সরকারি চাকরিতে প্রায় সব ধরনের কোটা তুলে দেওয়ার পক্ষে কোটা সংস্কারে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। বিভিন্ন ধরনের কোটার পরিবর্তে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করেছেন তারা। তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিষয়ে যেহেতু আদালতের স্পষ্ট নির্দেশনা আছে, এ জন্য মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিষয়ে আদলতের পরামর্শ অনুসারে কাজ করতে চায় কমিটি।
সোমবার এমনটাই জানিয়েছেন ওই কমিটির নেতৃত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।সরকারি চাকরিতে ৬৫ শতাংশ কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে সাত সদস্যের এ কমিটি গঠন করে সরকার। প্রাথমিকভাবে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও পরবর্তীতে আরো ৯০ কার্যদিবস সময় পায় এ কমিটি।
দেশের সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা দীর্ঘদিনের। ১৯৭২ সালের ৫ নভেম্বর এক নির্বাহী আদেশে সরকারি, আধাসরকারি, প্রতিরক্ষা এবং জাতীয়করণ হওয়া প্রতিষ্ঠানে জেলা ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মহিলাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে এই কোটা পদ্ধতির সংস্কার, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করেছে সরকার। বর্তমানে প্রজাতন্ত্রের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনি ৩০ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, পশ্চাদপদ জেলাগুলোর জন্য কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ কোটা পদ্ধতি সংরক্ষিত আছে।
কোটার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির বাসভবন ভাঙচুরসহ অরাজকতার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশনার কারণে মুক্তিযোদ্ধা কোটা উঠিয়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। অার সম্ভব হলেও সেটা করা উচিত হবে না বলে আমারা মনে করি। সেইসঙ্গে প্রতিবন্ধী, পশ্চাদপদ জেলা ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোটাও কম বা বেশি রাখা উচিত।
একটি সামাজিক আন্দোলনে যেসব দাবি উত্থাপিত হয়, তার সবগুলোই যে বাস্তবায়ন হবে এমন না। তবে বেশিরভাগ যৌক্তিক দাবি কার্যকর হলে, তা আন্দোলনের সার্থকতা বলে ধরা যেতে পারে। সে বিচারের কোটা সংস্কার বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটির বক্তব্য আশাব্যঞ্জক। কোটা নিয়ে দেশের শিক্ষাঙ্গনসহ রাজনৈতিক মহলেও নানা ঘটনা ঘটে গেছে। এই পরিস্থিতি কোনোভাবেই আর কাম্য নয়।
কমিটির মতামতের পরে তা স্বাভাবিক গতিতে একটি প্রজ্ঞাপনের দিকে যাবে বলেই মনে হচ্ছে, সে সময় পর্যন্ত সকল মহল ধৈর্য ধরবেন বলে আমাদের আশা।