অর্থহীন কোন কথা নেই। অকারণ আড্ডা-গল্পও নেই। প্রয়োজনের সময় যেটুকু প্রয়োজন তাই। যা বলবে পয়েন্ট টু পয়েন্ট কথা। বলছি, আহমেদ রেজার কথা। যুক্তির মাথায় যুক্তি দিয়ে সমাধানযোগ্য আলোচনা করা যার অনেক গুণের মধ্যে অন্যতম গুণ।
স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন, স্বপ্ন দেখাতে ভালোবাসেন তিনি। একটি স্বপ্ন জন্ম দেওয়া থেকে শুরু করে লালন পালনের মধ্য দিয়ে পরিণত গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার পথ যেমন বিরামহীন খুঁজে বেড়ান নিজে, তেমনি খুঁজে পাওয়া পথের হদিস সহস্র তরুণকে বাতলে দেওয়ার কাজটিও যেন করে যান, করে যেতে চান বিরামহীন।
রেজার বিরামহীন এই পথচলা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকে। দেশের শীর্ষস্থানীয় বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে একই বিভাগে এমফিলে অধ্যয়নরত। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুটা দারুণ ছিলো রেজার। প্রথম বর্ষেই বিতর্ক চর্চায় ধাবিত হন। যৌক্তিক মানুষ হবার প্রেরণা নিয়ে অংশ নিতে থাকেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়। শুরু থেকে স্বীকৃতিও মেলে।
নিজের আবাসিক হল ঐতিহ্যবাহী জিয়া হল ডিবেটিং ক্লাবের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘পপুলেশন ডে ডিবেট-২০১২’ এ সেরা বিতার্কিক নির্বাচিত হন। এখান থেকে পেয়ে যান অসীম প্রেরণা। দৃষ্টি ছেড়ে দেন দূরে বহুদূরে। ২০১২-১৩ মৌসুমে জিয়া হল ডিবেটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসময়ে নেতৃত্ব দেওয়ার খুটিনাটি বুঝে ফেলেন। এ সময় ৫ম স্বাধীনতা দিবস বিতর্ক ২০১২, ৬ষ্ঠ স্বাধীনতা দিবস বিতর্ক -২০১৩, প্রথম বিজয় দিবস প্লানচেট বিতর্ক -২০১৩ আয়োজন করে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাফল্যের সাক্ষর রাখেন। এরপর ২০১২-২০১৩ সালে বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ ডিবেটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং ২০১৩-২০১৫ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বিতর্ক জগতের অভিজ্ঞতা রেজার প্রাণশক্তি বাড়িয়ে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। গভীর দৃষ্টি দিয়ে ভাবতে ভাবতে পেয়ে যান জ্ঞান অন্বেষণের নতুন এক দিগন্তের সন্ধ্যান-কুইজ। জ্ঞান চর্চার অনেক পুরনো পদ্ধতি কুইজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কুইজ চর্চা করেন এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সাফল্যও পান। কিন্তু কুইজের কোন নির্দিষ্ট প্লাটফর্ম নেই ক্যাম্পাসে। বিষয়টি ভাবাল রেজাকে। চিন্তা করলেন এই প্লাটফর্ম নিজেই প্রতিষ্ঠা করবেন। সেই চিন্তা বাস্তবে রূপ নেয় ৫ মে ২০১৫ সালে। কয়েকজন প্রাণঞ্চল শিক্ষার্থীকে সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কুইজ সোসাইটি। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে নতুন ধরণের আইডিয়া নিয়ে কুইজ চর্চা চলতে থাকে রেজার নেতৃত্বে। প্রতি সপ্তাহে চলে নিয়মিত সেশন।
২৬-২৮ নভেম্বর ২০১৫ সালে সোসাইটির পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো আয়োজন করেন ডিইউকিউএস কুইজ ফেস্ট-২০১৫, কুইজ ফেস্ট-২০১৬, বিজয় দিবস কুইজ-২০১৫ ও ২০১৬, বেগম রোকেয়া স্মৃতি কুইজ-২০১৬, ইন্টারন্যাশনাল কুইজিং চ্যাম্পিয়নশীপ-২০১৬ এর বাংলাদেশ পর্ব এবং প্রথমবারের মতো আয়োজন করেন স্পোর্টস কুইজ কনটেস্ট। এছাড়াও নিয়মিতভাবে আয়োজন করে আসছেন কুইজের উপর নিয়মিত সেশন, সভা ও কর্মশালা। প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানেই রেজা দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন কুইজ মাস্টার হিসেবে। এভাবেই ক্রমে বিতার্কিক রেজা পরিচিতি পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুইজ মাস্টার হিসেবে। বিতার্কিক ও কুইজের বাইরে রেজার অন্য পরিচয় একজন এমফিল গবেষক। সম্প্রতি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উব্দুব্ধ করার জন্য যাত্রা করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে রেজার লক্ষ্য একটাই, দেশ মাটি ও মানুষের জন্য কাজ করা। আর সেটি হবে তরুণদের মধ্যে সৃজনশীলতার বীজ বুনে দিয়ে মাতৃভূমিকে এগিয়ে নেওয়া। কারণ, রেজা বিশ্বাস করেন, তারুণ্যের সৃজনীশক্তিই সম্মিলিতভাবে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে পারে।