ে দিলেন স্টিভেন স্মিথ। দেখে একটিবারের জন্যও বোঝা দায় যে, বল টেম্পারিং কাণ্ডে এই স্মিথকেই দলের বাইরে থাকতে হয়েছে ১২টা মাস! ফর্মের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় ক্যারিয়ারে কলঙ্কের দাগ লেগে যাওয়ায় ক্রিকেটকে ভুলেই যেতে চেয়েছিলেন অজিদের সাবেক অধিনায়ক, সেটা ওই সময়টাতে জানা যায়নি। জানা গেল অ্যাশেজের প্রথমদিন পার হওয়ার পর!
মেঘলা আকাশের নিচে বৃহস্পতিবার ১২২ রানে ৮ উইকেট হারানোর পর প্রথম ইনিংসে ২৮৪ রান তুলতে পেরেছে অস্ট্রেলিয়া, তার পুরো কৃতিত্বটা চোখ বন্ধ করে দেয়া যায় স্মিথকে। দলের রানের অর্ধেকের বেশি একাই করেছেন সাবেক অধিনায়ক। দলকে এনে দিয়েছেন চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ। ২২ গজে সাবলীলতা দেখে টেরও পাওয়া গেল না গত বছরের মার্চে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে নিউল্যান্ডসে বল বিকৃতির শাস্তি কাটিয়ে এই প্রথম সাদা পোশাকের ক্রিকেট খেলতে নেমেছেন।
যেহেতু দিনের সেরা খেলোয়াড়, সংবাদ সম্মেলনে আসতে হল স্মিথকেই। এসে বললেন, এই পর্যন্ত হয়তো আসাই হতো না তার। শোনা হতো না প্রশংসা, বলা হতো না কী যুদ্ধ জিতে অ্যাশেজে আসতে হয়েছে তাকে!
জাতীয় দলে খেলতে না পারলেও বিভিন্ন দেশের ঘরোয়া টি-টুয়েন্টি লিগে নিষিদ্ধের সময়টা খেলে বেড়িয়েছেন স্মিথ। জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো খেলে গেছেন বিপিএলেও। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে কয়েক ম্যাচ খেলেই পড়েন কনুইয়ের চোটে। একদিকে নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে চোট। দুইয়ে মিলে নাকি ক্যারিয়ারের শেষই দেখছিলেন! হতাশা ঘিরে ধরেছিল চারপাশ থেকে। শ্রদ্ধা, ভালোবাসা হারিয়ে বসেছিলেন ক্রিকেট থেকেই।
‘গত ১৫ মাসে এমন একটা সময় গেছে যখন মনে হয়েছিল আমি আর খেলতেই পারবো না। একটা পর্যায়ে ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসাটাই হারিয়ে বসেছিলাম। বিশেষ করে আমার কনুইয়ের অস্ত্রোপচারের পর। অদ্ভুত একটা সময় ছিল তখন। কিন্তু হাতের বাঁধনটা খুলে ফেলার পর যখন কনুইটা দেখতে পেলাম, আবার ভালোবাসাটা ফিরে এলো। আমি তখন খেলতে চাইতাম, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মাঠে নামতে চাইতাম, মানুষদের গর্বিত করতে চাইতাম, আর যা করতে ভালোবাসি সেটাই করতে চাইতাম।’
‘অতীতে আমার জীবনে এমন কোনদিন কখনোই আসেনি যখন খেলতে চাইতাম না। তবে কিছু সময়ের জন্য হলেও একটা অভক্তি চলে এসেছিল। সৌভাগ্যবশত ভালোবাসাটা ফিরে এসেছে। যে অবস্থায় আছি তার জন্য, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলতে পারার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’