চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ক্রিকেটের সূত্রে ভারতীয়দের নতুন আত্মউপলব্ধি

বেশিরভাগ ভারতীয় জনগণ মনে করে, বাংলাদেশ মানেই বিপুল জনগোষ্ঠির দরিদ্র, বাংলাভাষী ও মুসলিম অধ্যুষিত একটি দেশ, যার স্বাধীনতা এসেছে ভারতের সহায়তায়।

উঠতি পরাশক্তি ভারতের জনগণের এই মনোভাব প্রকাশ পায় দু’দেশের মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং খেলার আলোচনার মধ্য দিয়ে।

তবে বাংলাদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো সিরিজ হেরে বাংলাদেশকে নতুনভাবে দেখতে শুরু করেছে ভারতীয়রা। ভারতীয় অনলাইন পত্রিকা ‘দ্য অয়্যার’ বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেছে একটু ভিন্নভাবে।

তারা বলছে, বাংলাদেশ এবং ভারতের ৩২ বারের মুখোমুখিতে ২৬টি ম্যাচেই জিতেছে ভারত। আর ৫টি ম্যাচে জয়ের মুখ দেখেছে বাংলাদেশ। ক্রিকেটের এই পরিসংখ্যানকে সামনে রেখে ভারতীয়দের ধারণা, বাংলাদেশ হয়তো ক্রিকেট র‍্যাঙ্কিংয়ের মতো ভারতের চেয়ে সবক্ষেত্রে পিছিয়ে।

হোয়াইটওয়াশ থেকে বেঁচে যাওয়া দেশটির ক্রিকেট পণ্ডিতদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে বিভাজন। প্রশ্ন উঠছে ভারতীয় দলের ব্র্যান্ড নাম মাহিন্দ্র সিং ধোনির অধিনায়কত্ব নিয়েও।

ভারতের ‘দ্য অয়্যার’ পত্রিকার সাংবাদিক নিখিল শ্রীবাস্তব ও আশিষ গুপ্তা সামাজিক-অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচক তুলে ধরেছেন দু’ দেশের প্রেক্ষাপটে। সেখানে দেখানো হয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে। ওইসব সূচকে তারা বিশ্বব্যাংকের তথ্য ব্যবহার করেছেন।

ক্রিকেট ম্যাচ পরিসংখ্যান:

ভারতের চেয়ে তুলনামুলকভাবে এবছর বাংলাদেশ বেশি ম্যাচ জিতেছে। বাংলাদেশ জিতেছে ৬৮ শতাংশ আর ভারত মাত্র ৫৩ শতাংশ। ২০০৯ সালেও ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ তুলনামুলকভাবে বেশি ম্যাচ জিতেছিলো। ওই বছর ক্রিকেটে ভারত ৫৭ শতাংশ ম্যাচ জিতে, যেখানে বাংলাদেশ জিতে ৭৪ শতাংশ ম্যাচ।

শিশু মৃত্যুর হার: বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার ভারতের তুলনায় অনেক কম। গত ১৫ বছর ধরেই ভারতের চেয়ে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন ভালো। বর্তমানে বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৩৩.২ আর ভারতে এই হার প্রতি হাজারে ৪১.৪। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন বেশি কারণ বাংলাদেশে গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং রোগ নিরাময়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কলেরা এবং ডায়রিয়া মোকাবেলায় বাংলাদেশ পুরো বিশ্বে এক উদাহরণ।

স্যানিটেশন: স্যানিটেশনে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে বহু আগে থেকেই এগিয়ে আছে। বাংলাদেশের মাত্র ২.৫ ভাগ মানুষ স্যানিটেশনের বাইরে রয়েছে যেখানে ভারতের প্রায় ৪৮.৩ ভাগ মানুষের এখনও স্যানিটেশন সুবিধা নেই।

টিকাদান: বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে শিশুদের টিকাদানের মাধ্যমে। নব্বইয়ের দশক থেকেই এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে। ১২-১৩ মাস বয়সীদের ডিপথেরিয়া, টিটেনাস, হুপিংকাশি, পোলিও ইত্যাদি প্রতিরোধে যখন যেমন প্রয়োজন তার নিশ্চয়তা বাংলাদেশ দিয়েছে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ তার জনসংখ্যা এবং জনস্বাস্থ্য নিয়ে নিয়মিত জরিপও চালায় যেখানে ব্যর্থ ভারত।

জেন্ডার সমতা: উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ছেলে মেয়েদের অংশগ্রহণে লেখাপড়ায় সমতা নিশ্চিত করতে পেরেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে এখন স্কুল কলেজে ছেলেদের তুলনায় অনেক সময়ই মেয়েদের অংশগ্রহণ বেশি দেখা যায়।

জন্মহার: জন্মহার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে এগিয়ে আছে। ভারতীয়দের মধ্যে একটি ভুল ধারণা আছে: যেহেতু বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ তাই সেখানে জন্ম হারটাও সম্ভবত বেশি। কিন্তু বিষয়টি মোটেও তা নয়। ৯০ এর দশকের শেষ থেকে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশের জন্ম-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায়।

জিডিপি: এই একটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে পিছিয়ে। বাংলাদেশের মোট জাতীয় উৎপাদন এবং দেশটির জনগণের মাথাপিছু আয় ভারতের থেকে কম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেহেতু জিডিপির দিক থেকে বাংলাদেশ পিছিয়ে, তাই এটা বলা যায় যে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে দরিদ্র রাষ্ট্র। 

এসব হিসাব-নিকাশ করে ভারতীয় ক্রিকেট দল জিতলে তাদের গুণগান করে চার পাতার প্রতিবেদন প্রকাশের পাশাপাশি ভারতের সামাজিক-অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন খাতে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ যে পরিস্কার উন্নতি করছে এবং এগিয়ে আছে, সেসব জায়গায় ভারতকে যে আরো কাজ করতে হবে,তাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।