কোঁকড়া চুলের কারণেই দেশ ছাড়তে হয়েছিল এমান আল-দেব’র নামের মিশরীয় এক নারীকে। অনেকের মতই উচ্চাকাঙ্খি হয়ে উচ্চ শিক্ষা, ভালো চাকরি, ভালো ক্যারিয়ারের আশায় ২০১৬ সালে তিনি পাড়ি জমায়নি স্পেনে, তার দেশ ছাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ ছিল তার চুলের ধরণ!
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যিই এমন ঘটনা ঘটেছে মিশরে। তবে ২৬ বছর বয়সী এমান তার কোঁকড়া চুল নিয়ে বেশ প্রশংসিত ছিল স্পেনে।
সেই সময় যখন মিশরের বেশিরভাগ নারী সৌন্দর্যের বিষয়ে ইউরোপীয় ফ্যাশন অনুকরণ করে চলে, এমান ভাবল তার চলার জন্য চুল একটা অভিশাপ স্বরূপ। কিন্তু নিজ দেশ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বেশ দুঃখজনক ছিল তার পক্ষে।
এমান বলেন, মিশরীয় ব্যাংকে কর্মরত থাকা অবস্থায় প্রায় অনেক পরিচিত ও অপরিচিত মানুষ তাকে নিয়ে উপহাস করত। এবং চুল সোজা করে ফেলারও পরামর্শ দিত। তাই এই অবস্থা থেকে রক্ষা পেতেই স্পেনে পাড়ি জমায় এমান।
কিন্তু মিশরের বেশির ভাগ নারীর স্বাভাবিকভাবেই কোঁকড়া চুলের অধিকারী। অনেকে মনে করেন এটাই ওই দেশে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের লক্ষণ।
মিশরের ইঞ্জিনিয়ার নারী দোয়া গাউশ বলেন, আমি প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় চুল সোজা করে যাই। কিন্তু আমি এটাও জানি এভাবে আমি আমার চুলের ক্ষতি করছি।এরপর হঠাৎ করেই ২০১৬ সালের জুলাই মাসে সিদ্ধান্ত নেই চুলের যত্নে কি কি ব্যবহার করা যায়। চুল গরম করে সোজা ছাড়াই কেমন করে চুল ঝলমলে রাখা যায় এর ওপর। তারপর প্রাকৃতিকভাবে কিভাবে চুলের যত্ন নেয়া হয় এমন একটা ফেসবুক গ্রুপ খোলা হয় মিশরে। সঙ্গে সঙ্গে ৯৫ শতাংশ নারী এই গ্রুপে জয়েন করেন। এবং ধীরে ধীরে দেখতে পাই মানুষের কোঁকড়া চুলের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।
এ বিষয়ে ৩২ বছর বয়সী নোরান আমর বলেন, আমি গত মাসেই কোঁকড়া চুল নিয়ে একটা বিয়েতে যাই। বিয়ের অনুষ্ঠানে জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত ইতিবাচক। এখন আমার মনে হয় মিশরে কোঁকড়া চুল একটি সংস্কৃতির অংশ।
নোরান আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের মধ্য দিয়ে যে গ্রুপ খোলা হয় সেখানে চুলের যত্নের বিভিন্ন টিপসের জন্য মিশরের এই বিপ্লব হয়।
এমনকি বর্তমানে মিশরের কোঁকড়া চুলের জনপ্রিয়তার জন্য এ বছর ‘কার্লি হেয়ার স্টুডিও’ নামের একটা সেলুন তৈরি করা হয়েছে শহরে।সেখানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বেশিরভাগই চুল কোঁকড়া করতে সেলুনে ভিড় করছে।