ঠিক আছে, ভুলে যান অরিত্রিকে! আজ না হলে কাল; কাল না হলে পরশু তো ভুলবেনই। মিডিয়ার উদ্দীপনা শেষ মানে মুছে যায় সবকিছু। মন থেকে, হৃদয় থেকে, দৈনন্দিন জীবন থেকে। মাস ছয়েক পর কোনো একদিন ড্রয়ারের নিচে বিছানোর জন্য পুরোনো পেপার প্রয়োজন হলে হয়ত চোখের সামনে আসবে অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার খবরটা।
ততদিনে বীজ বোনা হয়ে গেছে শত সহস্র দিকভ্রষ্ট কিশোর-কিশোরীর হতাশ জীবনের।
আজ বাতাস জুড়ে একটাই প্রশ্ন।
দায়ী কে?
প্রশ্নটাকে ঘুরিয়ে দিন। কে দায়ী নয়?
ভাল স্কুলে ভর্তির চাপে কোচিং থেকে কোচিং কিংবা লটারির চক্রে ঘোরা শিশুগুলোর শুকনো মুখ দেখেছেন?
একই চিন্তায় রক্তচাপ কিংবা ডায়াবেটিস বাড়িয়ে ফেলা অভিভাবকের কপালে চিন্তার ভাঁজও নিশ্চয়ই চোখে পড়েছে তাহলে।
এরা কি হাসে না? হাসে। ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হলে মন খুলে হাসে। মিষ্টি বিলায় পরম আয়েশে। যাক বাবা! চিন্তামুক্ত হওয়া তো গেল!
ভালো স্কুলের স্রোতে এবার শুদ্ধ হবে শৈশব, কৈশর। সেই সাথে মর্যাদার লড়াইয়ে জয়ের তৃপ্তি তো আছেই।
তাহলে সমস্যা কোথায়?
‘মূল্যবোধ’, ‘জীবনের স্বাদ’, ‘নৈতিকতা’ এর ভাগ্য লটারিতে খোলে না। এদের বড় স্কুলের গেট পেরিয়ে ঢোকা হয় না।
কারণ, তাদের আগে ভাগ্য খুলেছে ‘প্রতিযোগিতা’,’টিসির ভয়’ আর ‘অসুস্থতা’ এর। এদেরকে চোখ মেলে না দেখলেও খুঁজে পাবেন প্রতিটি স্কুলে।
তবে কি আমি মোবাইল নিয়ে পরীক্ষার হলে ঢোকা কিংবা ডাউনলোড করা বইয়ের সমর্থন করছি?
প্রশ্নটা আপনাকেও করি?
সুযোগ পেলে শপিং মলের লিফটের সিরিয়াল ভেঙেছেন কখনো? আপনার গাড়ী ওভারটেক করছে কখনো শৃঙ্খলা ভেঙে?
যদি ভেঙে থাকেন, তাহলে সে সময় আপনার সুশীল মন কোথায় ছিল?
নাকি আমি-আপনি ভালো স্কুলে না পড়ার কারণে এসব শেখা হয়ে ওঠেনি?
নকল ঠেকাতে শাসনের সাথে অনুশাসনের প্রয়োজন। যার বড় অভাব বোধ হচ্ছে আজ।
ছুটির ঘণ্টার ওপারে আপনার ছেলে বা মেয়ের জন্য অপেক্ষারত প্রাইভেট কারটা জানে না, আজ কতটুকু চাপ সহ্য করলো আপনার সন্তান।
আমি- আপনি চিনি নামী স্কুল, রেজাল্ট, জিপিএ ফাইভ আর রেজাল্টের পর দামী মিষ্টির দোকান।
শৈশব আর কৈশোরের পরতে পরতে জমছে হাহাকার।
সবাই হয়তো আত্মাহুতি দেয় না; তবে উচ্ছ্বলতা আর হাসির গণকবর তৈরি করছি আমরা, এই সমাজেই…
খুব সাবধান! এইসব গণহত্যার প্ররোচণায় দোষী হতে পারেন যে কেউ….
কারণ, আজকাল আমাদের শিশুদের বেলা যে যায়….
“তোমার সুরে সুরে
সুর মেলাতে”
ওপারে টিসির ভয় নেই রে অরিত্রি!
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)