পৃথিবীতে জীব জগতের কার্যকলাপের জন্য একটা সীমা নির্ধারণ করা আছে। সীমা লঙ্ঘনকারীকে তার শাস্তি পেতেই হবে। এ অবধারিত সত্যকে মানুষ মানতে নারাজ। বরং নিজেদের দাম্ভিকতা দিয়ে আমিত্ব জাহির করে অস্থির করছে পৃথিবীকে। অনিয়ম, দুর্নীতি, অসাধু পথে নিজেকে ক্ষমতাধর প্রমাণ করার খেলায় মত্ত মানুষ। অর্থ আর বৈভবের প্রভাব খাটিয়ে হনন করছে মানুষের ন্যায্য অধিকার। ন্যায় অন্যায় বিচারের বিবেক বোধ টুকু হারিয়ে যাচ্ছে এ সমাজের। ধর্মের নামে মানব হত্যা সারা দুনিয়াতে জন্ম দিয়েছে এক উগ্রবাদের৷ মানবিকতা হচ্ছে পরাজিত। প্রাকৃতিক বৈষম্যতা বিনষ্ট করে প্রকৃতিকে জয় করার উন্মাদনায় মত্ত মানুষ।
সৃষ্টির নিয়মকে না মানার পরিণতি যে কতটা ভয়াবহ তা করোনাভাইরাস প্রমাণ করেছে। সমগ্র বিশ্বের প্রভাব প্রতিপত্তি এক নিমিষেই তুচ্ছ হয়ে গেছে। শুধু একটাই চাওয়া সকলের – মানব জাতিকে বাঁঁচতে হবে। তবে পরিতাপের বিষয় হলো, মানুষের মাঝে এখনো নিজেদের কার্যকলাপের জন্য অনুতাপ নেই। এ মহামারীর কালেও থামেনি অসাধুতা, দুর্নীতি, অনিয়ম। এমনকি দাম্ভিকতার বহিঃপ্রকাশে রুদ্ধ করছে সত্যের কন্ঠ স্বর। ক্ষমতাবান মানুষ এক ধরনের খোদগারীতে বিশ্বাসী। তারা একটা মিথ্যা ভিতের উপর দাঁড়িয়ে আছে। মৃত্যু ভয় নেই বলে অসহায় মানুষের ত্রাণ লুটপাট করে তারা।
কোভিড-১৯ মানুষের জন্য একটা শাস্তি৷ এ শাস্তি কোনো জাতি ধর্ম দেশ ভেদে মানুষ পাচ্ছে তা কিন্তু নয়। সমগ্র মানব জাতি জীবন রক্ষা করতে ঘরে বন্দি। অচল পৃথিবীতে দিশেহারা সবাই। একটাই ভাবনা করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তির পথ কী? নিজের মনোজগতে যদি কৃতকর্মের দায়-দায়িত্ব চিন্তা করে; বিধাতার কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া গন্তব্য নাই। তবে মানুষের মাঝে সংশোধনের সে প্রচেষ্টা নেই বললে চলে৷ তাই আগামী দিনের পৃথিবীতে অন্যায় শোষণ কমে যাবে তা ক্ষীণ আশা।
অন্যদিকে চিকিৎসা বিজ্ঞান দিয়ে করোনাভাইরাসকে পরাজিত করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে থাকছে ভয় শঙ্কা। ঘর বন্দি হয়ে কর্মহীন জীবনে এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা৷ সরকারের সাহায্য ত্রাণ দিয়ে জীবনের সকল প্রয়োজন মেটানো অসম্ভব। জীবন বাঁচাতে হলে জীবিকার ব্যবস্থা আবশ্যক। দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে ব্যবসা বাণিজ্য অফিস আদালত সচল করা ছাড়া গন্তব্য নাই। দিনের পর দিন লকডাউন বাস্তবিকভাবে সমাধান নয়। দেশ ও জনগনের সমন্বিত প্রচেষ্টা নিয়ে সামনের দিকে আগাতে হবে। এককভাবে সরকারকে সব কিছুর দায়ভার চাপিয়ে দিলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা বিলম্বিত হবে।
করোনাভাইরাসের ভয়াল গ্রাস আমাদের দেশে ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। এর অন্যতম একটি কারণ হলো, মানুষের অসচেতনতা। এ ভাইরাসের আক্রমণের শুরুতে গত মার্চ মাসে সরকারি বেসরকারিভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রম ছিল প্রশংসনীয়৷ কিন্তু সময়ের প্রবাহে লকডাউনে আসে শিথিলত৷ সেই সাথে সচেতনতা কার্যক্রম ও স্তিমিত হচ্ছে৷ এ দেশের মানুষ নিয়ম মানতে অভ্যস্ত নয়৷ কিন্তু জীবিকার কারণে কাজে ফিরতে হলে নিয়ম মেনে চলতে হবে। তা না হলে করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।
উন্নত দেশসহ সারা বিশ্ব লকডাউন তুলে দেবার পক্ষে৷ তবে সবখানে নিয়ম মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে। ইউরোপ আমেরিকার জনগণ সরকারের নির্দেশ মেনে চলবে। কিন্তু বাংলাদেশে এ মহামারীতেও মানুষের মানসিকতায় পরিবর্তন আসেনি৷ ঘন বসতির এদেশে স্বাস্থ্য খাতের সীমাবদ্ধতা কম বেশি সকলের জানা৷ অন্যদিকে মানুষের জীবন যাত্রায় সুষম বণ্টন ব্যবস্থা নেই। যার কারণে মানুষ কোভিড- ১৯ থেকে ও অনেক বেশি শঙ্কিত অন্নের সংস্থান নিয়ে।
সুতরাং এমন পরিস্থিতি থেকে আগামীর বাংলাদেশকে দেখতে হবে নতুনভাবে। মানুষকে অনিয়ম দুর্নীতি বর্জন করতে হবে। আর সে সাথে কোভিড- ১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে সচেতন হয়ে। কারণ প্রাত্যহিক জীবনে এখন সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য সচেতনতার বিকল্প কিছু নাই।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)