কোভিডকালীন সময়ে খাদ্য সরবরাহ, নগদ অর্থ প্রদান, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ, বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা, বাল্যবিবাহ বন্ধ এবং নারী ও মেয়ে শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রমে ভূমিকা রাখায় ১০ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন বিভাগে ‘কোভিডকালীন মানবিকযোদ্ধা পদক ২০২০’ প্রদান করেছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।
রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস ২০২০ উদযাপন উপলক্ষে একটি ওয়েবিনার এর আয়োজন করে যেখানে এই ১০ জন সাহসী অগ্রপথিককে সম্মাননা জানানো হয়েছে।
এমজেএফ’র নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম এর পরিচালনায় ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও এমজেএফের গভর্নিং বোর্ডের সদস্য ড. মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী।
এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, “আজ আমরা সেইসব মানুষকে সম্মান জানাচ্ছি যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজেদের অর্থ ও শ্রম ঢেলে দিয়েছেন অসহায়, দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে। এরকম সাহসী শত সহ অগ্রপথিককে যারা কোন প্রাপ্তির আশা না করে অকাতরে মানবসেবায় নিয়োজিত ছিলেন ওয়েবিনারে তাদের প্রতিও সমান সম্মান ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।’’
এমজেএফ এর সময়োপযোগী এবং মহতী এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ড. গওহর রিজভী বলেন, সরকার বৈষম্য বিলোপ অ্যাক্ট পাশ করার জন্য বিবেচনায় রেখেছেন, পাশাপাশি সংখ্যালঘু ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জন্য পৃথক কমিশন গঠনের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও তিনি নারী অধিকার ও ক্ষমতায়নে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার নানামুখী কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন পদকপ্রাপ্ত দশজনকে অভিনন্দন জ্ঞাপনের পাশাপাশি আয়োজক প্রতিষ্ঠান মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, এই দশজনই বাংলাদেশ যারা মহামারির সময়েও সাহসিকতার সাথে করোনা মোকাবেলায় সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন। সর্বস্তরে মানবাধিকার নিশ্চিত করা না হলে সমাজ থেকে বৈষম্য নিরোধ করা সম্ভব নয়। তাই এ ধরনের সেবামূলক কাজের সময় সংখ্যালঘুদের স্বার্থে যেন বিঘ্ন না ঘটে সেদিকেও লক্ষ্য রাখার জন্য তিনি আহবান জানান।
সুইডিশ অ্যাম্বাসির ডেপুটি হেড অব মিশন এবং হেড অব ডেভেলপমেন্ট ক্রিস্টিন জোহানসন বলেন, গণতন্ত্রের চর্চা এবং ডিজিটালাইজেনই হতে পারে মানবাধিকার নিশ্চিতকরণের হাতিয়ার।
কানাডিয়ান হাই কমিশনের হেড অব এইড ফেদ্রা মুন মরিস বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের করণীয় হবে কোভিড ভ্যাকসিন সর্বসাধারণের কাছে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর সাথে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করা।
সুইজারল্যান্ড অ্যাম্বাসির ডেপুটি হেড অব কো-অপারেশন হেনজ পিয়ানি করিন বলেন, আমরা এমজেএফ এর উন্নয়ন সহযোগী হতে পেরে আনন্দিত, একইসাথে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন নারী-পুরুষ উভয়ের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও নাগরিক অধিকার রক্ষায় সুইজারল্যান্ড দূতাবাস অতীতের ন্যায় অদূর ভবিষ্যতেও পারস্পারিক সহযোগিতা বজায় রাখবে এবং মানবাধিকার নিশ্চিতে সবসময় এমজেএফ এর পাশে থাকবে।
ওয়েবিনারের সভাপতি ড. মিজানুর রহমান বলেন- কোভিডকালীন সময়ে শিক্ষণীয় বিষয় হলো, আমাদের স্বাস্থ্যখাত কতটা নাজুক এবং একইসাথে স্বাস্থ্যসেবা কতটা অপর্যাপ্ত! তিনি আরও বলেন টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে মানুষের মানবিক উন্নয়ন সাধন জরুরী। আর সেই মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত আজকের পুরস্কারপ্রাপ্ত ১০জন অগ্রপথিক। তাই এরকম অগ্রপথিকের সংখ্যা যত বাড়বে সে দেশ ততো উন্নতি সাধন করবে।
ওয়েবিনারের দ্বিতীয় পর্বে কোভিড প্রেক্ষাপটে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার- শীর্ষক বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিপিডির সম্মানীয় সিনিয়র ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। অর্থনীতিতে করোনাজনিত প্রভাব এবং স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের প্রস্তুতির আলোকে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় একটি সুষম পরিকল্পনা গৃহীত হবে এ মর্মে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ওয়েবিনারের মাধ্যমে যাদেরকে সম্মানিত করা হয়েছে, তারা হলেন: রিনা আক্তার, কাজী তাইফ সাদাত, তাহিয়াতুল জান্নাত, মোঃ সাইফুর রহমান শাকিল, সন্ধ্যা রানী রায়, মোঃ মুসা, জয়িতা পলি, তাসনুভা আনান, সতেজ চাকমা এবং ববিতা খাতুন ।
এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমজেএফের সহযোগী সংস্থা, সুশীল সমাজ, শিক্ষাবিদ এবং উন্নয়ন ও মানবাধিকার কর্মী ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করেন।