চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

কে পেরোয়নি হাঁটুজল, কার পড়েনি চোখের জল

ঢাকার জলাবদ্ধতা দেখে কি মনে হচ্ছে যে আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে? আকাশ ভেঙ্গে এতো বৃষ্টি হচ্ছে যে চারদিক থই থই? এতো বৃষ্টি যে হাঁটু থেকে কোমর পানি ঢাকার সব জায়গায়!

আবহাওয়া অফিসের পরিসংখ্যান অবশ্য এমন কিছু বলছে না।

তারপরও কতো বৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণ আপনার? কয়েকশ মিলিমিটার? না হলেও সেঞ্চুরি হাঁকানো কোন সংখ্যা!

মোটেই তা নয়।

আবহাওয়া অফিস বলছে, ঢাকাকে ভাসিয়ে দেওয়া বৃষ্টির পরিমাণ বুধবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩০ মিলিমিটার। আর মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

রাজধানী ঢাকায় একদিনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টির রেকর্ড ২০০৪ সালের ১৩-১৪ সেপ্টেম্বর। ওইসময় ২৪ ঘণ্টায় ৩৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল যে কারণে ডুবে গিয়েছিল পুরো ঢাকা শহর।

ওইদিন অনেককে যে যেখানে ছিলেন সেখানেই থাকতে হয়। সাংবাদিকদের কেউ কেউ রাতের পালায় কাজ শেষ করে আর বাড়ি ফিরতে পারেননি।

তখন অবশ্য ফেসবুক ছিল না। তাই নগরবাসী যেমন তাদের কষ্টের কথা জানাতে পারেননি, তেমনি বন্ধু-স্বজনদের জানিয়ে ট্রল বা মজাও করতে পারেননি সেসময়।

এখন বাংলাদেশে যে প্রায় তিন কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেন তাদের বড় অংশই ঢাকার। এবারের বৃষ্টিতে তাই মানুষ ‘পাবলিকলি’ যেমন দুর্ভোগের কথা তুলে ধরছেন, তেমনি রস করতেও ছাড়ছেন না।

যেমন পুরনো একটি নির্বাচনী স্লোগান ‘আর ফেলো না চোখের জল, এবার যাবে জিয়ার দল’-এর প্যারোডি করে একজন নৌকার ছবি দিয়ে লিখেছেন: কেন ফেলছো চোখের জল, ক্ষমতায় আছে নৌকার দল’। তার নীচে একজনের কমেন্ট: ভরসা রাখুন নৌকায়।

রাজনৈতিক প্যারোডিতে রাজনৈতিক খোঁচা স্পষ্ট। তবে একইরকম প্যারোডিতে কাব্যপ্রতিভা দেখিয়ে আরেকজনের পোস্ট: ‘কে পেরোয়নি হাঁটুজল, কার পড়েনি চোখের জল’।

বুধবার এ জলে জলমগ্ন ছিল প্রায় পুরো ঢাকা। বাদ যায়নি ক্ষমতার কেন্দ্র বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবন কিংবা বাংলাদেশ সচিবালয়ও।

সংসদ ভবন থেকে বেরিয়ে আসা বিশাল জিপের পানি পেরিয়ে যাবার ছবি দিয়ে একজন লিখেছেন, সাংসদের ডিউটি-ফ্রি গাড়ির জলকেলি। আরেকজন আবার সচিবালয়ে ফায়ার ফাইটারদের পানি নিষ্কাশনের ছবি দিয়ে জানতে চেয়েছেন, ঢাকার আর কোথাও কি এমন নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে?

নিষ্কাশন যে আসলে প্রাকৃতিকভাবেই হতে হবে সেটা বুঝা গেছে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনের ছবি দেখে যেখানে দেখা যাচ্ছে কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন তিনি।

এরশাদ আমলে দেখা যেত বন্যার সময় এরশাদ কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে আছেন আর বিটিভিতে গান হচ্ছে—‘তোমাদের পাশে এসে বিপদের সাথী হতে আজকের চেষ্টা আমার’। এখন সেই গান নেই, তবে টিভি নিউজ দেখাচ্ছে, মেয়ররা পানি ঠেলে এগিয়ে যাচ্ছেন।

ফেসবুকে এরকম ছবি দিয়েও ফানি পোস্ট দিয়েছেন কেউ কেউ। যেমন একজন লিখেছেন, আগামীর সিনেমা: মেয়র কেন হাঁটুপানিতে!

রাজধানীর কালসীতে এরকম পানিতে দাঁড়িয়ে মেয়র আনিসুল হক অবশ্য সমস্যার আসল কারণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে খাল উদ্ধারের কোন বিকল্প নেই।

কৌতুকপ্রিয় বাঙালি অবশ্য এটা নিয়েও মজা করতে ছাড়ছেন না। যেমন একজনের ফেসবুক পোস্ট: খাল হলো কাল।