চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ক্রিকেট উন্মাদনা: ভারতীয়রা নিজেদের শ্রেষ্ঠ মনে করে, বাংলাদেশিরাও কম না

ক্রিকেটপ্রেম থেকে উন্মাদনা। ঠিক যেন উন্মাদই হয়ে পড়েন ক্রিকেট ভক্তরা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশ-ভারত সেমিফাইনালের আগেও সেটা চলছে।

কিন্তু, ক্রিকেট উন্মাদনা থেকে কখনও কখনও ভক্তরা বানিয়ে ফেলেন অন্যকে আঘাত করার মতো ভিডিও বা ছবি। জিআইএফ ফটোও কখনও কখনও ভাইরাল হতে দেখা যায় ইন্টারনেট দুনিয়ায়।

কিন্তু কেন মানুষ এসব করে? কেনই বা অন্যকে আঘাত করে নিজেদের জাতীয়তা প্রকাশের প্রবণতা দেখা যায় সবার মধ্যে?

বিষয়টি ব্যাখ্যা করছিলেন ‘নিও মিডিয়া’ বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক।

চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: প্রকৃতিগতভাবেই জাতীয়তাবাদের প্রকাশটা গড়ে উঠেছে অন্যকে অবমাননা বা আরো দৃঢ়ভাবে বলতে গেলে অন্যকে ঘৃণা করার মধ্যে দিয়ে। সবাই ভেবে থাকেন আমারটাই শ্রেষ্ঠ। সেটা করতে গিয়েই অন্যকে অবমাননার কথা আসছে।

বাংলাদেশ ভারত ক্রিকেট ম্যাচ
ফাহমিদুল হক

রাজনীতিসহ অন্যান্য বিষয়ে তো বটেই, খেলার ক্ষেত্রেও দেখা যায় সবাই যেন একটা যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে চলে যায়।

এই গবেষক বলেন, ক্রিকেট তো খেলার কথা। একটা টিমের সাপোর্টার হলে নিজের টিমের নানান বিষয়ে কথা বলবেন এবং অন্য টিমের নানান দোষ খুঁজে বের করবেন সেটাই স্বাভাবিক।

‘কিন্তু একসময় সেখানে প্রধান হয়ে পড়ে নিজেকে জাহির করা। ফলে যেন তৈরি হয়ে পড়ে যুদ্ধের পরিস্থিতি এবং মানুষ ধ্বংসাত্বক হয়ে উঠে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে তার মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তানজীনা তানীন রিসার্চ করেছেন এই বিষয়ে। তার গবেষণার শিরোনাম: বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট ম্যাচকে ঘিরে দুইদেশের ভক্তদের জাতীয়তাবাদী অভিপ্রকাশ: ইউটিউব ভিডিওর আধেয় ও মন্তব্য বিশ্লেষণ।

গবেষণায় উঠে আসা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দুই দেশের ভক্তদের জাতীয়তাবাদী অভিপ্রকাশের পেছনের মনস্তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।

চ্যানেল আই অনলাইনকে তানজীনা তানীন বলেন: আমার রিসার্চ মূলত দুই দেশের ক্রিকেট ভক্তদের নিয়েই ছিলে। আর সেখানে আমি যেটা পেয়েছি সেটা হলো ভারতবাসী সবসময় নিজেদের সেরা ভাবার একটা প্রবণতা থাকে। আর অন্যদিকে বাংলাদেশও সম্প্রতি ভালো খেলছে বলে তাদেরও কিছু চাওয়া-পাওয়া থাকে।

‘সেই জায়গা থেকেই তৈরি হচ্ছে বিরোধটা। আর এর মধ্যে দিয়েই শুরু হচ্ছে যেন প্রতিযোগিতার মনোভাব। সেই জায়গা থেকেই শুরু হচ্ছে একে অন্যকে আক্রমণ। যেটা দেখতে পাচ্ছি আমরা সবাই।’

বাংলাদেশ ভারত ক্রিকেট ম্যাচ
তানজীনা তানীন

তবে এই সমস্যা প্রকট হওয়ার পেছনে ফেসবুকই কি বেশি প্রভাব রাখছে?

ড. ফাহমিদুল হক তাই মনে করেন। তিনি বলেন, ঘৃণার প্রসারটা অনলাইনেই বেশি দেখা যায়। কারণ অনলাইনে ব্যক্তির পরিচয়টা গোপনে থাকে। মানে অনেকেই ছদ্মনাম ব্যবহার করে, বা সে যখন লেখে তখন একাই থাকে। লেখার পরে হয়তো সবাই দেখবে কিন্তু ওই মুহূর্তে কেউ নেই। ফলে অপরকে বিবেচনা করা বা মনে রাখার যে নর্মস সেটা খুব বেশি মনে থাকে না।

‘পাশাপাশি সচেতনতার অভাব তো আছে। তারা বোঝেই না, যেটা সে লিখছে সেটা সবাইকে না হলেও কাউকে না কাউকে আঘাত করে। আমি অন্যকে আঘাত করে লিখতে পারি না।’

তানজীনা তানীন বলেন, আগেও হয়তো এভাবে কোন বিষয় নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো। কিন্তু এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে সেটা সহজেই বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। আগে যেটা  ১০ জন দেখতো এখন সেটা মুহূর্তেই লাখ লাখ মানুষ দেখে ফেলেছে। ফলে ক্ষোভ বাড়ছে। অনেক সময় সেটা পুঞ্জীভূত হচ্ছে এবং একসময় ‘ব্লাস্ট’ হচ্ছে।

সমস্যার সমাধানের করণীয় বলতে গিয়ে ফাহমিদুল হক বলেন, আমি ন্যয্য কথা বললেও যুক্তি দিয়ে, ভাষা দিয়ে বলার সুযোগ আছে। সেই পথটাই আমাদের অবলম্বন করতে হবে। অন্যের আবেগকে গুরুত্ব না দেওয়ার প্র্যাকটিস নিশ্চয়ই গ্রহণযোগ্য নয়।