করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হতে দেশের মানুষকে বাঁচাতে নিট পোশাক কারখানাগুলো ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)।
এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে ক্ষতিকর প্রভাব বাংলাদেশে পড়েছে, তা থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচানোই এ মুহূর্তে আমাদের সবার লক্ষ্য। মানুষ বাঁচলে শিল্প বাঁচবে এবং শিল্প বাঁচলে দেশ বাঁচবে৷ এই গার্মেন্টস শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে ঢাকায় থাকবে না গ্রামে চলে যাবে?বিকেএমই কি তাদের নির্দেশনায় এটা পরিস্কার করে বলেছে?তারা কি বলেছে কেউ বাড়ি যাবেন না কর্ম এলাকায় থাকুন৷ আমরা আপনাদের বেতন দেব৷ বাস্তবতা কী বলে?বেতন ছাড়াই তাদের ছুটি দিয়ে দেয়া হল৷ যানবাহন বন্ধ৷
কিন্তু গ্রামে যাওয়া ঠেকানো হলো না৷ অধিক ঝুঁকি, টাকা ও সময় ব্যয় করে তারা গ্রামে ফিরে যাচ্ছে৷ গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ কি নিশ্চিত ছিল তাদের কর্মী বাহিনীর কারও যে করোনা ছিল না অথবা গণপরিবহনে বা অন্য কোন বাহনে কিংবা স্থানে যাওয়ায় তারা সংক্রমিত হবে না? এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া কি ভয়ের নয়?বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু বিদেশফেরত নন, ঢাকাফেরতদের মাঝেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থাকতে পারে। তাহলে ঢাকা ফেরত এই গার্মেন্টস শ্রমিকরা গ্রামে গেলে কি সংক্রমণের জন্য তা চরম ঝুঁকিপূর্ন হয় না?
প্রধানমন্ত্রী রপ্তানিমুখী শিল্পকে করোনা আক্রান্ত অর্থনৈতিক মন্দা থেকে রক্ষার জন্য বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা এই শিল্পখাতের জন্য প্রদান করেছেন। সুতরাং শ্রমিকের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, দেশ ও দেশের মানুষের যাতে কোন ক্ষতি না হয় সরকারের সিদ্ধান্তের সাথে সাদৃশ্য রেখে বিকেএমইএ’র সিদ্ধান্ত নেয়াই কি সংগত ছিলোনা?কারখানা ছুটির সময় শ্রমিকদের যে যেখানে অবস্থান করছেন, তিনি যেন সেখানেই অবস্থান করেন, তা নিশ্চিত করা উচিত ছিলোনা?নিশ্চিত করা উচিত ছিলনা তাদের আর্থিক নিরাপত্তার৷ এটা কোনো ঈদ বা উৎসবের ছুটি নয়।
তাই যে যেখানে অবস্থান করবে তাকে সেখানেই থাকতে হবে এমনটাই সংগত ছিল৷ গার্মেন্টস গুলোর উচিত ছিল কঠোর নির্দেশনা দিয়ে শ্রমিকদের কর্মএলাকায় অবস্থানকে নিশ্চিত করা৷ ইতোমধ্যে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে বিদেশ ফেরৎরা৷ মার্চ মাসের প্রথম ২০ দিনে দেশে বিদেশফেরত লোকের সংখ্যা ২ লাখ ৫০ হাজার। তাঁদের মধ্যে মাত্র ২৫ হাজার প্রবাসী স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে আছেন। যাঁরা সবাই কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশগুলো থেকেই এসেছেন। তাহলে বাকি ২ লাখ ২৫ জন প্রবাসী কোথায় গেল? যারা নিশ্চয়ই দেশজুড়ে ছড়িয়ে গেছেন ও একে অন্যের সাথে অবাধে মেলামেশা করছেন। তাদের মধ্যে যে কারো করোনা ভাইরাস নেই তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে?বিদেশ ফেরৎ,ঢাকা ফেরৎ,এক এলাকা হতে আরেক এলাকায় গমণ ও সর্বশেষ গার্মেন্টস ফেরৎরাই কি করোনা সংক্রমনের মূলে নয়?
করোনা সংকটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা চরম দুরবস্থায় ভুগছেন। এমতাবস্থায় দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন, ব্যাংক লোন, বিদ্যুৎ ও সার্ভিস চার্জ বিলসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক সব বিল পরিশোধ নিয়ে বিপাকে পড়েছে তারা৷ তবে কি কর্মহীন বিপদ গ্রস্থতার ক্ষুব্ধতার অপেক্ষায় দেশ?১৫ মাইল রাস্তা হেঁটে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা সদরে এসে বিক্ষোভ করলো রেমা চা বাগানের শতাধিক চা-শ্রমিক। সংবাদ পত্রে লিখেছে,রেমা চা-বাগান বন্ধ, করোনার দিনে অনাহারে ১২০০ চা-শ্রমিক পরিবার। গত ৫ মার্চ থেকে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার রেমা চা-বাগান বন্ধ। আজ তিন সপ্তাহ ধরে এই বাগানের চা-শ্রমিকের কাজ নেই, মজুরি নেই, খাবার নেই, চিকিৎসা নেই। তারা অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। এখন করোনা যেন ‘মরার ওপর খড়ার ঘা’।
আর্থিক সংকটের কারণে তারা তাদের বাচ্চাদের পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়েছে। চিকিৎসাও নিতে পারছেনা।কিন্তু এব্যাপারে মালিক পক্ষের কোন ভূমিকা নেই ৷ কেউ করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য মাস্ক দিতে এলে তারা বলছেন,মাস্কের দরকার নেই। আমার পরিবারের জন্য দরকার খাবারের। মাড়ভাত খেয়ে দিন যাচ্ছে এসব শ্রমিকদের৷ গার্মেন্টস শ্রমিকদের কি সেরকম পরিণতিই অপেক্ষা করছে?কেন তাদের খাবার বাসস্থান,সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যসচেতনতাসহ নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা দেয়া হলোনা?কেন বলা হলোনা কর্মস্থল ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে অথবা অন্য কোথাও গেলে পরবর্তীতে এসে কাজে যোগ দিতে পারবেনা৷ কেন কর্মস্থলে অবস্থান পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হলোনা?
সেনাবাহিনী,পুলিশ, র্যাব কিছুই লাগতোনা৷ সরকারী, বেসরকারী অফিস,গার্মেন্টস, কোম্পানী যদি সচেতন ভূমিকা পালন করতো৷ ভূমিকা পালন করতো বিদেশী কোম্পানী গুলি৷ কারণ করোনা একটি বৈশ্বিক সমস্যা৷ বিদেশ ফেরৎদের দেশে আসতে না দিয়ে সেদেশেই হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করলে অথবা দেশে আসলেও সেদেশের দূতাবাসের মাধ্যমে দেশে ফেরা মাত্রই হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত বাধ্যতামূলক করলে বিশ্ব এমন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তোনা৷ বিদেশ ফেরৎরা যে সরকারী বেসরকারী অফিসে চাকরি করেছে প্রত্যেকেই তৎপর হলে বৈশ্বিক পরিস্থিতি কি অন্যরকম হতোনা?ঢাকার কর্মস্থল ছেড়ে যারা গ্রামে এসেছে তাদেরকে নিজ নিজ অফিস যদি নির্দেশনা দিতো কর্মস্থল ত্যাগ করা যাবেনা৷ ত্যাগ করলে পরবর্তীতে আর যোগদান করা যাবেনা তখন কে ত্যাগ করতো কর্মস্থল?
নিজনিজ কর্মস্থলের বাইরে কেউ যাবেন না এমন একটি দেশি বিদেশী নির্দেশনাতেই বাঁচতে পারতো বিশ্ব৷ এর ব্যত্যয় ঘটাতেই করোনা আজ বিশ্বময় ছড়িয়ে গেছে৷ করোনায় আক্রান্ত হল বৃটেনের রানী,প্রধানমন্ত্রী সহ বিশ্বের হাজার হাজার মানুষ৷ দেশে দেশে শুরু হল লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টির তোড়জোড়৷ কিন্তু এভাবে কতদিন?মানুষ কতদিন ঘরে বসে থাকতে পারবে?এই লকডাউন কি করোনা ভেকসিন আবিস্কারের অপেক্ষা?সারাবিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদেরতো ভেকসিন ইস্যুতে কোন ভূমিকা দৃশ্যমান হচ্ছেনা৷কবে ভেকসিন আবিস্কার হবে আর কবে তা বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়া হবে সেটাই কি মূল বিষয় নয়?এভাবে যত্রতত্র করোনা ইস্যুর বাজেট বরাদ্দ না করে একটি বৈশ্বিক ভেকসিন বাজেট জরুরী নয় কি?এসব বরাদ্দে কি কোন ফল হবে?আর বাংলাদেশে কি হচ্ছে চিকিৎসকদের পিপিই নেই আর পিপিই দেখা যাচ্ছে ব্যাংকে৷ আকিজ গ্রুপের উদ্যোগে করোনা হাসপাতাল নির্মাণেও বাধা দেয়া হল৷ করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সেই ব্যক্তির লাশ দাফনে বাধা দেওয়ার ঘটনাও ঘটল৷ জ্বর ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত ওই ব্যক্তিকে বাঁচানোর জন্য তাঁর স্ত্রী রাতভর আকুতি জানালেও কেউ এগিয়ে না গেলে লোকটি মৃত্যুবরন করে৷ উপজেলা প্রশাসন প্রথমে ওই ব্যক্তিকে একই এলাকায় দাফনের প্রস্তুতি নিলে এলাকাবাসী তাতে বাধা দেয়। পরে মৃত ব্যক্তির এলাকা হতে খানিকটা দূরে সরকারি মালিকানাধীন পীরের মাজারের পাশে দাফনের চেষ্টা করা হলে সেখানেও বাধা আসে৷এক্ষেত্রে লাশটির কবর দিলেও কি সেনা প্রহরা লাগবে?আসলে কোন পরিণতির দিকে ছুটছে বাংলাদেশ?
সংবাদপত্রে বেরিয়েছে আরও একটি ভয়াবহ তথ্য৷ করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর ঢাকা ছেড়েছেন প্রায় ১ কোটি মোবাইল গ্রাহক।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের তথ্যের ভিত্তিতে ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেন্টার কর্তৃক এ তথ্য প্রকাশিত হয়৷ তারা বলেন,এক কোটি গ্রাহকের মধ্যে বাংলালিংকের ১৬ লাখ, গ্রামীণফোনের ৪৬ লাখ, রবির ৩৫ লাখ এবং টেলিটকের ২ লাখ ৫০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর মাঝে কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নেই তা কি নিশ্চিত করে বলা যায়?আর থেকে থাকলে কি পরিস্থিতি ভয়াবহ সংক্রমনের দিকে যাবেনা?কেন তাদেরকে কর্ম এলাকায় থাকার কঠোর নির্দেশনা দেয়া হলোনা?সরকারী,বেসরকারী অফিস, দেশী বিদেশী সংস্থা ও কোম্পানী এ নির্দেশনা জারী ও তা কার্যকরের জন্য মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করলে দেশগুলো নিশ্চয়ই করোনা ঝুঁকি হতে বেঁচে যেতো৷ এর ব্যত্যয় ঘটাতেই আজকের এই ভয়াবহ সংক্রমন ঝুঁকি নয় কি?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)