চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

কৌশলে জামায়াতকেই কাছে টানলেন ড.কামাল

ড. কামাল হোসেন সম্ভবত এই দেশের সবচেয়ে সৌভাগ্যবান এলিট রাজনীতিবিদ। কখনো মাঠের পরিশ্রমী রাজনীতি না করেও অল্প বয়সেই বঙ্গবন্ধুর বদান্যতায় সবই পেয়েছিলেন। ড. কামালের পরিচয় বঙ্গবন্ধুর সহচর হয়ে সংবিধান প্রণয়ন ও মৌলবাদ বিরোধী ভূমিকায় থাকা একজন প্রগতিশীল মানুষ হিসেবে। এক সময় মৌলবাদী রাজনীতির বিরোধিতাকারী ড.কামাল সরকার বিরোধী ভূমিকায় নেমে ডান-বাম সবার ভেদাভেদ হয়তো ভুলে গেছেন। তাই তার জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার মঞ্চে বাম নেতা জোনায়েদ সাকী যেমন থাকে তেমনি কট্টরপন্থী হেফাজত ইসলামের নেতাও জায়গা পান। এবং বিএনপি নেতাদের উপস্থিতি প্রমাণ করে কৌশলী ভূমিকা নিয়ে তিনি জামায়াতকেই কাছে টানলেন।

সরকার বিরোধী ভূমিকা রাখতে গিয়ে তিনি সরকারের বাইরে থাকা সকল রাজনৈতিক দল নিয়ে সরকার বিরোধী জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। তিনি গণতন্ত্রের জন্য লড়বেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন অথচ অরাজনৈতিক ১-১১ এর সেনা সমর্থিত সরকারকে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ বলে বৈধতা দিয়েছিলেন তিনি। শুধু তাই নয় তার জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার মঞ্চে ১/১১ এর অন্যতম কুশীলব ব্যরিস্টার মঈনুল হোসেনকে দেখে অনেকেরই খটকা লাগার কথা। সবার মনে একটা প্রশ্ন জেগেছে তাহলে কি ড. কামাল শেখ হাসিনা সরকার বিরোধী ভূমিকা নিতে গিয়ে আবারো অগণতান্ত্রিক কোন সরকার আনতে চাচ্ছেন?

ড. কামাল প্রথম থেকে বলে আসছেন তিনি মৌলবাদী ও স্বাধীনতাবিরোধী কাউকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় সামিল করবেন না, বিএনপি যদি ঐক্য প্রক্রিয়ায় সামিল হয় তবে বিএনপিকে জামাত ত্যাগ করার শর্তও জুড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ২২ সেপ্টেম্বরের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু মধ্য দিয়ে তার কর্মকাণ্ড সেখানে তিনি কি বার্তা দিলেন? বিএনপি নেতারা এসেছেন কিন্তু বিএনপি এখনও জামাত ত্যাগ করেনি, তাহলে কি জামাতকে কৌশলে সাথে নিয়েই জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু দিলেন সবসময় জামায়াত বিরোধিতায় নিজেকে উপস্থাপন করা ড. কামাল হোসেন, সেটি জাতি জানতে আগ্রহী। ড.কামাল আরো একটি কথা বলে আসছিলেন তার এই ঐক্য প্রক্রিয়া কারো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা বা কাউকে মুক্ত করার মিশন নয়। কিন্তু মহানগর নাট্যমঞ্চে দেখা গেলো উপস্থিত অধিকাংশ মানুষ খালেদার মুক্তি চেয়ে শ্লোগান দিচ্ছে তারেক রহমানের নাম জপছে। এ থেকেই বোঝা যায় ড.কামালের ঐক্য প্রক্রিয়ার পিছনে কারা রয়েছে বা কাদের নিয়ে তিনি ঐক্যের কথা বলছেন।

ফাইল ফটো

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার মঞ্চ আর একটি কারণে সবার চোখে পড়েছে তা হলো, গণ সংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকী এসেছিলেন, তেল গ্যাস রক্ষা কমিটির শেখ শহীদুল্লা এসেছিলেন। সাকি-শহীদুল্লা ও তাদের সমমনা বামপন্থী কমরেডগন ড. কামালকে বলতেন মার্কিন ও বিদেশী তেল-গ্যাস কোম্পানির এদেশীয় এজেন্ট, একই সাথে সভা সমাবেশে ড. কামাল’কে মার্কিন এজেন্টও বলেছেন তারা অসংখ্যবার। তিনি দেশের স্বার্থের চেয়ে বিদেশি তেল কোম্পানির স্বার্থ ভালো বোঝেন বলে তারা বলেন।

তিনি রাজাকার, মানবতা বিরোধী অপরাধীদের পক্ষে কখনও আদালতে দাঁড়াননি। যদিও তিনি তার জামাতা ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে মানবতা বিরোধী অপরাধীদের পক্ষে দাঁড়ানোই শুধু নয় সব ধরনের বিদেশি সহযোগিতা জোগাড় করে দেওয়া ঠেকাতে পারেননি। তিনি তার জামাতা’কে জাতির স্বার্থে কাজে লাগাতে পারেননি, তিনি কি করে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের উদ্যোক্তা বিএনপিকে বশে নিয়ে জাতির জন্য কাজ করবেন!

আয়কর ফাইল খুলেছেন অনেক দেরিতে এবং তিনি আয়কর না দেওয়ায় জরিমানাও দিয়েছেন। বিগত ১/১১ এর সরকারের সময়ে আমরা জানতে পারি ড. কামাল বছরে মাত্র ২১ হাজার টাকা আয়কর দেন। যা তার আয়ের সাথে কোন মতেই খাপ খায় না। কারণ যে আইনজীবী আদালতের বারান্দায় হাটলেই কয়েক লাখ টাকা ফি নেন তার বছরে মাত্র ২১ হাজার টাকা কিভাবে আয় কর হয়? তিনি নিজে আয়কর দেন না ঠিকমতো, সেই তিনিই কিভাবে দুর্নীতি মোকাবেলা করে দেশকে উন্নতির পথে নিয়ে যাবেন!

এমনকি নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নার কথাও যদি বলি, তিনি জেল খেটেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি ‘লাশ’ চাওয়ার কারণে। যেকোনও সুস্থ রাষ্ট্রই এরকম ভয়ঙ্কর উস্কানির জন্য যেকোন ব্যক্তিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারে এবং সেটা ন্যায়সঙ্গত। প্রশ্ন হলো, ড. কামাল হোসেন কি তার ঐক্যের শরিকদের সঙ্গে আগেই এসব বোঝাপড়া করে নিয়ে আইনি দায় নিজের কাঁধে নিচ্ছেন? নাকি তিনি শেখ হাসিনাকে সরানোর উদ্দেশ্যে এসব অমীমাংসিত সমস্যার কোনোরকম সমাধান ছাড়াই একটি আওয়ামী বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলতে যাচ্ছেন?

সেখানে বামপন্থী জোনায়েদ সাকি, শেখ শহীদুল্লা, ডানপন্থী হেফাজত সমর্থক একাংশের মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের আর সুশীল ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, ডা. জাফরুল্লা এই অদ্ভুত ডান-বাম-মধ্যপন্থী সংমিশ্রণে কি জাতীয় ঐক্যের প্রতিশ্রুত সমতা-ন্যায় বিচার ও সকল জনগণের অধিকারের নিশ্চয়তা তৈরি হবে? অতীতেও দেশের জনগণ তাদের উপরে আস্থা রাখতে পারেনি, ভবিষ্যতেও রাখার সম্ভাবনা নাই। জনাব সিনহা’র মতো তাদের ঐক্য প্রক্রিয়াও “স্বপ্নভঙ্গ” হবে বলেই তাদের অদ্ভুত এই রাজনৈতিক ঐক্য দেখে প্রতীয়মান হয়।

( এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)