চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ক্রিকেটে নিজেই একটা রাজ্য গড়ছেন কিং স্টোকস

মাত্র ছয় সপ্তাহের ব্যবধানে সম্ভবত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ওয়ানডে এবং সম্ভবত সর্বকালের ‘সর্বশ্রেষ্ঠ’ টেস্ট ম্যাচের ঘটনা ঘটল! যেখানে দুটি প্রতিযোগিতাতেই এককভাবে জিতে নায়ক বেন স্টোকস।

বিশ্বকাপের ফাইনালে তার অবদান– সুপার ওভার বীরত্ব এবং তার আগে যা ঘটেছিল সবই। ১৪ জুলাই লর্ডসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষের ঘটনাটি হয়তো এই গ্রহের ছিল না! ক্রিকেটের মাঠে তার চেয়ে নাটকীয় আরকিছু কল্পনা করাও খুব কঠিন ছিল। তবে রোববার ক্রিকেট বিশ্ব লর্ডসের বেশ কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়, যখন স্টোকস মহিমাময় এবং তার অবিস্মরণীয় ১৩৫* রানের জোরে হেডিংলিতে অজিদের বিপক্ষে তৃতীয় অ্যাশেজ টেস্টে জেতে ইংল্যান্ড।

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

এদিন স্টোকস ব্যাট করতে নেমেছিলেন ২ রান নিয়ে। আগেরদিন ৫০ বলে ২ রানে অপরাজিত স্টোকস অনেক ভাবনা নিয়েই রাত কাটিয়েছেন হয়তো। টেস্টের চতুর্থ দিন সেখান থেকে শুরু করে অধিনায়ক রুট, জনি বেয়ারস্টো, জস বাটলার এবং ক্রিস ওকসের ব্যর্থতা একাই ঢেকে দেন স্টোকস। যেটা নিজেদের ইতিহাসে অন্যতম বিখ্যাত এবং সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার টেস্ট। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচের সেরা স্টোকস।

৩৩০ মিনিট ক্রিজে থেকে ২১৯ বলে নায়কোচিত ১৩৫। স্টোকস যেন টেস্ট ক্রিকেটকে নতুন করে অক্সিজেন দিয়ে যান। বড় মঞ্চে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জেতানোর অভিজ্ঞতা অবশ্য নতুন নয় তার। লর্ডসের ১৪ জুলাই থেকে লিডসের ২৫ আগস্ট! বিশ্বকাপ ফাইনাল থেকে অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্ট। স্থান, কাল, টুর্নামেন্ট বদলালেও বদলালেন না ‘পাত্র’।

চাঁদের কলঙ্কের মতো, ইংল্যান্ডের সাফল্যে সেদিন কলঙ্ক ছিল ওভার-থ্রো বিতর্ক। আর রোববার আম্পায়ার জোয়েল উইলসনের সিদ্ধান্ত। কিন্তু কোনকিছু দিয়েই স্টোকসের সাফল্যকে ছোট করা যায় না। বিশ্বজয়ের মঞ্চ থেকে টেস্ট ক্রিকেটের চিরস্মরণীয় জয়, ইংলিশদের সব সাফল্যের মধ্যেই ইংল্যান্ডের রাজা। তবে ইংল্যান্ডের রাজার বাইরেও নিজের কীর্তি দিয়ে ক্রিকেটে নিজের আলাদা একটি রাজ্য গড়ছেন কিং স্টোকস।

স্টোকসের এই উঁচু দাগের লড়াইয়ের সঙ্গে যদি আরও কোনো ময়ূরপঙ্খী বর্ণের প্যাচ থেকে থাকে তবে তা দেখা যাক।

চলতি বছরই কিংসমিডে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে কুশল পেরেরা অপরাজিত ১৫৩, যেখানে তিনি ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান বিশ্ব ফার্নান্দোকে সঙ্গে নিয়ে ৭৮ রান করে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন। স্টোকস রোববার যা করেছেন, সেটা তার চেয়েও দুর্দান্ত। আরেকটি বড় পার্থক্য হল, স্টোকসের ইনিংসটি তার দেশের হয়ে এককভাবে বিশ্বকাপ জেতানোর ঠিক পরপরই এসেছে।

২৮ বছরের স্টোকস ইংলিশ ক্রিকেটে তো অবশ্যই, সেইসঙ্গে বিশ্ব ক্রিকেটেও নিজের অবস্থান পোক্ত করেছেন।

গত দেড় মাসে নিজের ক্যারিয়ারে স্টোকস কোথায় উঠেছেন সেই প্রশ্ন না-ই করা গেল। তবে তিনি যে কিছু করবেন সেটা আগেও ইঙ্গিত দিয়েছেন। আজকের ২৮ বছরের স্টোকস যখন ২৪ বছরে ছিলেন, তখনই টেস্টে ক্যারিয়ার সেরা ২৫৮ (১৯৮ বলে) রানের ইনিংস খেলেন কেপটাউনে, সাউথ আফ্রিকার আক্রমণকে একেবারে নৃশংসভাবে তছনছ করে দিয়ে। ওই ম্যাচে স্টোকস শেষ পর্যন্ত রানআউট হন। ম্যাচে অবশ্য জয়-পরাজয় হয়নি, তবে ড্র ম্যাচেও নজর কেড়েছিলেন তিনি।

এটা যেন তার জন্য দক্ষতার চেয়ে বেশিকিছু। কয়েক ফরম্যাটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্টোকসের এই লড়াইয়ের অর্থ কী? সেদিক থেকে বিচার করলে, বিশেষত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এবং টেস্ট ক্রিকেটের উপযুক্ত বিজ্ঞাপন তিনি। রোববার জয় বা হার, তার নামের পাশে সেঞ্চুরি থাক বা না থাক, তাতে কিছু আসে-যায় না। ইংল্যান্ডের হয়ে তিনি যখন প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নামেন, প্রতিবারই এমটি করেন এবং তার অবিশ্বাস্য সাফল্যকে এত সহজে প্রশংসা করা যায় না।

বিশ্বের অনেক দেশই টেস্টে এমনকিছু করতে চায় যেটা ইংল্যান্ড করেছে। কিন্তু এটাও ঠিক যে, তাদের অনেকের কাছেই বর্তমানে এমন কোনো খেলোয়াড় নেই, যিনি স্টোকস যা করেছেন তা করতে পারে।

এটা অবশ্য যতটা মানসিক সমস্যা ততটাই প্রতিভার বিষয় এবং স্টোকস দেখিয়েছেন যে তার শারীরিক দক্ষতার মতোই তার মানসিক শক্তিও তাৎপর্যপূর্ণ। রোববার স্টোকস যেটা করেছেন সেটা ছিল আসলে থিয়েটার।

জয়ের শেষ রানের জন্য কামিন্সকে যখন অফসাইডে মারলেন, তখন স্টোকস তার হাত তুলে ‘জঙ্গলের রাজার’ মতো গর্জন করেন। এটি সেই মুহূর্তগুলোর মধ্যে একটি যা মানুষ বারবার বারবার দেখতে চাইবে এবং এটার প্রশংসা করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়শই ঘটে না।

স্টোকসের জন্য যেন সাফল্যের এমন অতিমানবীয় ব্যাপারগুলো একটু দীর্ঘ ও ঘোরানো রাস্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যিনি অফ-ফিল্ড বিতর্কের (বারে মারামারি) অংশীদার হয়েছিলেন যা এক পর্যায়ে তার ইংল্যান্ড ক্যারিয়ারকে হুমকির মুখে ফেলেছিল।

ফলস্বরূপ, তিনি জনমতকে বিভক্ত করে চলেন। তবে এটি প্রায়শই তার জন্য একটি উপসর্গ, যা পরে সবচেয়ে ভালো একটা বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

স্টোকসকে নিয়ে অনেক বিতর্ক, অনেক কথা, অনেক জিজ্ঞাসা আসতে পারে। কিন্তু স্টোকসের একটি বিষয় যা নিয়ে কখনোই প্রশ্ন করা যায় না, তা হল তার কমিটমেন্ট। বৃষ্টি বা রোদ, ব্যাট বা বল, টেস্ট ম্যাচ ক্রিকেট বা ওয়ানডে… তিনি এ ব্যাপারে সবসময় একই রকম।

স্টোকসের কমিটমেন্টের আঁচ পাওয়া যায় তার কথাতেও। অবিশ্বাস্য ম্যাচ জেতানো নিয়ে তার বক্তব্য, ‘সহজাত মানসিকতা নিয়ে ব্যাট করে গিয়েছি। শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছি। লড়াই ছাড়িনি। সর্বোচ্চ পর্যায়ে চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি। সেটা যেভাবে শেষ হয়েছে, তার চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না। আসলে আজকের (রোববার) দিনটা সত্যিই অবিশ্বাস্য। আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না। তবে সারাদিন এভাবে রান করে যেতে হলেও আমি তৈরি ছিলাম।’

কমিটমেন্ট নিয়ে স্টোকসের নিজের এই স্বীকারোক্তির সামনে কী কমেন্টস করবেন অন্যরা?