কোভিড-১৯ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি আচরণের উন্নয়ন (হাইজিন) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও ২০২০-২১ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে যথেষ্ট গুরুত্ব পায়নি বলে দাবি করেছে স্বাস্থ্য খাতে কাজ করা উন্নয়ন সংস্থা গুলো।
একই সঙ্গে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় এবং টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি) অর্জনের পথ সুগম করতে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্যবিধি আচরণের উন্নয়ন বা হাইজিন খাতের উপ-খাতগুলোর বরাদ্দ অপর্যাপ্ত বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রোববার ইউনিসেফ, ওয়াটারএইড, পিপিআরসি, ফানসা-বিডি, ডব্লিউএসএসসিসি-বি, এফএসএম নেটওয়ার্ক, স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল এবং ওয়াশ অ্যালায়েন্সের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে আলোচকরা এ কথা জানান।
তারা বলেন: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমন মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষ করে পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতের চ্যালেঞ্জ অনেকগুনে বেড়ে গেছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সংক্রমণ এবং মৃত্যু দু’টিই উর্ধ্বমুখী হওয়ায় স্বাস্থ্য এবং ওয়াশ খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতীয় বাজেটে প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দের বিষয়টি আরও জোরালো হয়েছে। বর্তমান অবস্থায় দেশের পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন পরিস্থিতির উন্নয়নের বিষয়টিও আরো জরুরিভাবে সামনে এসেছে। তবে, প্রস্তাবিত বাজেটে এ চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়গুলো বিবেচিত হয়নি।
তারা আরও বলেন, এ খাতে যথাযথ অর্থ বরাদ্দ করা না হলে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে।
‘করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারি প্রতিরোধে বর্তমানে বাংলাদেশ এক কঠিন সময় অতিবাহিত করছে। এ প্রতিকূল সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, রাজস্ব, বৈদেশিক বাণিজ্য ও প্রবাসী আয়ের হার হ্রাস হওয়ার বিষয়টি বাজেট প্রণয়নসহ কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্যখাত ও হাইজিন বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মকা-ের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এবং এ খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে পিপিআরসি পরিচালিত গবেষণায় ওয়াশ বাজেট বরাদ্দের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি ও উর্ধ্বমুখী প্রবণতা প্রতিফলিত হলেও স্বাস্থ্যবিধি আচরণের উন্নয়ন বা হাইজিন খাত গুরুত্ব পায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গবেষণা তথ্যমতে, বৈশ্বিক মহামারির এ সময়ে বাজেটে মহামারি নিয়ে যথাযথ আর্থিক বরাদ্দসহ বাস্তবসম্মত বাজেট প্রণয়ন জরুরি হলেও ভাইরাস প্রতিরোধের পাশাপাশি জীবন ও জীবিকার ক্ষতির বিষয়ে সরকারের কৌশলগত বিষয়গুলো সেভাবে উঠে আসেনি। ২০২০-২০২১ সালের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রেও অপ্রতুল। পিপিআরসি পরিচালিত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ওয়াশ খাতের বরাদ্দের বিশ্লেষণে বিষয়গুলি উঠে এসেছে।
ওয়াশ খাতে বরাদ্দ গত বছর ১০৭.৯৬ বিলিয়ন টাকা থেকে বেড়ে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১২২.২৭ বিলিয়ন টাকায় উন্নিত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। তবে, বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে হাইজিন খাতে কম প্রাধিকার দেয়ার বিষয়টিও লক্ষণীয়। প্রস্তাবিত ওয়াশ বাজেটে হাইজিন খাতের উপ-খাতে ৫ শতাংশেরও কম বরাদ্দ রাখা হয়েছে; এবারও এ খাতে বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে শহরকেন্দ্রিকতার বিষয়টি অপরিবর্তিত রয়েছে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান তার সুপারিশে বলেন, চলতি মাসের শুরুতে এ নেটওয়ার্ক থেকে সুপারিশকৃত বিষয়গুলো তাৎক্ষণিকভাবে আমলে নেয়া জরুরি এবং এর পাশাপাশি হাইজিনকে জনস্বাস্থ্য ও বৈশ্বিক মহামারি প্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন এবং দেশজুড়ে হাইজিন ক্যাম্পেইনের ক্ষেত্রে আরও বেশি পরিমাণে বিনিয়োগের প্রয়োজন এবং জনপরিসরে হাত ধোয়ার স্থাপনা বসানোও জরুরি, যেখানে সাবান ও পানির ব্যবস্থা থাকবে।’
ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, ‘বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে রাখা ১০০ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দ তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা শহর ও বস্তি এলাকাগুলোতে হাত ধোয়ার স্থাপনা তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে, যা কোভিড-১৯ প্রতিরোধে দরিদ্র জনগণকে হাইজিন সুবিধা প্রদান করবে।’
নগর ও গ্রামীণ এলাকার মধ্যকার বরাদ্দের ক্ষেত্রে অসমতা বিরাজমান আছে। চারটি ওয়াসা এবং ১১টি সিটি করপোরেশনের আওতাধীন শহর ও এলাকাগুলো ধারাবাহিকভাবে এ খাতের জন্য অধিকাংশ বরাদ্দ পাচ্ছে; যদিও গ্রামীণ এলাকা, চরাঞ্চল ও প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে এর প্রয়োজনীয়তা অধিক। বিশ্লেষণে বিগত বছরগুলোতে নগর ও গ্রামীণ এলাকায় এ খাতের বরাদ্দ সংক্রান্ত তফাতের বিষয়টিও উঠে এসেছে গবেষণায়। গত পাঁচ বছরের সময়কালে এ খাতে শহর (৮০ শতাংশ-৮৩ শতাংশ) ও গ্রামীণ (২০ শতাংশ-১৭ শতাংশ) এলাকার বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।