বাংলাদেশে জঙ্গিদের অর্থায়ন করে এমন সংগঠনগুলোর বিষয়ে অবশেষে কঠোর হচ্ছে ব্রিটিশ সরকার। দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে ডেভিড ক্যামেরন ইসলামী চরমপন্থী দমনে নতুন যে আইন করতে যাচ্ছেন তাতে আপাত: নিরীহ কিন্তু গোপনে জঙ্গি মদদদাতা ওইসব সংগঠনও নিয়ন্ত্রণের আওতায় আসবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
তারা বলেছেন, একসময় এরকম অবস্থা ছিলো যে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চৌধুরী মঈনউদ্দিন প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে একই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এবং একসঙ্গে ছবি তোলারও সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু যেসব সংগঠন ভিন্নভাবে গোপনে ‘ঘৃণা ছড়ায় এবং ঘৃণা ছড়ানোর পরামর্শ দেয়‘ তারাও নতুন আইনের আওতায় আসলে মঈনউদ্দিনদের মতো ব্যক্তি আর তাদের সংগঠনগুলো নিয়ন্ত্রণের আওতায় আসবে।
জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ বিষয়ক গবেষক শাহরিয়ার কবির বললেন, একবার খবরে আসলো অস্ত্র নির্মাণের কারখানায় পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের একটি মাদ্রাসা। পরে জানা গেলো ওই মাদ্রাসার টাকা আসে ব্রিটিশ চ্যারিটি থেকে। তারা শিক্ষা বিস্তারের নামে টাকা দেয় আর সেটা এদেশে অস্ত্র নির্মাণের কাজে ব্যবহার হয়। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো বাংলাদেশি জড়িত আছেন, যিনি কিনা ব্রিটেনে বসবাস করেন। তারাইতো জঙ্গিবাদে মদদ দিচ্ছে। তারা যদি এখন এসব ব্যাপারে একটু কঠোর হয় তাহলে বাংলাদেশও জঙ্গিবাদের হাত থেকে অনেকটা রেহাই পেয়ে যাবে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক আমেনা মহসীন বলেন, মুসলিম এইডের মতো সংস্থাগুলোর দিকে আমাদেরও নজর আছে। সেসব যদি বন্ধ করা হয় তাহলে বাংলাদেশ লাভবানই হবে। যেসব অর্থায়ন বাংলাদেশকে ক্ষতির মুখোমুখি করছে সেসবের দিকে ভিন্নভাবে নজর দিতে হবে। দেশের লাভ-ক্ষতি কারা করছে সেটা আমাদেরকেও ভালো করে বুঝে নিতে হবে।
সঙ্গে অবশ্য তিনি একথাও বলেছেন, বাংলাদেশ এখন কতোটা গণতন্ত্রের পথে হাঁটছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সারাবিশ্বেরই নজর বাংলাদেশের দিকে। আর এদেশে একটা পর একটা ব্লগার হত্যার বিষয়টাও সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। এসব তো ইসলামী চরমপন্থীদেরই কাজ। কিন্তু এসব ব্যাপারে সরকারের ভূমিকা ঠিক দৃশ্যমান নয়। সুতরাং সরকারের উপরও কিছুটা চাপ আসবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আরেক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ অবশ্য মনে করেন, বাংলাদেশের উপর তেমন কোনো চাপ সৃষ্টি হবে না। বিষয়টাকে বরং ব্রিটেনের আভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দেখাই ভালো। আর বাংলাদেশি যেসব মুসলিম ব্রিটেনে রয়েছেন তারা ব্রিটিশ নাগরিক। তাদের মধ্যে যারা জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত না তারা নিশ্চয়ই কোনো ঝামেলা পোহাবেন না।
তবে আমেনা মহসীন মনে করেন, যারা ওখানে বৈধভাবে নিজেদের নাগরিকত্ব পেয়েছেন তারা একটা অবস্থানে থাকলেও অন্যরা বেশ চাপে পড়বে। তিনি আরো বলেন, আমরা সবসময় শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক চাপের দিকেই নজর দিই, কিন্তু এর ফলে সামাজিক একটা চাপও আসবে দেশের উপর।
ভিসা বা ব্রিটেনে পড়াশোনার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্রিটেন থেকে কোনো ব্যাপারে চাপ তৈরি হওয়া মানেই পুরো ইউরোপের পক্ষ থেকে চাপ আসা। নতুন আইনের পর দেখা যাবে ব্রিটেনের ভিসা বা সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ নিয়েও অনেক সমস্যা হচ্ছে। সেটা আবার অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোও অনুসরণ করতে পারে।
একইরকম মনে করেন জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ বিষয়ক গবেষক শাহরিয়ার কবির। আইনটি কার্যকর হলে ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের উপর যে প্রভাব আসবে সেটা কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের সন্তানরাও আমাদের সন্তান। তারা যদি জঙ্গিবাদের খপ্পড়ে পড়ে তাহলে তো শেষ পর্যন্ত আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাই শুধু অাইন নয়, শিক্ষার মাধ্যমেই তাদেরকে জঙ্গিবাদের প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে।
তিনি বলেন: কেবল একটি দেশ নয়, সবগুলো দেশ মিলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। টাস্কফোর্স গড়তে হবে সব দেশ মিলে। ধর্মান্ধতা ও বর্ণবাদ দূর করতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই কেবল এসব চরমপন্থার বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করা সম্ভব।
অবশ্য নতুন অাইন উদ্যোগের সমালোচনা করেছে দি মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন। তারা ক্যামেরন সরকারকে মুসলিম কমিউনিটির সঙ্গে আরো আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে।