কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ৫ নেতা নিরাপদ বাংলাদেশের দাবিতে মানববন্ধন করতে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মারধরের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
রোববার বিকেল তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন সন্ত্রাসী বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই কর্মসূচি হওয়ার কথা ছিল। কর্মসূচি শুরুর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে টিএসসিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের মারধর করে বলে অভিযোগ করেছে মারধরের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীরা৷
মারধরের শিকার সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘নিরাপদ বাংলাদেশ চাই’ ব্যানারে বিকেল তিনটায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে তাদের একটি কর্মসূচি ছিল। কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগে তারা টিএসসিতে অপেক্ষা করছিলাম। দুপুরের খাবার খেতে গেলে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল শাখার ৮০-১০০ জন নেতাকর্মী আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়৷ জিয়াউর রহমান হলের সোহানুর রহমানের নেতৃত্বে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলায় অংশ নেওয়া অন্যদের নাম তারা জানেন না উল্লেখ করে ইয়ামিনের অভিযোগ, তাকেসহ তাদের সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহরাব ও জসীম উদ্দিন আকাশকে মারধর করে ছাত্রলীগের ওই নেতাকর্মীরা। মারধরের পর জসীমকে তুলে নিয়ে গেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা৷ জসীম কোথায় আছে, তারা জানে না। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে সোহরাব ও ইয়ামিন চিকিৎসা নিয়েছে৷
ভুক্তভোগীদের ভাষ্যে উঠে আসা হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া সোহানুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি।
সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক জানান, তাদের সংগঠনের পাঁচজন যুগ্ম আহ্বায়ককে মারধর করা হয়েছে, তিনজনের অবস্থা গুরুতর। সোহরাব হোসেন, বিন ইয়ামিন মোল্লা ও জসীম উদ্দিনসহ অন্য দুজন হলেন আহমেদ কবির ও মো. তারেক রহমান৷ মারধরের পর জসীম উদ্দিনকে তুলে নিয়ে গেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা৷
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘আমার কাছে তথ্য এসেছে যে ক্যাম্পাসে কিছু একটা ঘটানোর উদ্দেশ্য নিয়ে দুই ধরনের ছাত্র সংগঠনের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। তারা কোটা করে, না কী করে, সেটাতে আমরা ইন্টারেস্টেড না৷ তারা আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। শিক্ষার্থীদের কোনো অভিযোগ থাকলে সেটি আমাদের কাছে জানাতে হবে। কিছু হলে কর্তৃপক্ষকে না জানানো এবং তাদের হয়ে অন্য কারোর বিচার চাওয়া- এটা একটা পলিটিকস। তাদের হয়তো উদ্দেশ্য খারাপ৷ আমাদের না জানানোর মাধ্যমে ওদের সহযোগিতা করার রাস্তাটা ওরাই বন্ধ করে দেয়৷’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি। কিন্তু কারা সেখানে ছিল জানি না। যাচাই করে দেখতে হবে। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ একটা ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন করেছিল। আমরা সেই ইস্যুর পরিসমাপ্তি দেখেছি। তারপরও তারা কোন স্বার্থের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করতে চায়, সেটা আমরা জানি না। যেকোনো ধরনের ঘটনা ঘটলে ছাত্রলীগের দিকেই বা কেন অভিযোগের আঙুল তাক করে, সেটাও আমাদের জানা নেই৷ তারা যদি ছাত্র সংগঠন হত, তাহলে তাদের কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক মনে হত৷ কিন্তু তাদের কার্যক্রমই আমাদের কাছে অস্বাভাবিক ঠেকছে৷ তারা তাদের ফেসবুক গ্রুপেও সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়াচ্ছে’।