‘জামায়াত-শিবির ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র’ শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট ও দেশের উন্নয়ন ব্যাহত করতে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে দাবি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম সমন্বয় পরিষদ’।
বুধবার দুপুরে টিএসসির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত এই সমাবেশ থেকে ‘কোটা আন্দোলনকে’ বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যা দেন নৌমন্ত্রী শাহজাহান খানের ছেলে, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক আসিবুর রহমান খান।
তিনি বলেন: কোটা বিরোধী আন্দোলন একটা ষড়যন্ত্র। এটি একটি সামাজিক পরীক্ষা মাত্র। এই পরীক্ষার মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত সরকারের প্রতি মানুষের মনোভাব পরীক্ষা করতে চেয়েছিল। এরই অংশ হিসেবে তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে।
‘যখন এটা মানুষ বুঝতে পারলো তখন তারা এদের বর্জন করল। এখন তাদের সমাবেশে মানুষ কম হয়, যেখানে আগে তাদের সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ হতো। এখন তারা অল্প সংখ্যক মানুষ নিয়ে আন্দোলন করে।’
আসিব আরও বলেন: যারা কোটা বিরোধী আন্দোলন করছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো ক্ষোভ নেই। আমাদের পিতারা ১০ হাজার টাকা ভাতা কিংবা কোটার জন্য যুদ্ধে যায়নি। তারা এদেশের শান্তি আর স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে গিয়েছিলেন। কিন্তু এখন যারা কোটা বিরোধী আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। আদর্শহীন শিক্ষার কোনো দাম নেই। যাদের মধ্যে কোনো আদর্শ নেই তাদের শিক্ষা সমাজের কোনো উপকারে আসে না।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের আর কোটার দরকার নেই উল্লেখ করে নৌমন্ত্রীর ছেলে বলেন: কোটা সম্মানের জায়গা। মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ পরবর্তী পুনর্বাসনের জন্য এবং তাদের সম্মান দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু কোটার ব্যবস্থা করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী সেই কোটা বাতিল করেছেন। আমাদের কোনো কোটার দরকার নেই।
আমরা আমাদের পিতাদের সম্মান চাই।
সমাবেশ থেকে ৬ দফা দাবি পেশ করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম সমন্বয় পরিষদের নেতারা।
দাবিগুলো হলো:
১. কোটা সংস্কারের নামে হত্যার গুজব ছড়িয়ে উস্কানি দিয়ে দেশে অরাজকতা, নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২. জামাত-শিবির, যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতা বিরোধী ব্যক্তি ও দলের সন্তানদের সরকারী চাকরীতে নিয়োগ বন্ধ করতে হবে।
৩. জামায়াত-শিবির ও স্বাধীনতা বিরোধী যারা সরকারী চাকুরীতে বহাল থেকে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত করছে ও সরকার বিরোধী নানা চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। তাদের চিহ্নিত করে সরকারী চাকুরী হতে অব্যাহতি দিতে হবে।
৪. যুদ্ধাপরাধীদের সকল স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে হবে।
৫. ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে যারা পুড়িয়ে, পিটিয়ে, কুপিয়ে অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছে এবং আগুন সন্ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে যারা বেসরকারি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৬. মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ক্ষুণ্নকারী, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষকারীদের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের হলোকাস্ট বা জেনোসাইড ডিনায়েল ‘ল’ এর আদলে আইন প্রণয়ন করে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম পরিষদের সমন্বয়ক কাজী রুবেলের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- যুগ্ম-আহ্বায়ক আবু সাঈদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বুলবুল প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।