সেই কবে তারা ভারতে এসেছিলো তা এখন গবেষণার বিষয়। তবে একশো বছরেরও বেশি আগে কালজয়ী ‘কাবুলিওয়ালা’ ছোটগল্পের হৃদয়গ্রাহী বর্ণনাতেও তাদের কথা বলে গেছেন রবি ঠাকুর মহাশয়।
রবীন্দ্রনাথে অনুপ্রাণিত দুই ফটোগ্রাফার মোসকা নাজিব ও নাজেস আফরোজ ফ্রেমে বন্দি করেছেন আজকের কাবুলিওয়ালাদের জীবন। ছবিতে ছবিতে তারা বলেছেন কলকাতার কাবুলিওয়ালাদের গল্প।
‘কাবুলিওয়ালা’র মর্মস্পর্শী গল্পে রবীন্দ্রনাথ একজন কাবুলিওয়ালার গল্পের আড়ালে বলে গেছেন এক অভিবাসী-সওদাগর গোষ্ঠীর কথা। শিল্পীর নিপুণ তুলিতে আঁকার মতোই গল্পের গাঁথুনিতে কাবুলিওয়ালা’র ঢোলা কুর্তা-পাজামা,গহনা পড়া রুক্ষ চেহারার প্রতিচ্ছবি এঁকেছিলেন নোবেল জয়ী। কালের পরিক্রমায় সেই প্রতিচ্ছবিতে পরিবর্তন আসলেও কাবুল থেকে কলকাতায় আসা মানুষগুলোর জন্য রবির দেয়া ‘কাবুলিওয়ালা’ নামটা রয়ে গেছে ঠিকঠাক।
পরিবার-পরিজন ফেলে সুদূর আফগানিস্তান থেকে জীবিকার তাগিদে কলকাতায় পাড়ি জমানো কাবুলিওয়ালাদের সংখ্যাটা একসময় স্বল্প হলেও বর্তমানে নেহাত অল্প নয়। সেই কবে আঁতর, কিসমিস আর মশলার ফেরি করতে আসা কাবুলের মানুষগুলো আজ কলকাতার হয়ে গেছেন। দেশ থেকে দূরে আসা এই মানুষগুলো পর-কে করেছেন পরিবার আর ঘুরে ঘুরে বেঁধেছেন ঘর।
এরকমই ঘর বাঁধা একজন দাদগুল খান। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে মধ্য কলকাতায় বাস করছেন খান। সাথে সঙ্গিনীকে হিসেবে পেয়েছিলেন ভারতীয় স্ত্রীকে। বাবার হাত ধরে আফগানিস্তান থেকে কলকাতায় পাড়ি জমিয়েছিলেন খান। আজ তার পরিবার বড় হয়েছে। খানের ক্রিকেট-পাগল ছেলেও ঘরে এনেছেন ভারতীয় বধূ। আধুনিক-বাস্তবতার ছোঁয়া লাগলেও স্মৃতিকাতরতা পিছু ছাড়েনি এইসব কাবুলিওয়ালাদের। যেমন পরম আবেগে সুলতান খান আগলে রেখেছেন তার মায়ের প্রায় পঞ্চাশ বছর আগেকার একটি পোশাক।
কয়েক পুরুষ ধরে কলকাতায় বাস করতে গিয়ে কাবুলিওয়ালাদের জীবন-জীবিকায় এসেছে পরিবর্তন। পৈত্রিক পেশার পাশাপাশি কেউ খুলে বসেছেন দর্জি দোকান। কলকাতার বুররাবাজার এলাকায় এমন দর্জি দোকানের দেখা মিলবে অহরহ। মোঘলাই খাবার দোকানগুলোতেও দেদারসে দেখা পাবেন আমুদে কাবুলিওয়ালাদের।
প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষের শহর কলকাতায় কাবুলিওয়ালা-পরিবার রয়েছে মাত্র ৫ হাজার। যাযাবর পূর্বপুরুষদের মতো না হলেও কলকাতায় জন্ম নেয়া কাবুলিওয়ালাদের জীবন কাটে রাষ্ট্রহীণ মানুষের মত। তবে পরিচয় যা-ই হোক শেষ ঠিকানার জন্য একটি কবরখানা দিতে কৃপণতা দেখায়নি কলকাতা।