চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ক্রিকেটের নন্দনকাননে স্নায়ুচাপের অগ্নিপরীক্ষা

আবারও লড়াইয়ে মুখোমুখি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি ভারত ও পাকিস্তান। টি২০ অনিশ্চয়তার মোড়কে স্নায়ুচাপের অগ্নিপরীক্ষার ম্যাচের ঘটনাস্থল এবার ক্রিকেটের নন্দনকানন ইডেন গার্ডেন। টি২০ বিশ্ব আসরের প্রথম সংস্করণের মহানাটকীয় ফাইনালের দুই প্রতিপক্ষ আজ ফের মুখোমুখি। নিরাপত্তার কারণে যে ম্যাচ ধর্মশালা থেকে ধর্মতলার ইডেনে স্থানান্তরিত।

ভারত-পাকিস্তান যখনই ক্রিকেট মাঠে পরস্পরের বিরুদ্ধে নামে তখনই উত্তেজক কিছু ঘটে। এবারও তেমন কিছুর আশায় রয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। এই ম্যাচ নিয়ে উত্তেজনায় আছেন দুই দেশের সাবেকরাও। তাই ম্যাচটি দেখতে একদিন আগেই ভারতে পা রেখেছেন পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী সাবেক অধিনায়ক ইমরান খান। ধারাভাষ্যের জন্য আগে থেকেই সেখানে রয়েছেন ইমরানের সবচেয়ে বিস্বস্ত ছাত্র ওয়াসিম আকরাম। রয়েছেন শোয়েব আকতারও।

চরম উত্তেজনার এ দ্বৈরথ দেখতে শুক্রবার সকালেই কলকাতায় পা রেখেছেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার আবদুল বাশিত। ভাংচুর হয়েছে ইডেনের অস্থায়ী টিকিট কাউন্টার! ক্রমেই চড়ে যাচ্ছে বাজির দর। মহাযুদ্ধের নিষ্পত্তি হওয়ার আগে ক্রিকেটমোদীদের মনে আপাতত একটাই প্রশ্ন- কে জিতবে? ভারত না পাকিস্তান? আসরটির নাম যেহেতু টি২০ বিশ্বকাপ, মহারণের আগে তাই ভারতীয়দের মনের জোরটাই বেশি।

১৯৫২ সালে টেস্টে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয় দুই প্রতিবেশী। রাজনৈতিক নানা কারণ পাক-ভারত ক্রিকেট যুদ্ধের মাঠকেন্দ্রিক উত্তেজনাকে নিয়ে গেছে মাঠের বাইরে। দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর ক্রিকেটীয় যুযুধানকে রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনার দ্বৈরথের সঙ্গে তুলনা করেছে মার্কিন দৈনিক ‘নিউইয়র্ক টাইমস’।

কিন্তু শুধু ‘বিশ্বকাপ’ বিবেচনায় আনলে পাক-ভারত দ্বৈরথ কি আসলেও দ্বৈরথ? টি২০ বিশ্বকাপে এর আগে চারবার ভারতের মুখোমুখি হয়ে যে একবারো জেতেনি পাকিস্তান! ওয়ানডে বিশ্বকাপেও ঠিক তাই। ছয়বারের মুখোমুখিতে প্রতিবারই জয়শূন্য পাকিস্তান।

বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে অবশ্য নিউজিল্যান্ডের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি ভারত। তবে এই ম্যাচ বাদ দিলে সর্বশেষ এশিয়া কাপ ও তার আগের পারফর্মেন্স ধরলে এই ম্যাচে এগিয়ে থাকবে ভারতই। এশিয়া কাপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আগে তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশ করার পর ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কাকে ২-১ ব্যবধানে হারায় তারা।

কিন্তু প্রতিপক্ষের নাম যখন পাকিস্তান, তখন কােনো কিছুই আগাম অনুমান করা কঠিন। পাকিস্তান দলকে হালকাভাবে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ নির্বাসনের খাঁড়া কাটিয়ে দলে ফিরে পেসার মােহাম্মদ আমির প্রমাণ করেছেন মাঠের বাইরে থাকলেও তার ধার এতটুকু কমেনি। ফলে পাকিস্তানের শক্তি যে অনেকটা বেড়েছে তাতে সন্দেহ নেই। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে বড় জয়ই পেয়েছে পাকিস্তান। রান পেয়েছেন টপঅর্ডারের প্রায় সব ব্যাটসম্যান। তার উপর স্বরূপে ফিরেছেন অধিনায়ক শহিদ আফ্রিদিও।

যদিও এই ম্যাচকে অন্য ম্যাচের মতো করেই দেখছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু তাতেও উত্তেজনার পারদ না কমে বরং ক্রমশ বাড়ছে।

টি২০ বা বিশ্বকাপে এগিয়ে থাকলেও এই ম্যাচে ভেন্যুর কারণে এগিয়ে থাকবে পাকিস্তান। ইডেন গার্ডেনে সীমিত ওভারের সংস্করণে ভারতকে সবসময় টেক্কা দিয়ে এসেছে পাকিস্তান। বলা ভালো, ভারতের মাটিতে পাকিস্তানের দুর্গ ইডেন গার্ডেন! ১৯৮৭ থেকে ২০১৩- এ সময়ের মধ্যে ইডেনে ভারতের বিপক্ষে চারবার ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়ে প্রতিবারই জিতেছে পাকিস্তান।

সেই নন্দনকাননে দুই প্রতিবেশীর প্রথম টি২০ যুযুধান সামনে রেখে সুনীল গাভাস্কার তাই পাকিস্তানকেই ‘ফেভারিট’ মেনে নিয়েছেন। এছাড়াও চলতি বিশ্বকাপ শুরুর আগে ইডেনে প্রস্তুতি ম্যাচ জেতার পাশাপাশি মূল পর্বে বাংলাদেশকে সেই ইডেনেই উড়িয়ে দেয়া পাকিস্তানের ‘নন্দনকানন’ ভাগ্য স্রেফ দুর্দান্ত।

টি২০ ক্রিকেটে মোট সাতবার মুখোমুখি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান। এর মধ্যে ছয়বারই জিতেছে ধোনির দল। ২০১২ সালে ভারতের বেঙ্গালুরুতে ২ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটের জয়টাই টি২০ ক্রিকেটে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে পাকিস্তানের সবেধন নীলমণি। সাতটি ম্যাচই খেলেছেন ভারতের অধিনায়ক ধোনি। পাক-ভারত টি২০ দ্বৈরথে সর্বোচ্চ ১০টি ডিসমিসালও তার দখলে।

তবে টি-২০তে ভারত এগিয়ে থাকলেও একদিনের ক্রিকেটে পাকিস্তান এগিয়ে। মােট ১২৭ বারের সাক্ষাতে পাকিস্তান জিতেছে ৭২ বার। আর ভারতের জয় ৫১ ম্যাচে। এছাড়া ৫৯ টেস্টের ১২টিতে পাকিস্তান, ৯টিতে ভারত জিতেছে।

পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডের মতো টি-২০’র সর্বোচ্চ ইনিংসটিও কােহলির। ২০১২ সালের বিশ্বকাপে কলম্বোতে অপরাজিত ৭৮ রান করেছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসটি ভারতের হলেও ওপেনিং জুটির রেকর্ডটি পাকিস্তানের। ২০১২ সালে মোহাম্মদ হাফিজ ও নাসির জামসেদ দুজনে মিলে গড়েছিলেন ২২৪ রানের জুটি। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসের মতো ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি বিরাট কোহলির। চার ম্যাচে ১৫০ রান করেছেন তিনি। তবে বেশি ফিফটি করেছেন মোহাম্মদ হাফিজ (২টি)।

টি-২০তে দুদলের বােলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছেন উমর গুল। ১৬ দশমিক ১৮ গড়ে ১১ উইকেট নিয়েছেন এই পেসার। সেরা বােলিং ৩৭ রানে ৪ উইকেট। ভারতের হয়ে সেরা বোলিংটা ভুবেনেশ্বর কুমারের। ৯ রানে তিনি নিয়েছিলেন ৩ উইকেট।

দুদলের মধ্যে টি-২০তে এক ম্যাচে বেশি ছক্কা হাঁকিয়েছেন যুবরাজ সিং। ২০১২ সালে আহমেদাবাদে মোট সাতটি ছক্কা মেরেছিলেন জুবি। ওই ম্যাচে ৩৬ বলে ৭২ রান করেন তিনি।

দুই দলে লাইমলাইটে থাকবেন যারা। ভারতের পক্ষে রোহিত শর্মা। বড় ম্যাচে বড় কিছু করার যার প্রায় অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া বিরাট কোহলি আছেনই।  সেই সঙ্গে ব্যাটিংয়ে যুবরাজ-সুরেশ রায়নার যে কেউ যেকােনাে সময় ম্যাচের ভাগ্য ঘুরিয়ে দিতে পারেন।

বোলিংয়ে বুমরাহের সাথে অলরাউন্ডার পান্ডিয়া। স্পিনার রবিচন্দন অশ্বিনের ঘুর্ণির সাথে আশিষ নেহরার বুড়ো হারের ভেলকি তো থাকছেই।

পাকিস্তানের হয়ে অবশ্যই মোহাম্মদ আমির। থাকবেন আফ্রিদিও। এই ম্যাচে আর দুটি উইকেট পেলেই লাসিথ মালিঙ্গাকে টপকে টি২০ সর্বাধিক উইকেট শিকারি হয়ে যাবেন বুমবুম। ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ম্যাচ দিয়ে ছন্দে ফিরেছেন আহমেদ শেহজাদ ও মোহাম্মদ হাফিজ।

এই ম্যাচে এক অচেনা পাকিস্তানকেই দেখবে ভারত। কারণ পাকিস্তানের ১৪ সদস্যের মাত্র পাঁচজন আগে ভারতের বিপক্ষে খেলেছেন। শহীদ আফ্রিদি, শোয়েব মালিক, মোহাম্মদ হাফিজ, আহমেদ শেহজাদ ও উমর আকমল ছাড়া বাকিদের কেউ ভারতের বিপক্ষে আগে খেলননি। বিপরীতে ভারতীয় দলের ৯ জনই আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেছেন।

ইডেনের পিচ ঐতিহ্যগতভাবেই স্পিনারদের অনুকূলে থাকে। গত সোমবারের পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা অনুশীলন ম্যাচের পর বাংলাদেশ-পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান ম্যাচেও সেটা দেখা গেছে। তবে পেসারদের জন্যও কিছুটা বাউন্স থাকে।

আর মৌসুম অনুযায়ী কলকাতায় এই সময়টা ঝড়-বৃষ্টির। তবে ভার-পাকিস্তান ম্যাচকে সামনে রেখে প্রকৃতি বাধা হওয়ার কোনো আভাস এখনো  নেই। ওয়েদার ডটকমের পূর্বাভাস অনুযায়ী আজ কলকাতার আকাশ ঝকঝকেই থাকবে। তাপমাত্রা থাকবে ২৭-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এশিয়া কাপের সময় ভারত এগিয়ে থাকলেও এই ম্যাচে জয়-পরাজয়ের প্রেডিকশনে এগিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসের জরিপে দেখা যায়, ভারতের জয়ের পক্ষে ৪৮ ও পাকিস্তানের পক্ষে ৫২ ভাগ মত দিয়েছেন।

সম্ভাব্য ভারত দল:  মহেন্দ্র সিং ধোনি (অধিনায়ক), রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, সুরেশ রায়না, যুবরাজ সিং, বিরাট কোহলি, আশিস নেহরা, হার্দিক পান্ডে, রবীন্দ্র জাদেজা  রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং  জাসপ্রিত বুমরাহ।

সম্ভাব্য পাকিস্তান দল: শহীদ আফ্রিদি (অধিনায়ক), সারজিল খান, মোহাম্মদ হাফিজ, উমর আকমল, শোয়েব মালিক, ইমাদ ওয়াসিম, সরফরাজ আহমেদ, আহমেদ শেহজাদ, ওয়াহাব রিয়াজ, মোহাম্মদ আমির ও মোহাম্মদ ইরফান।