চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ক্যান্সারের চিকিৎসা বন্ধের সিদ্ধান্তের পরই মারা গেলেন জন ম্যাককেইন

মস্তিষ্কের ক্যান্সারের কাছে হার মেনে পরলোকগমন করেছেন মার্কিন রিপাবলিকান সিনেটর ও ২০০৮ সালের যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জন ম্যাককেইন।

শনিবার তার দপ্তর থেকে পাঠানো বিবৃতিতে জানানো হয়, ২৫ আগস্ট বিকাল ৪টা ২৮ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

গুরুতর আকার ধারণ করা মস্তিস্কের ক্যান্সারের চিকিৎসা শুক্রবারই বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন ম্যাককেইন। রোগ ধরা পড়ার এক বছর পর চিকিৎসায় ক্ষান্ত দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।

আর ঠিক তার পরদিনই বর্ষিয়ান এই সিনেটর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ম্যাককেইনের পরিবারের পক্ষ থেকে শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল: জন তার বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছেন। ‘গিলোব্লাস্টোমা’র (সবচেয়ে মারাত্মক প্রকৃতির ব্রেইন ক্যান্সার) চূড়ান্ত অবস্থা আর নিজের বয়স (৮১ বছর) বিবেচনা করে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

‘নিজের চিরায়ত ইচ্ছাশক্তির বলে তিনি এবার ঠিক করেছেন এর চিকিৎসা বন্ধ করে দেবেন,’ বিবৃতিতে বলেছিল ম্যাককেইনের পরিবার।

ভিয়েতনাম যুদ্ধে লড়ে যুদ্ধবন্দী হিসেবে ৬ বছর কারাগারে কাটিয়েছিলেন জন ম্যাককেইন। ওই সময় বহু নির্যাতন সহ্য করেও নিজ দেশের কোনো তথ্য প্রকাশ করেননি তিনি। উদ্ধার হয়ে দেশে ফেরত আসার পর রিপাবলিকান হিসেবে রাজনীতি শুরু করেন।

দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ম্যাককেইন। এর মাঝে ২০০০ সালে রিপাবলিকান দল থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দৌড়ে জর্জ ডব্লিউ বুশের কাছে হেরে যান। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে হেরে যান ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বারাক ওবামার কাছে।

২০১৭ সালের জুলাইয়ে জন ম্যাককেইন তার গিলোব্লাস্টোমা ধরা পড়ার কথা জানান। চলতি বছরে অসুস্থতার কারণে ক্যাপিটলে উপস্থিতও থাকতে পারেননি। অন্ত্রে সংক্রমণের চিকিৎসায় গত এপ্রিলে তার একটি জটিল অস্ত্রোপচার হয়েছিল।

স্পষ্টভাষী এবং পররাষ্ট্রনীতিতে রিপাবলিকান রক্ষণশীল মনোভাবের জন্য সুপরিচিত ছিলেন সিনেটর ম্যাককেইন। তার গরম মেজাজেরও ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে রাজনৈতিক মহলে।

তবে বেসামরিক ও দ্বিপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিভিন্ন বিষয় বিচার করতে পারার জন্য বিপুল সংখ্যক ডেমোক্র্যাট ভক্ত রয়েছে তার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে ওপর প্রকাশ্যেই নিজের বিরোধিতার কথা জানিয়ে আসছিলেন ম্যাককেইন।

জন ম্যাককেইনের জীবনের বিশেষ কিছু মুহূর্ত

যুদ্ধবন্দী হিসেবে বন্দীশিবির থেকে মুক্তি (১৪ মার্চ, ১৯৭৩)
১৯৭৩ সালের ১৪ মার্চ ৩৬ বছর বয়সী যুবক জন ম্যাককেইন যখন অন্য আমেরিকান যুদ্ধবন্দীদের সঙ্গে হাড্ডিসার দেহে কুঁচকানো ময়লা পোশাক জড়িয়ে ভিয়েতনামের একটি বন্দীশিবির থেকে বের হচ্ছিলেন, তাকে চিনতে পারাটাই ছিল কষ্টের।জন ম্যাককেইন-ক্যানসার

’৬৭ সালে হ্যানয়ের ওপরে তার যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করার সময় তার চুলগুলো ছিল গাঢ় রঙের। মুক্তি পেয়ে বের হওয়ার সময় প্রায় সবগুলো চুলই ছিল হয় ধূসর, নয় সাদা। তার বয়স অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল।

বিধ্বস্ত প্লেন থেকে প্রাণে বাঁচতে লাফিয়ে পড়া আর প্রায় ছয় বছর কারাগারে নির্যাতন সইতে সইতে পায়ে বড় রকমের ক্ষতি হয়েছিল তার। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে মার্কিন সেনাবাহিনীর উড়োজাহাজে চড়ে দেশে ফিরেছিলেন তিনি।

এর এক মাস পরই ম্যাককেইনকে রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন। কিন্তু পায়ের ওই ক্ষত পুরোপুরি সারেনি আর। পরে খোঁড়ানো প্রায় ঠিক হয়ে গেলেও বাকি জীবন দু’হাত মাথার ওপর তুলতে পারেননি তিনি।

কংগ্রেসে নির্বাচন (২ নভেম্বর, ১৯৮২)
ম্যাককেইন রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যোগ দেন ফিনিক্স থেকে রিপাবলিকান সমর্থক সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি উন্মুক্ত আসনে জয়লাভের মধ্য দিয়ে। এর কিছুদিন পর তিনি সিন্ডিকে বিয়ে করে অ্যারিজোনায় চলে যান এবং ফিনিক্সের ধনী ব্যবসায়ী বাবার ব্যবসায় কিছুটা সময় দেন। সিন্ডি তার দ্বিতীয় স্ত্রী। সঙ্গে চলতে থাকে জনসংযোগ।

অ্যারিজোনা থেকে কংগ্রেসম্যান হিসেবে রিপাবলিকান দলের প্রার্থিতা পেতে গিয়ে প্রাইমারি বিতর্কে প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে ৬ শতাংশ বেশি ভোট পেয়েছিলেন তিনি। আর ২ নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় ভোট পেয়েছিলেন দ্বিগুণেরও বেশি।

এরপর সময়ের সাথে সাথে অর্জন করেছেন কংগ্রেশনাল ক্লাসের প্রেসিডেন্ট, হাউজ অব ফরেইন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্যসহ বহু সম্মানজনক পদ।

অ্যারিজোনা থেকে সিনেটর পদে নির্বাচন করেও জয় পান জন ম্যাককেইন। সেই একই পদ টানা ৩১ বছর ধরে রেখেছিলেন তিনি।

দুর্নীতির কলঙ্ক মোচন (২০ নভেম্বর, ১৯৯১)
আমেরিকান রাজনীতির অনেক বড় একটা সত্য হলো অফিস চালানো আর পুননির্বাচিত হওয়ার কাজে প্রয়োজনীয় তহবিল যোগাড়ের আশায় নির্বাচনের প্রার্থী ও তাদের কর্মীদের নিত্যদিন ছুটোছুটিতে ব্যস্ত থাকতে হয়।

একই জটিলতা সামাল দিতে গিয়ে জন ম্যাককেইন কংগ্রেসম্যান পদে নির্বাচনের সময় ফিনিক্সের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্য দাতার সহায়তা নিয়েছিলেন। তাদেরই একজন ছিলেন রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার চার্লস কিটিং। তার কাছ থেকে অর্থ সহায়তা নেয়ার ফলে দুর্নীতির কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়ে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার প্রায় ডুবতে বসেছিল ম্যাককেইনের।

পরে অবশ্য নিজের ভুল সিদ্ধান্তের কথা স্বীকার করে জন ম্যাককেইন এই জটিলতা থেকে উঠে আসেন এবং নিজের সম্মান রক্ষা করতে সফল হন। তবে ওই সময় থেকেই তহবিল সংগ্রহ একটা বিরক্তিকর বিষয় হয়ে ওঠে তার জন্য। এরপর থেকে পারতপক্ষে বিষয়টি এড়িয়েই চলার চেষ্টা করে এসেছেন তিনি।