বাঙালি ছেলেদের পোশাক হিসেবে পাঞ্জাবি সবসময়ই সুন্দর। সাউথ আফ্রিকার সঙ্গে চট্টগ্রামে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে বিদেশীরাসহ ধারাভাষ্যকারদের গায়ে নানা রঙের পাঞ্জাবি দেখে চোখ জুড়িয়ে গিয়েছিলো। বোঝাই যাচ্ছিলো ঈদের আগাম আবহ সবার মাঝে। কিন্তু সেই আবহ যে এভাবে ভোঁতা চিন্তা হয়ে মাথায় ঝিমঝিম অবস্থা নিয়ে আসবে সেটা নিশ্চয়ই ভাবেন নি কেউ।
টানা চতুর্থ ওয়ানডে সিরিজ জিতে দেশ তখন উন্মাতাল। জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে পুরস্কার বিতরণী চলছে। সাউথ আফ্রিকান ক্যাপ্টেন হাশিম আমলাকে ডেকেছেন উপস্থাপক শামীম আশরাফ চৌধুরী। দুয়েক কথার পর তিনি ঈদ প্রসঙ্গকে এমনভাবে সেখানে টেনে আনলেন যে বোঝাই যাচ্ছিলো বেশ প্রস্তুতি নিয়েই তিনি বিষয়টি এনেছেন। কিন্তু একজন ক্রিকেটার হিসেবে হাশিম আমলার কাছে ওই অক্রিকেটীয় বিষয় একেবারে পাত্তাই পায়নি।
শুধুমাত্র তিনিই জানেন যে কি বুঝে তিনি অমনভাবে বিষয়টি এনেছিলেন! টেস্ট ম্যাচ প্রসঙ্গ টেনে শামীম আশরাফ চৌধুরী বলেন, ঈদের কারণে বেশ কয়েকদিন ছুটি। ছুটি শেষে এই চট্টগ্রামেই প্রথম টেস্ট। ওয়ানডে সিরিজ হারার পর নিশ্চয়ই ঈদের এই ছুটি নিজেদের গুছিয়ে নিতে কিছুটা সহায়তা করবে।
সত্য যে ওয়ানডের পর বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ঈদের ছুটিতে গেছেন। শামীম আশরাফও হয়তো ছুটি পেয়েছেন। কিন্তু তাকে কে বললো যে ঈদের ছুটির কারণে ওয়ানডে এবং টেস্ট সিরিজের মধ্যে কয়েকটা দিন আছে?
হাশিম আমলা মুসলমান বলেই হয়তো শামীম আশরাফ ওই ঈদের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। হয়তো ভেবেছেন মুসলিম হিসেবে গদগদ হয়ে আমলা ঈদ নিয়ে কয়েকটি কথা বলবেন। চাই কি ঈদ শুভেচ্ছাও জানিয়ে দিতে পারেন দর্শকদের।
কিন্তু হাশিম আমলা যতোই প্র্যাকটিসিং মুসলমান হোক, যতোই তার মুখে সুন্নত হিসেবে দাড়ি থাকুক, যতোই তিনি তার জার্সিতে বিয়্যরের বিজ্ঞাপন ঝুলাতে না দিন; তিনি একজন ক্রিকেটার এবং পেশাদার ক্রিকেটার। তাই তিনি ক্রিকেট মাঠে অক্রিকেটীয় কোনো বিষয়ে যান নি। একটি কথাও বলেন নি এ বিষয়ে।
বরং তার পক্ষে যেটা বলা সঙ্গত, সেটাই বলেছেন তিনি। শামীম আশরাফ চৌধুরী যেখানে বলেছেন ঈদের কারণে কয়েকদিন ছুটি, হাশিম আমলা সেখানে সুস্পষ্টভাবেই ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, ওয়ানডে এবং টেস্ট সিরিজের মাঝে কয়েকদিন ফ্রি ডে থাকা খুব স্বাভাবিক। সেই সময়টিকে কাজে লাগানোর কথাও বলেন তিনি।
হাশিম আমলা ওই কথাগুলো বলার সময় একটু একটু হাসছিলেন। তার হাসির কারণ এক হতে পারে যে শামীম আশরাফ চৌধুরী তাকে যে লাইনে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তিনি সেদিকে হাঁটেন নি। অথবা হতে পারে, শামীম আশরাফ যে বলছেন ঈদের কারণে কয়েকদিনের ছুটি; সেটা যে একজন ক্রিকেট ধারাভাষ্যকারের মুখে মানায় না সেটাই কথার সঙ্গে হাসিতে বোঝাতে চেয়েছেন তিনি।
কিন্তু হাশিম আমলার কথায় শামীম আশরাফ চৌধুরী কি বুঝলেন তিনিই জানেন। পাঞ্জাবি পরা উপস্থাপকের হৃদয় ও মনে তখনও ঈদের আমেজের খুশবু। শেষ পর্যন্ত তিনি তাই আমলাকে ‘ঈদ মুবারক’ও বলেন এই আশায় যে সাউথ আফ্রিকান ক্যাপ্টেনও হয়তো সেটার প্রতিধ্বনি করবেন আর অনাদিকাল ধরে তিনি মানুষের কাছে এই গল্প বলে যেতে পারবেন। কিন্তু পেশাদার ক্রিকেটার আমলা ঈদের ঈ-তো দূরের কথা ই-ও উচ্চারণ করেন নি।
এতে অবশ্য দমে যান নি শামীম আশরাফ চৌধুরী। মাশরাফি যে এই ম্যাচে ওয়ানডেতে দুইশ উইকেট পেলেন, সাকিবও পেলেন দুইশ উইকেট; এসব প্রসঙ্গ ভুলে মাশরাফির সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি আবারও চলে গেলেন ঈদ প্রসঙ্গে। এমনকি মাশরাফিকে চরম বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে তাকে দিয়ে ঈদের ছুটি একদিন বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদনও করিয়ে ফেললেন।
এভাবে মাশরাফি এবং প্রধানমন্ত্রী দু’জনকেই বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার পেছনে কী ক্রিয়া কাজ করেছে, একমাত্র শামীম আশরাফ চৌধুরীই সেটা জানেন। তবে তার এটা বোঝা উচিত ছিলো যে একটা সিরিজ জয়ে একদিন জাতীয় ছুটি হতে পারে না। সেটা ভবিষ্যতে যে অর্জনে হতে পারে, আমাদের ক্রিকেটাররা সেদিকেই হাঁটছেন। তাদের সঙ্গে সঙ্গে চলতে হলে আমাদের ধারাভাষ্যকারদেরও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাণ্ডজ্ঞানটা একটু বাড়াতে হবে। তাদের বুঝতে হবে যে সব জ্ঞানের বড় জ্ঞান হচ্ছে কাণ্ডজ্ঞান। তা না হলে হয়তো বলতে হবে, ‘আয়োডিনবিযুক্ত ক্রিকেট ধারাভাষ্যকারদের লইয়া আমরা কি করিবো!’
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)